Weather Update: পুজোয় বৃষ্টির আশঙ্কা, উত্‍সবে কাঁটা ছড়াতে বঙ্গোপসাগরে চিনা বর্ষাসুর?

Weather Update: সপ্তমী-অষ্টমী না অষ্টমী-নবমী না পুজোর একেবারে শেষবেলায় বৃষ্টি বাড়বে, সেই অঙ্কেরই উত্তর খুঁজছেন আবহবিদরা।

Weather Update: পুজোয় বৃষ্টির আশঙ্কা, উত্‍সবে কাঁটা ছড়াতে বঙ্গোপসাগরে চিনা বর্ষাসুর?
পুজোয় কি তবে বৃষ্টি?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 26, 2022 | 11:14 PM

 কমলেশ চৌধুরী: বঙ্গবাসীর জন্য বিরাট দুঃসংবাদ! পুজোয় বিপদ হয়ে দেখা দিতে চলেছে বর্ষাসুর। স্থানীয় নয়, সুদূর চিন সাগর থেকে বর্ষাসুর আমদানি হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে! এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, তাতে পুজোয় কোনও না কোনও দিন বৃষ্টি হচ্ছেই। উৎসবের মূল চার দিন নির্জলা থাকবে, এই আশা প্রায় থাকছেই না।

বর্ষাসুরের নাম ‘নোরু’। রবিবার সুপার টাইফুনের চেহারা নিয়ে ‘নোরু’ আছড়ে পড়েছে ফিলিপিন্সে। সে দেশে টাইফুনকে ‘কার্ডিং’ নামেও ডাকা হচ্ছে। সুপার টাইফুনের দাপটে দ্বীপরাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ এলাকা বিধ্বস্ত। ফিলিপিন্স পেরিয়ে সোমবার সেই টাইফুন সরে এসেছে দক্ষিণ চিন সাগরে। এ বার তার লক্ষ্য ভিয়েতনাম উপকূল। তার পর লাওস, থাইল্যান্ড, মায়ানমার। সাধারণত, সাগর থেকে স্থলভাগে ঢুকে পড়লে দফায় দফায় শক্তি হারায় টাইফুন বা ঘূর্ণিঝড়। এক্ষেত্রেও তাই হবে। টাইফুন থেকে একেবারে মামুলি নিম্নচাপ।

প্রশ্ন উঠতে পারে, তা হলে পুজোর বাংলা নিয়ে দুশ্চিন্তা কেন? দুশ্চিন্তা আছে কারণ, মায়ানমার পেরোলেই আবার জলভাগ মানে বঙ্গোপসাগর পেয়ে যাবে ‘নোরু’র অবশিষ্টাংশ। পেয়ে যাবে ফের শক্তি বাড়ানোর সুযোগ। ঘূর্ণাবর্ত হোক বা ঘূর্ণিঝড়, তার জ্বালানি আসে সাগরের জল থেকেই। ফলে ‘নোরু’র যা যাত্রাপথ, তাতে উদ্বেগ থাকছেই। আপাতত ইঙ্গিত, সেপ্টেম্বরের একেবারে শেষে, ‘নোরু’র অবশিষ্টাংশ থেকে বঙ্গোপসাগরে নতুন ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হতে পারে। সেটাই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আবহবিদদের।

ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হবে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। পুজোর চার দিনের মধ্যে বৃষ্টি হবে, এটাও মোটামুটি নিশ্চিত। তবে অনেকগুলি বিষয় এখনও স্পষ্ট নয়। এক, ঘূর্ণাবর্ত নিম্নচাপে পরিণত হবে কি না। নিম্নচাপ হলে কতটা শক্তিশালী হবে। ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপের অভিমুখ কী হবে। সরাসরি বাংলার ঘাড়ে উঠে আসবে কি না। নিম্নচাপ অক্ষরেখার অবস্থান কী হবে। এই সব কিছুর উপরই নির্ভর করবে বৃষ্টির পরিমাণ। শুধু পরিমাণ নিয়ে অনিশ্চয়তা নয়। কখন বৃষ্টি বাড়বে, ভারী বৃষ্টি হবে কি না, তাও স্পষ্ট হতে সময় লাগবে। অর্থাৎ সপ্তমী-অষ্টমী না অষ্টমী-নবমী না পুজোর একেবারে শেষবেলায় বৃষ্টি বাড়বে, সেই অঙ্কেরই উত্তর খুঁজছেন আবহবিদরা।

