ভ্যাকসিনে স্বত্বের লড়াই, আমেরিকার সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ জার্মানি

জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা অবশ্য সাফ জানিয়েছেন, "উদ্ভাবনের উৎস হিসেবে মেধাস্বত্ব থাকা উচিত।"

ভ্যাকসিনে স্বত্বের লড়াই, আমেরিকার সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ জার্মানি
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 11, 2021 | 7:11 AM

ওয়াশিংটন: ভ্যাকসিনের (COVID Vaccine) অসম বণ্টন হচ্ছে। গরিব দেশগুলি করোনা প্রতিষেধক পাচ্ছে না। বারবার এই অভিযোগ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। খোদ হু প্রধান টেডরস আধানম জানুয়ারি মাসে ‘আমি প্রথম’ নীতি ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার বাস্তবে প্রয়োগ দেখতে মেলেনি। আধানম তখন আক্ষেপের সুরে জানিয়েছিলেন, ভ্যাকসিন নির্মাতারা ধনী দেশে অনুমোদন পেতে চাইছে। গরিব দেশে ভ্যাকসিন পৌঁছচ্ছে না, ফলস্বরূপ চরম নৈতিক ব্যর্থতার দিকে এগোচ্ছে দেশ। কিন্তু এই যুক্তি একেবারে ভেঙে দিয়ে ভ্যাকসিন থেকে স্বত্ব তুলে নেওয়ার কথা জানায় আমেরিকা। গত বছর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ডব্লিউটিও-র কাছে ঠিক এই আবেদনই করেছিল ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু আমেরিকা সম্মতি দেওয়ার পরই বেঁকে বসেছে জার্মানি। টিকার স্বত্ব প্রত্যাহারে রাজি নয় আঙ্গেলা মার্কেলের দেশ। যা নিয়ে কার্যত ভ্যাকসিন যুদ্ধে অবতীর্ণ গোটা বিশ্ব। আর বাইডেন আসার পর প্রথম বারের জন্য মতানৈক্যের ফাঁদে দুই উন্নত দেশ, জার্মানি-আমেরিকা।

জার্মানির বক্তব্য কী?

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় মোট ১৬৪ জন সদস্য। তার মধ্যে স্রেফ জার্মানি যদি স্রোতের উল্টো পথে হাঁটতে চায়, তাহলে অনুমোদন আটকাবে না। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের জার্মানি একটা বড় শরিক। ওষুধ নির্মাণ ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও জার্মানির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই জার্মানির সিদ্ধান্তকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সে ক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েও জল্পনা থেকেই যাচ্ছে। জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা অবশ্য সাফ জানিয়েছেন, “উদ্ভাবনের উৎস হিসেবে মেধাস্বত্ব থাকা উচিত।” একই মত ফাইজ়ারের সিইও অ্যালবার্ট বোরলারও।

কী বলছে বহির্বিশ্ব?

ফ্রান্স:  তবে এই ক্ষেত্রে আমেরিকার ‘হ্যাঁ’-তেই ‘হ্যাঁ’ মিলিয়েছে ফ্রান্স। বৃহস্পতিবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের স্বত্ব তুলে নেওয়ার পক্ষেই তিনি। তবে এ ভাবে গরিব দেশগুলির ভ্যাকসিন সমস্যা মিটবে এমনটা মানতে নারাজ তিনি। কারণ আফ্রিকার একাধিক দেশ ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রযুক্তিই নেই। তাই স্বত্ব মিললেই ভ্যাকসিন সেই দেশগুলিতে উৎপাদন হবে না। তাদের প্রযুক্তিযুক্ত দেশগুলির অপেক্ষাতেই থাকতে হবে।

 রাশিয়া-ইতালি: আমেরিকার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ইতালি। ইতালির বিদেশমন্ত্রী লুইগি ডি মায়ো ফেসবুকে জানিয়েছেন, আমেরিকার এই পদক্ষেপ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। আমেরিকার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ‘সদা বিরোধী’ রাশিয়াও। পাশাপাশি জাতিসঙ্ঘের সেক্রেটারি-জেনারেল অ্যান্টনিও গুত্তারেসও।

 ইউরোপীয় ইউনিয়ন: যদিও এখনও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের মত জানায়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন আলোচনার মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে চায় তারা। একটি বিষয় এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার নীতিগত বিরোধিতা থাকলেও জার্মানির সঙ্গে সাম্প্রতিককালে মতভেদ হয়নি। যেহেতু ওষুধ শিল্পে প্রাচুর্য রয়েছে জার্মানির, তাই সে দিক থেকে মতভেদ বড় আকার নিতে পারে বলেও অনুমান বিশেষজ্ঞদের একাংশের। তবে ফাইজ়ার ছাড়া অন্যান্য ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থাগুলি এখনও মুখে কুলুপ এঁটে। সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের ধারণা যেহেতু বায়োএনটেক জার্মানির সংস্থা, তাই এহেন সিদ্ধান্ত তাদের।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশেও হানা করোনার অতি সংক্রামক ভারতীয় স্ট্রেনের