Recruitment Scam: ‘কে দেখবে আমার বউ-ছেলেকে?’, বড় প্রশ্ন ছেড়ে গেলেন চাকরিহারা সুশান্ত
Recruitment Scam: ২০২২ সালে সব বদলে যায়। জানতে পারেন, তিনি লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত। শুরু হয় এক নিরন্তর লড়াই—জীবন বাঁচানোর লড়াই। মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়। প্রতি চার মাস অন্তর সেখানে যেতে হয় তাঁকে। প্রতিবার খরচ ৭০ হাজার টাকা।

উত্তর দিনাজপুর: “চাকরি হারানোর দলে ক্যান্সার আক্রান্ত ইসলামপুরের শিক্ষক। ‘কে দেখবে আমার স্ত্রী-পুত্রকে?” জীবন-মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে ইসলামপুরে শিক্ষকের করুণ আর্তনাদ! ২৬ হাজার চাকরিহারাদের মধ্যে তিনিও একজন। চাকরি ফেরানোর দাবি তাঁর সহকর্মী-প্রতিবেশীদেরও।
ইসলামপুরের দুর্গানগরের বাসিন্দা সুশান্ত দত্ত, ছিলেন চোপড়ার মাঝিয়ালি হাইস্কুলে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বাতিল হয়েছে তাঁর চাকরিও। ২০২২ সালে ধরা পড়ে মারণ রোগ ব্লাড-ক্যান্সার। আবারও চাকরি হারিয়ে মাথায় বাজ ভেঙে পড়ল তাঁর। তিনি বলেন, “কে শুনবে আমার কান্না? মে মাসে মুম্বাই টাটা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার কথা, আমি কী করবো বুঝে উঠতে পারছি না।” এই কথাগুলো যখন সুশান্ত দত্তের কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন তার কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে ইসলামপুরের দুর্গানগরের বাতাস।
ভিটে বাড়ি ছোট হওয়ায়, তিনি দুর্গানগরে ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী ও তিন বছরের ছোট্ট পুত্রসন্তানকে নিয়ে থাকেন। ২০১৬ সালে এসএসসি-র মাধ্যমে চোপড়ার মাজিয়ালি হাই স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান তিনি। নিজের যোগ্যতা আর কঠোর পরিশ্রমে গড়ে তোলা এই জীবন ছিল তাঁর গর্ব। চোখে স্বপ্ন ছিল অনেক।
কিন্তু ২০২২ সালে সব বদলে যায়। জানতে পারেন, তিনি লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত। শুরু হয় এক নিরন্তর লড়াই—জীবন বাঁচানোর লড়াই। মুম্বাইয়ের টাটা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়। প্রতি চার মাস অন্তর সেখানে যেতে হয় তাঁকে। প্রতিবার খরচ ৭০ হাজার টাকা। দামী ওষুধ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা—এসব চালিয়ে যেতে চিকিৎসকরা। চাকরির বেতন থেকে কিছু পরিমাণ দিয়ে সংসার সামলে বাকি টাকায় চিকিৎসা হত। কিন্তু এখন এই খরচের টাকা কোথায় পাব? কীভাবে চলবে সংসার? কী হবে স্ত্রী-সন্তানের? এখন এই দুশ্চিন্তাই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে সুশান্তকে।
আগামী ১৯ মে-এ তাঁর মুম্বাই যাওয়ার কথা। ‘কোথায় পাবো এত টাকা?’—এই প্রশ্ন তাঁর চোখের জলে মিশে যায়। ক্যান্সারে স্বপ্ন ভাঙল, সুশান্তের জীবনে আরেকটি আঘাত আসে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে। তার দাবি, “আমার নাম তো সিবিআই-এর তালিকাতেও ছিল না। অনেক কষ্টে পড়াশোনা করে নিজের যোগ্যতায় চাকরিটা পেয়েছিলাম, আমি কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই।” বলতে বলতে তার গলা ভারী হয়ে ওঠে।
এখন সংসারের একমাত্র উপার্জনের পথ বন্ধ। স্ত্রী একজন সাধারণ গৃহবধূ, তিন বছরের ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা। সুশান্তর সহকর্মীরা পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তারা আশ্বাস দিতে চাইছেন, কিন্তু কী-ই বা আশ্বাস দেবেন। কিন্তু তার প্রশ্নের মুখে তারাও নির্বাক। তারাও চাইছেন সোমা দাসের মত তাকেও যেন বহাল রাখা হয় চাকরিতে। এবিষয়ে সরকার থেকে আদালত সব স্তরের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আকুতি জানাচ্ছেন তাঁরাও।
ছোট্ট সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি ভাবেন, ভবিষ্যৎ কী হবে? তাঁর স্ত্রী নীরবে কাঁদেন, কিন্তু সমাধানের পথ কোথায়? কে দেবে উত্তর?





