কাঁথিতে কুকথা: ‘পিসির যোগ্য ভাইপো’, কটাক্ষ লকেটের, ‘এটাই বাংলার সংস্কৃতি’ বিঁধলেন শুভেন্দু
অভিষেকের বেলাগাম মন্তব্যে তীব্র সমালোচনা বিজেপির
পূর্ব মেদিনীপুর: প্রায় ছ’বছর পর শনিবার কাঁথিতে সভা করতে যান তৃণমূল সাংসদ তথা দলের যুব সংগঠনের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে নিশানা করে কতটা সুর চড়াবেন সেদিকে নজর ছিল রাজনৈতিক মহলের। কিন্তু শনিবারের বারবেলা শুধু আক্রমণই নয়, অভিষেকের বল্গাহীন মন্তব্যে শুরু হল নয়া বিতর্ক। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে খোঁচা দিতে ছাড়লেন না শুভেন্দু। লিখলেন, ‘কাঁথির জনসভা থেকে বাংলা সংস্কৃতি।’ বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও টুইটে লেখেন, “মুখের ভাষাতেই প্রমাণ পিসির যোগ্য উত্তরসূরী।” কিন্তু কোন প্রেক্ষিতে অভিষেককে নিশানা করলেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব?
শনিবারে সভার শুরু থেকেই তাঁর নিশানা ঠিক করে নিয়েছিলেন আক্রমণাত্বক অভিষেক। শরীরী ভাষাতেই তা বোঝা গিয়েছিল। কখনও ‘মিরজাফর অধিকারী’ তো কখনও তোলাবাজির অভিযোগে তৃণমূলত্যাগী বিজেপি নেতা শুভেন্দুকে আক্রমণ শানাচ্ছিলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। আর সেই আক্রমণের ঝাঁঝ বজায় রাখতে গিয়ে কূরুচিকর মন্তব্য করে বসেন অভিষেক। বলেন, “তোর বাপকে গিয়ে বল বাড়ির পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি, যা করবার কর। আয়…আয়।” তৃণমূল সাংসদের এহেন মন্তব্যে তীব্র সমালোচনা শুরু করেছে বিজেপি। এই সভার ভিডিয়ো ক্লিপ তুলে ধরে অভিষেককে বিঁধে শুভেন্দু লিখলেন ‘কাঁথির জনসভা থেকে বাংলা সংস্কৃতি।’
কাঁথির জনসভা থেকে বাংলা সংস্কৃতি … !!! pic.twitter.com/ETVrIxGCf3
— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) February 6, 2021
আরও এক কদম এগিয়ে লকেট তাঁর নিজস্ব টুইটার হ্যান্ডেল থেকে লিখলেন, “মুখের ভাষাতেই প্রমাণ পিসির যোগ্য উত্তরসূরী।”
মুখের ভাষাতেই প্রমাণ পিসির যোগ্য উওরসূরী।বাংলার মানুষ এই সংস্কৃতিকে মানবে না, ছুঁড়ে ফেলে দেবে। pic.twitter.com/70pbJMOyZD
— Locket Chatterjee (@me_locket) February 6, 2021
আগে একাধিক জনসভা থেকে শুভেন্দুকে আক্রমণ করতে গিয়ে তুই তোকারি করেছেন অভিষেক। যার প্রেক্ষিতে শুভেন্দুর প্রতিক্রিয়া ছিল, অভিষেকের মুখের ভাষাতেই বোঝা যায় তিনি কোন দলের নেতা। একাধিক সভা থেকে শুভেন্দু এও দাবি করেন, ‘ভাইপো’র জন্যই একাধিক নেতা তৃণমূল ছেড়েছেন। অভিষেকের নেতৃত্বাধীন তৃণমূলের যুব সংগঠনের ব্যক্তিগত রুচিবোধ নিয়েও কটাক্ষ করতে শোনা গিয়েছে শুভেন্দুকে। ছন্দ মিলিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, “লাল চুল, কানে দুল, তার নাম যুবা তৃণমূল।” এই প্রেক্ষিতে ভোটমুখী বাংলায় অভিষেকের বেলাগাম মন্তব্য আদতে শুভেন্দু তথা বিজেপিকেই আক্রমণের সুযোগ করে দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু কাকে উদ্দেশ্য করে এই বেফাঁস আক্রমণ করেছেন অভিষেক?
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর তৃণমূল ছাড়ার আসল কারণ জানালেন অভিষেক
২০১৫ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের একটি সভায় বক্তৃতা করার সময়ে সদ্য সাংসদ অভিষেককে মঞ্চে উঠে শারীরিক আক্রমণ করেন এক ব্যক্তি। অভিষেকের কাঁথির সভার আগে সেই ঘটনার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছিলেন শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বিজেপি নেতা কণিষ্ক পাণ্ডা। তার প্রেক্ষিতেই অভিষেকের এই মন্তব্য। অভিষেকের কথায়, “ফেসবুকে ভয় দেখাচ্ছে আমি যাতে ভয়ে এখানে না আসি। ভাবছে ধমকে, তর্ক করে ঠেকাবে।” নাম না করে ওই স্থানীয় নেতাকে ‘চার আনার নকুল দানা’ বলেও কটাক্ষ করেন তৃণমূল সাংসদ।
এদিকে অধিকারী গড়ে দাঁড়িয়ে অভিষেকের আক্রমণাত্মক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শুভেন্দুর বাবা শিশিরবাবু ও ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া কী হবে সেটাও প্রশ্ন। কারণ, কাঁথির সাংসদ শিশিরবাবু এখনও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান পদে আসীন। দিব্য়েন্দুও তমলুকের তৃণমূল সাংসদ। এদিন শুভেন্দুকে আক্রমণ করতে গিয়ে নাম না করে অবশ্য শিশিরবাবু প্রসঙ্গেও শ্লেষাত্মক মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে অভিষেককে। শিশির-শুভেন্দুর বাড়ি শান্তিকুঞ্জ থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে সভামঞ্চ থেকে তাঁর কটাক্ষ ছিল, “বাড়িতে বয়স্ক লোক রয়েছে, মাইকের আওয়াজ যাচ্ছে। আমি চাইনা কোনওরকম কোনও অঘটন ঘটুক তাঁদের।”