Sheikh Hasina: ‘একসময় দিল্লির গোপন বাসিন্দা ছিলাম…’, ভারত সফরের আগে শেখ হাসিনার চোখে জল
Bangladesh PM Sheikh Hasina: একসময় দিল্লির অভিজাত পান্ডারা রোডের গোপনে বাস করতেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত সফরের আগে সজল চোখে স্মৃতিচারণ করলেন তিনি।
নয়া দিল্লি: একসময় দিল্লির অভিজাত পান্ডারা রোডের গোপনে বাস করতেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্তানদের নিয়ে অন্য নামে, অন্য পরিচয়ে থাকতেন হাসিনা। সোমবারই চার দিনের সফরে ভারতে আসছেন তিনি। তার আগে সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তাঁর বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পরবর্তী সময়ের ঘটনাবলীর স্মৃতিচারণ করলেন বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় ভারত কীভাবে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিল, প্রায় পাঁচ দশক পর সেই কথা জানালেন আবেগঘন হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছিল তৎকালীন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা। সেই সময় স্বামীর সঙ্গে জার্মানিতে থাকতেন হাসিনা। সেখান থেকেই বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মৃত্যুর খবর পেয়েছিলেন তিনি। অশ্রু সজল চোখে হাসিনা জানিয়েছেন, ভারতই প্রথম তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। হাসিনা বলেছেন, “মিসেস ইন্দিরা গান্ধী অবিলম্বে আমাদের জানিয়েছিলেন, তিনি আমাদের নিরাপত্তা এবং আশ্রয় দিতে চান। যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটো এবং মিসেস গান্ধীই প্রথনম আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আমরা দিল্লিতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম দিল্লি থেকে আমরা দেশে ফিরতে পারব। জানতে পারব পরিবারের কতজন এখনও বেঁচে আছেন।”
হাসিনা দিল্লিতে ফিরে আসার পর প্রথমে তাঁদের যাবতীয় নিরাপত্তা-সহ একটি বাড়িতে রাখা হয়েছিল। কারণ তাঁদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত ছিল ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। হাসিনার দাবি, “ষড়যন্ত্রকারীদের লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কেউ যেন আর ক্ষমতায় না আসে। আমার ছোট ভাইয়ের বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর, তারা তাকেও রেহাই দেয়নি। দিল্লিতে ফিরে এসে আমি প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধীর সাথে দেখা করেছিলাম। তিনি আমাদের জন্য সব ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। আমার স্বামীর জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। প্রথম ২-৩ বছর মানিয়ে নেওয়া খুব কঠিন ছিল। নিজের নাম, নিজের পরিচয় ব্যবহার করতে পারতাম না। নিরাপত্তার কারণে আমাদের অনুমতি ছিল না। আমার ছেলের বয়স ছিল মাত্র ৪ বছর। আমার মেয়ে, সে আরও ছোট। দুজনেই কান্নাকাটি করত। আমার বাবার কাছে যেতে চাইত। আমার ছোট ভাইয়ের কছাই তাদের সবচেয়ে বেশি মনে ছিল।”
পরের ছয় বছর, অর্থাৎ ১৯৮১ সাল পর্যন্ত হাসিনা ভিন্ন নাম-পরিচয়ে দিল্লিতেই বসবাস করেন। তবে, বাংলাদেশে অনেকেই চাইছিলেন যে, তিনিই আওয়ামী লিগ দলের নেতৃত্ব দিন। হাসিনা বলেছেন, “আমি অবশ্যই দেশে ফিরতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এত বড় দলের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কখনও ভাবিনি। তবে সেই সময় বাংলাদেশে আওয়ামি লিগের একটি বড় সম্মেলন হয়। আমার অনুপস্থিতিতেই, আমাকে দলের সভাপতি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।” এরপরই বাংলাদেশে ফিরে গিয়েছিলেন হাসিনা। তবে তারপরও বহুবার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। বারবারই মৃত্যুকে এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। তবে, সেদিন নয়া দিল্লি তাঁকে আশ্রয় না দিলে হয়তো এই জায়গায় পৌঁছতে পারতেন না।