Egra Blast: বিস্ফোরণে মাকে হারানো উমার আজ মাধ্যমিকের রেজাল্ট, থম মেরে রয়েছে মেয়েটা
Purba Medinipur: কৃষ্ণপদ বাগের পুরনো বাড়ি থেকে সামান্য দূরেই বাড়ি সুরেশ মাইতির। তাঁরই স্ত্রী অম্বিকা। তাঁদের তিন মেয়ে শিউলি, পল্লবী আর উমা। উমারই আজ রেজাল্ট।
পূর্ব মেদিনীপুর: আজ মাধ্যমিকের ফল (WB Madhyamik Result 2023) ঘোষণা হবে। এগরার খাদিকুলের উমা মাইতি এবার পরীক্ষা দিয়েছে। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার ফল ঘোষণা আজ। তবে এই মুহূর্তে সেসব মাথাতেই নেই উমার। তিনদিন আগেই যে গ্রামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে মাকে হারিয়েছে সে। সে শোক কোনওভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছে না মেয়েটা। পাথর হয়ে গিয়েছে যন্ত্রণায়। তিনদিন ধরে মুখে একটা শব্দ নেই। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছে শুধু। বাড়িতে দুই দিদি। তারা বোনকে যতটা সম্ভব আগলে রাখছে। তবে তারাও যে খুব বড় এমনটা একেবারেই নয়। মা হারা সংসারে কিছুতেই যেন প্রাণের স্পন্দন পাচ্ছে না মেয়েরা।
এগরা বিধানসভার ১ ব্লকের সাহাড়া গ্রামপঞ্চায়েতের খাদিকুল গ্রাম। সেখানেই অবৈধভাবে বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয় মঙ্গলবার। ৯ জনের মৃত্যু হয় বিস্ফোরণে। এই গ্রামের বহু মানুষ অবৈধভাবে তৈরি কারখানায় কাজ করতেন। তবে সকলেরই পেটের তাগিদে সেখানে কাজে যাওয়া। যেমন কাজ করতেন খাদিকুলের মাইতি পরিবারের কর্ত্রী অম্বিকা মাইতি।
কৃষ্ণপদ বাগের পুরনো বাড়ি থেকে সামান্য দূরেই বাড়ি সুরেশ মাইতির। তাঁরই স্ত্রী অম্বিকা। তাঁদের তিন মেয়ে শিউলি, পল্লবী আর উমা। কর্মসূত্রে সুরেশ মাইতি দিল্লিতে থাকতেন। সেখানে একটি হোটেলে কাজ করেছেন বহুদিন। তবে অম্বিকা চাইতেন মেয়েরা মায়ের যত্নের পাশাপাশি বাবার নজরদারিতে বড় হোক। সেইমতো সুরেশ দিল্লির কাজ ছেড়ে খাদিকুলে চলে আসেন। চাষের কাজ শুরু করেন। তবে দিন যত যায়, বোঝেন চাষের কাজ করে সংসার টানা, তিন মেয়েকে পড়াশোনা করানো সহজ হচ্ছে না।
এরপরই স্বামীর ভার কিছুটা লাঘব করতে স্ত্রী অম্বিকাও কাজ শুরু করেন। কৃষ্ণপদ ওরফে ভানু বাগের বাজির কারখানায় কাজে ঢোকেন। মাসে ৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ দৈনিক ২০০ টাকা করে। প্রায় ৪ বছর ধরে বাজি কারখানায় কাজ করছিলেন অম্বিকা। সুরেশ-অম্বিকার বড় মেয়ে শিউলির বয়স ২৪। ইসলামপুর হাসপাতালে নার্সিংয়ের কাজ করে। মেজ মেয়ে পল্লবী মাইতির বয়স ২২। বেঙ্গালুরুতে নার্সিং পড়ছে সে। বাড়ির ছোট ও সকলের আদরের উমা। ১৬ বছর বয়স। বৈতা মহেন্দ্রনাথ হাইস্কুল থেকে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে সে। আজ তারই ফলপ্রকাশের দিন।
শিউলি মাইতির কথায়, মা বারবারই এই বাজি কারখানার কাজ থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কারখানা মালিক ভানু বাগ বোঝাতেন, সবরকম সাবধানতা অবলম্বন করেই এই কারখানা চলছে। এরইমধ্যে গত ১৬ মে মঙ্গলবার বেলা ১২টা ১০ মিনিট নাগাদ ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে দগ্ধ হন অম্বিকা। পরে মারা যান তিনি। মায়ের এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না উমার। শুক্রবার জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষার ফল প্রকাশ। কিন্তু উমার যে সেসব বোধই কাজ করছে না। দুই দিদি মায়ের মতো করেই আগলে রাখছে বোনকে। তবে ওরাও বোঝে, মায়ের অভাব যে এভাবে মেটে না।