Britain riot: পদ্মাপারের পর দাঙ্গা এবার টেমসের তীরে! বিশেষ নির্দেশ ভারতীয়দের
Britain riot: পদ্মাপারের মতোই ভয়ঙ্কর হিংসার ছবি এখন টেমসের তীরেও। ইংল্যান্ডের সাউথপোর্টে এক মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভ্রানতি ছড়িয়েছে অতিডানপন্থীরা। আর তারপরই রথারহ্যাম, ট্যামওয়ার্থ, সান্ডারল্যান্ড, মিডলসবরো, স্টোক-অন-ট্রেন্ট - একের পর এক শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে বেনজির হিংসা। এদিন
লন্ডন ও নয়া দিল্লি: শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন ২৪ ঘণ্টা হয়ে গিয়েছে। তারপরও আগুন নিভছে না বাংলাদেশে। তবে পদ্মাপারের মতোই ভয়ঙ্কর হিংসার ছবি এখন দেখা যাচ্ছে টেমসের তীরেও। গত সপ্তাহে ব্রিটেনের সাউথপোর্টে ছুরিকাঘাতে তিন নাবালিকার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে এক হিংস্র উদ্বাস্তু বিরোধী এবং মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা। অনলাইনে বিভ্রান্তিমূলক পোস্টের মাধ্যমে একের পর এক শহরে ছড়িয়ে পড়ছে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা। তাতে ইন্ধন দিচ্ছেন অতিডানপন্থী বিভিন্ন নেতারা। ব্রিটেনের বিভিন্ন অংশে এই দাঙ্গার ছড়িয়ে ড়ার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৬ অগস্ট), ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করল ভারত সরকার।
লন্ডনের ভারতীয় হাই কমিশন থেকে বলা হয়েছে, “লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশন (দূতাবাস) পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ভারত থেকে আসা দর্শনার্থীদের ব্রিটেনে ভ্রমণের সময় সতর্ক থাকার এবং যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
গত সপ্তাহে, ইংল্যান্ডের সাউথপোর্টে এক ব্যক্তি বেশ কয়েকজন শিশুকে এলোমেলোভাবে ছুরিকাঘাত করেছিল। যার ফলে তিন নাবালিকার মৃত্যু হয়। সাউথপোর্টে এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বিরল। এই মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা দেশে শোক নেমেছিল। আর এই ঘটনাকে কাজে লাগিয়েই প্রায় গোটা ব্রিটেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে অতি-ডানপন্থীরা। সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে তারা মুসলিম-বিরোধী এবং উদ্বাস্তু-বিরোধী ক্ষোভে পরিণত করেছে। হামলাকারী একজন মুসলিম উদ্বাস্তু বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তি ছড়ায় তারা। যদিও, পুলিশ স্পষ্ট জানিয়েছিল, সন্দেহভাজন ব্যক্তির জন্ম হয়েছিল ব্রিটেনেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর পোস্টগুলি থেকেই ব্রিটেনে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি সপ্তাহে এই দাঙ্গার আগুন আঁচ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত শুক্র, শনি এবং রবিবার, ব্রিটেন জুড়ে প্রায় সকল শহরে জমায়েত করে উদ্বাস্তু বিরোধী, মুসলিম বিরোধী বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে তাদের। উত্তর ইংল্যান্ডের রথারহ্যাম শহরে এবং মধ্য ইংল্যান্ডের মিডল্যান্ডসের ট্যামওয়ার্থে দুটি হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এই হোটেলগুলিতে মূলত উদ্বাস্তুরাই থাকতেন। দুটি হোটেলেই দাঙ্গাকারীরা পাথর ছোড়ে, জানালা ভেঙে দেয় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই সময় ভিতরে ছিলেন আতঙ্কিত অতিথি এবং কর্মীরা। পুলিশকে লক্ষ্য করেও তারা পাথর ও কাঠের তক্তা ছুড়ে মেরেছে বলে অভিযোগ। দুটি ঘটনাতেই পুলিশকর্মী-সহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
সান্ডারল্যান্ড, মিডলসবরো, স্টোক-অন-ট্রেন্ট এবং আরও কয়েকটি শহরেও হিংসার ঘটনা ঘটেছে। দাঙ্গাবাজরা সরকারি ভবনে ভাঙচুর করে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়, পুলিশকে আক্রমণ করে, পুলিশের গাড়ি ভাংচুর করে। এখনও পর্যন্ত এই দাঙ্গার বেশিরভাগটাই সীমিত আছে মধ্য ও উত্তর ইংল্যান্ডে।
ফলে শুরুতেই সমস্যায় পড়েছেন নয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। সোমবার তিনি দাঙ্গার বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা করেছেন। তিনি বলেছেন, “এটা প্রতিবাদ নয়, এটা সংগঠিত হিংসা। গুণ্ডামি। ব্রিটেনের রাস্তায় বা অনলাইনে, কোথাও এই হিংসার জায়গা নেই। এই দেশের মানুষের নিরাপদে থাকার অধিকার আছে। মুসলিম সম্প্রদায়কে নিশানা করা হচ্ছে, মসজিদে হামলা হচ্ছে, অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরও হামলা হচ্ছে, নাৎসি স্যালুট দেখা যাচ্ছে রাস্তায়, পুলিশের উপর হামলা হচ্ছে, বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য আসছে, অমানবিক হিংসা চলছে। তাই, আমার বলতে কোনও দ্বিধা নেই, এটা অতি-ডানপন্থীদের গুণ্ডামি।”
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ব্রিটেনের মসজিদগুলিকে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। ব্রিটেনের ন্যাশনাল পুলিশ চিফস কাউন্সিল জানিয়েছে, দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে সব মিলিয়ে ৩৭০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে, এখনও অনেক সন্দেহভাজনকে সনাক্ত করা যায়নি। ফেস রেকগনিশন এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের সনাক্ত করা হচ্ছে। তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।