অঙ্ক বেশ জটিল। কারণ, শুধুমাত্র ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হলেই মুষলধারায় বৃষ্টি হবে, এমনটা বলে দেওয়া যায় না। আবার ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ বাংলার উপকূলে চলে এলেই বলে দেওয়া যায় না, পুজো ভাসছেই। একাধিক শর্ত রয়েছে। আগের দুই নিম্নচাপই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল অন্ধ্রপ্রদেশ-ওড়িশা উপকূলে। তৃতীয় সপ্তাহে নিম্নচাপ হাজির হয় বাংলা-ওড়িশা উপকূলে। অথচ, প্রথম নিম্নচাপে দুর্যোগের মুখে পড়ে যায় বাংলা। কাছে থাকলেও, দ্বিতীয় নিম্নচাপের উপস্থিতি সে ভাবে টেরই পায়নি বেশিরভাগ জেলার মানুষ। আবার প্রথম নিম্নচাপ যখন মধ্যপ্রদেশে, সেদিনই সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি পায় দক্ষিণবঙ্গ। ২৮০ দিন পর আলিপুরের ভারী বৃষ্টি প্রাপ্তি সেদিনই। এর কারণ, নিম্নচাপ অক্ষরেখার অবস্থান। নিম্নচাপের চেয়েও অক্ষরেখার অবস্থান ছিল বেশি অনুকূল।

সবচেয়ে বড় কথা, বজ্রগর্ভ মেঘ কোথায় সৃষ্টি হবে। ২৮ অগস্ট দুপুরে মাত্র এক ঘণ্টায় ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল ঠনঠনিয়ায়। বৃষ্টি হয়েছিল মূলত মধ্য কলকাতাতেই। ডুবে যায় ধর্মতলার একাধিক রাস্তাও। অথচ, দক্ষিণে সে ভাবে বৃষ্টিই হয়নি। আর এ রকম বৃষ্টি হলেই পুজো মাটি হয়ে যাবে কোনও না কোনও মণ্ডপে। তবে আলিপুরের সুরুচি সঙ্ঘ না উত্তরের বাগবাজার, কোথায় মুষলধারায় বৃষ্টি নামবে, তা কয়েক ঘণ্টা আগে ছাড়া বলা সম্ভবই নয়। ফলে আশঙ্কা মাথায় নিয়েই পুজোর প্রস্তুতি চালাতে হবে উদ্যোক্তাদের।

আশঙ্কা গোড়া থেকেই ছিল। কারণ, এ বার সাততাড়াতাড়ি পুজোর নির্ঘণ্ট। একেবারে বর্ষার মধ্যে। বাংলায় ক্যালেন্ডার শরতের হলেও, আবহবিদদের ক্যালেন্ডারে কলকাতায় বর্ষা থাকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। বহু সময় সেই তারিখ পেরিয়েও থেকে যায় মৌসুমি বাতাস। সবটাই নির্ভর করে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ সৃষ্টির উপর। অক্টোবর আবার ঘূর্ণিঝড় প্রবণ মাস। যেমন, ২০১৩ সালে ঘূর্ণিঝড় পিলিনের ঠেলায় নবমী-দশমীতে ভেসেছিল কলকাতা, দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা। এ বার অবশ্য পুজোয় ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা দেখছে না আবহাওয়া দফতর। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘দক্ষিণ চিন সাগরের টাইফুনের অবশিষ্টাংশ থেকে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হতে পারে। আমরা সে দিকে নজর রাখছি। সপ্তমী থেকে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি বাড়তে পারে। মূলত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কিছুটা বেশি বৃষ্টি হবে কলকাতা-সহ উপকূলের জেলাগুলিতে। নবমী থেকে বৃষ্টি বাড়বে উত্তরবঙ্গে।’

উত্‍সবের মধ্যে ঘূর্ণাবর্ত, তাও আবার চিন সাগরের ‘চক্রান্ত’! উদ্বেগ তাই থাকছেই।