নদীর ধারে বাস, তাই ভাবনা বারো মাস: ইয়াস-আতঙ্কে দড়ি দিয়ে বাড়ি বেঁধে পরিত্রাণের চেষ্টা!

সংশয় রয়েছে, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের কাছে তাদের সেই প্রয়াস বিফলে যাবে। তবুও আশ্রয়টুকু আগলে রাখার চেষ্টায় কুলতলির দেউলবাড়ী গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দারা।

নদীর ধারে বাস, তাই ভাবনা বারো মাস: ইয়াস-আতঙ্কে দড়ি দিয়ে বাড়ি বেঁধে পরিত্রাণের চেষ্টা!
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 25, 2021 | 3:30 PM

সুন্দরবন: কথায় আছে, নদীর ধারে বাস, তাই ভাবনা বারো মাস। আর এই বারোমাস দুশ্চিন্তার মধ্যে থেকে বাঁচাই রোজনামচা সুন্দরবনবাসীর। আমফানের এক বছর ঘুরতেই আবারও এক ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার আশঙ্কায় দড়ি দিয়ে ঘর-বাড়ি বাঁধা শুরু করেছেন তাঁরা। সিঁদুরে মেঘ দেখে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জন্য চিন্তায় গ্যাং ধারের মানুষজন!

ভরা কোটালের সময় নদী-জল এমনিতেই বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত করে দেয়। তার ওপর ঘূর্ণিঝড়ের চোখরাঙানি। তার মানে তো আস্ত বাড়িটাই এবার গ্রাস করে নেওয়ার উপক্রম হল! ঝড়ের দাপটে বাসস্থানটুকু না ভেঙে যায়, সেই চিন্তায় কুলতলির মানুষজনকে দেখা গেল নিজেরাই দড়ি কিনে বাড়ি বাঁধতে শুরু করেছেন।

এর আগে সুন্দরবনের বুকে ধেয়ে আসা একের পর এক ঘূর্ণিঝড় প্রতিবার হতদরিদ্র মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নিয়েছে। গতবছর একইভাবে আমফানও তাই করেছে। নদীর পাড়া থাকা এই মানুষজনের মাথার ছাদ ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল ঝোড়ো হাওয়া। তারপর করোনা আবহে কর্মহীন অবস্থায় অতি কষ্টেসৃষ্টে কোনরকমে বাঁশ, খড়, টিন, কাঠ, অ্যাসবেস্টস দিয়ে আবার নিজেদের ঠিকানা গড়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেই মাথার ছাদস আবার উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আহার-নিদ্রা, ঘুম উড়েছে গ্রামবাসীদের।

ইয়াস নিয়ে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস শোনার পরেই দুশ্চিন্তায় সুন্দরবনের ব্লকগুলির মধ্যে অন্যতম কুলতলির বাসিন্দারা। দুর্গম এই এলাকায় নদীর ধারে বাস করেন হাজার হাজার মানুষ। প্রতিবছরই নদী ভাঙতে ভাঙতে এগিয়ে আসছে গ্রামের দিকেয যেন গিলে খেতে চায় তাদের। কিন্তু যাবেন কোথায় তাঁরা? বাধ্য হয়ে সেখানেই বাস করছেন। বিগত আমফান ঘূর্ণিঝড়ে মাতলা নদীর জল আড়াই কিলোমিটার নদী বাঁধ এক্কেবারে ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়েছিল। কুলতলি ব্লকের দেউলবাড়ী -দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়িঘর ভেঙ্গে ভেসে গিয়েছিল। কয়েক হাজার পরিবারের সেই অবস্থার মধ্যেই আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছেন। গড়েছেন ঘর। কিন্তু বছর ঘুরতেই আবারও এক দুঃস্বপ্নের মতো হাজির হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস।

আরও পড়ুন: অন্য দিকে বাঁক, বদলাল ইয়াসের গতি সংক্রান্ত পূর্বাভাস! নির্ধারিত সময়ের আগেই কোথায় ল্যান্ডফলের আশঙ্কা? 

তাই মাতলা নদীর পাড়ের বাসিন্দারা নিরুপায় হয়েই বাজার থেকে বেশি দামে দড়ি কিনে এনে বাড়িঘর ভালো করে খুঁটি দিয়ে বেঁধে রাখার চেষ্টা শুরু করছেন। যাতে ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে মাথার ছাদটুকু রক্ষা পায়। সংশয় রয়েছে, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের কাছে তাদের সেই প্রয়াস বিফলে যাবে। তবুও আশ্রয়টুকু আগলে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন কুলতলির দেউলবাড়ী গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দারা।