Domestic Violence: ‘তোর রং কালো, গায়ে নোংরা! বলেই পুকুরে ডুবিয়ে দিয়েছিল’, ‘ময়লা’ বউকে মেরে হাসপাতালে পাঠাল বর

Kakdwip: পাত্রীর গায়ের রং কালো। তাই শ্বশুরবাড়ির দাবি ছিল দু' লক্ষ টাকা পণ। বিয়েতে সমস্ত দাবি পূরণ করেছিল পাত্রীর বাড়ি।

Domestic Violence: 'তোর রং কালো, গায়ে নোংরা! বলেই পুকুরে ডুবিয়ে দিয়েছিল', 'ময়লা' বউকে মেরে হাসপাতালে পাঠাল বর
বধূ নির্যাতনের অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 13, 2021 | 10:11 PM

দক্ষিণ ২৪ পরগনা: শক্তির প্রকাশ যে দেবীর মধ্যে তার গাত্রবর্ণ কাজলের মতো কালো। দেবী কালীকা রূপে পূজিত হয় সে। সমাজ বিশ্বাস করে, তার মধ্যেই লুকিয়ে সমস্ত অশুভকে নিধনের শক্তি। ভক্তিভরে তাই কালো মেয়ের আরাধনা চলে বছর বছর। অথচ সেই কালো গায়ের রং যদি রক্তমাংসের ঘরের মেয়েটার হয় তা হলে গেল গেল রব ওঠে চারদিকে। ঘরের বউয়ের উপর অনায়াসে চলে অত্যাচার। মাত্র চার মাস হয়েছে বিয়ের। এরই মধ্যে এক বধূকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার হারউড পয়েন্ট কোস্টাল থানা এলাকার ঘটনা।

পাত্রীর গায়ের রং কালো। তাই শ্বশুরবাড়ির দাবি ছিল দু’ লক্ষ টাকা পণ। বিয়েতে সমস্ত দাবি পূরণ করেছিল পাত্রীর বাড়ি। তারপরেও পণের দাবিতে সদ্য বিবাহিতা এক বধূকে নৃশংসভাবে অত্যাচারের অভিযোগ উঠল। কাঠগড়ায় বধূর স্বামী-‌সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। অভিযোগ, নির্যাতিতাকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়।

খবর পেয়ে শুক্রবার রাতেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার হারউড পয়েন্ট কোস্টাল থানার পুলিশ স্থানীয় সামন্তেরচক গ্রাম থেকে ওই বধূকে উদ্ধার করে। পরে তাঁকে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতেই গ্রেফতার করা ওই বধূর স্বামী প্রত্যুষ গুছাইতকে।

শনিবার ধৃতকে কাকদ্বীপ মহাকুমা আদালতে পেশ করলে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই বধূকে এমন অত্যাচার করা হতো, তাঁর সারা শরীরজুড়ে শুধুই ক্ষতচিহ্ন। হাসপাতালে গিয়েও ভয়ে কাঁপছেন তিনি। ডাক্তাররা বলছেন, খুব ভয় পেয়ে গিয়েছেন ওই বধূ। টানা চিকিৎসার প্রয়োজন।

গত শ্রাবণেই প্রত্যুষের সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ে হয়। একই পঞ্চায়েত এলাকায় বাড়ি বর-বউয়ের। প্রত্যুষদের পারিবারিক ব্যবসা। টোটো ও ইঞ্জিন ভ্যান সারাইয়ের গ্যারাজ রয়েছে। অভিযোগ, বিয়ের সময় প্রচুর যৌতূক নিয়েছিলেন প্রত্যুষের মা-বাবা। ২ লক্ষ টাকা তো শুধুই নগদই। আনুসঙ্গিক আরও কত টাকার জিনিস যে মেয়ের বিয়ের জন্য বাবাকে খরচ করতে হয়েছে তার হিসাব নেই।

স্থানীয়রা জানান, মেয়ের গায়ের রং চাপা। তাই তাঁকে পাত্রস্থ করতে সমস্যা হবে একটা আতঙ্ক পরিবারের ছিল। তাই দেদার খরচ করেও মেয়েকে গোত্রান্তরিত করেন ‘কন্যাদায়গ্রস্ত’ পিতা। তবু কালো মেয়ের জীবনে আলো এল না!

অভিযোগ, শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পর থেকেই ওই বধূকে নানা ভাবে নির্যাতন করা হতো। এমনকী বাপের বাড়ি থেকে আরও টাকা আনার জন্য চাপ দিতেন স্বামী ও তাঁর পরিবার। অভিযোগ, শুক্রবার সকাল থেকে অত্যাচার চরমে ওঠে। বধূকে একটি ঘরের মধ্যে আটকে রেখে রড, শাবল দিয়ে মারধর করা হয়। গরম রড দিয়ে হাতে ও পিঠে ছ্যাঁকাও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে স্বামী শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টাও করেন বলে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে।

বাপের বাড়িতে খবর যায়। সোজা পুলিশের কাছে ছোটেন মেয়ের বাড়ির লোকজন। পুলিশও তৎপরতার সঙ্গে মেয়েটির শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে পৌঁছয়। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। স্বামীকেও গ্রেফতার করে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে।

নির্যাতিতা বধূর কথায়, “প্রতিদিন আমাকে মারধর করত। লাঠি দিয়ে মারত। টাকা চাইত সবসময়। কয়েকদিন ধরে বলছিল ৩০ হাজার টাকা লাগবে নিয়ে এসো। শুক্রবার আমি স্নান সেরে বেরোনোর পর আমাকে বলছে আবারও স্নান করতে যেতে। আমি কেন দু’বার স্নান করতে যাব? যাইনি বলে মারতে শুরু করল। আমাকে একটা ঘরের মধ্যে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে দেয় এরপর। মুখ বেঁধে দিয়েছিল। দরজা বন্ধ করে রেখেছিল। টাকা দিতে পারিনি বলে এরকম অত্যাচার করত। প্রতিদিন অত্যাচার করত। আমাকে বলে তোর গায়ে গন্ধ। বলেই পুকুরে ডুবিয়ে দিয়েছিল। ওদের শাস্তি চাই আমি।”

মেয়ের বাবার অভিযোগ, “গত শ্রাবণের ২৭ তারিখ মেয়ের বিয়ে দিই। আমার মেয়েটার গায়ের রং ময়লা, একটু রোগা! কিন্তু ওরাই পছন্দ করে মেয়েকে নিয়ে যায়। তিন ভাইয়ের তিনটে ব্যবসা আছে, ওই গাড়ির গ্যারাজ আছে, তার জন্য ২ লক্ষ টাকা নগদ নিয়েছে। সঙ্গে বলেছিল, যা পারেন দেবেন। আমার ছোট মেয়ে, আমিও রাজি হই। ২ লক্ষ টাকা দিই। জিনিসপত্রও কিছু কম দিইনি। এরপরও মাঝে মধ্যেই বলে ‘বাবার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে আয়, এই ২০ হাজার টাকা নিয়ে আয়। আমার মেশিন কিনতে হবে, কলকাতায় টাকা দিলে যন্ত্র কিনতে পারব’।”

নির্যাতিতার বাবা বলেন, “ছেলেটার মা কিছু খাইয়ে মেয়েটাকে পুরো কেমন করে দিয়েছে। চার মাস ধরে এমন অত্যাচার চলছে, আমাদের কিছু জানায়ওনি। আমরা আনতে গেলে বলছে জিজ্ঞাসা করে নিতে হবে। মেয়েকে যেতে দেব না। মেয়েটাকে শুক্রবার সকাল থেকে শাবল দিয়ে মেরেছে। কাঁধে রড দিয়ে মেরেছে। মুখে মেরেছে। হাতে লোহার ছ্যাঁকা মেরেছে। এত মেরেছে মেয়েটা আমার হাসপাতালে ভর্তি।” যদিও এ বিষয়ে অভিযুক্তের তরফে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন: Audio Clip Controversy: শাসকদলের দুই নেতার উত্তপ্ত ফোনালাপ! ‘ভাইরাল করলেন’ তৃণমূলেরই বিধায়ক