Pakistan: অনাহারে মরছে পাকিস্তান, Hunger Index নিয়ে এবার উঠছে প্রশ্ন
Pakistan food crisis: 'গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০২২'-এ ভারতের অনেক আগে ছিল পাকিস্তান। অথচ, এখন সেই পাকিস্তানেরই না খেতে পেয়ে মরার দশা।
নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদ: ২০২২ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত হয়েছিল ‘গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০২২’ বা ‘বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ২০২২’। বিস্ময়করভাবে সেই ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান ছিল ১০৭তম। ভারতের আগে স্থান ছিল প্রায় সব পড়শি দেশেরই। শ্রীলঙ্কা ছিল ৬৪তম স্থানে, নেপাল ৮১তম, বাংলাদেশ ৮৪তম এবং পাকিস্তান ছিল ৯৯তম স্থানে। একমাত্র আফগানিস্তান ছিল ভারতের পিছনে, ১০৯তম স্থানে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এই সূচক ভারতের প্রকৃত ছবির প্রতিফলন নয়। ২০২২ সাল জুড়ে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের মোকাবিলা করেছে শ্রীলঙ্কা। দেখা দিয়েছিল চরম খাদ্য সঙ্কট। আইএমএফ-এর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে অবস্থা সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কলম্বো। একই সময়ে চরম খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে পাকিস্তান। সেই দেশে এখন খাদ্যশস্যের জন্য রীতিমতো দাঙ্গা বাধার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ ক্ষুধা সূচকে এগিয়ে থাকলেও, খাদ্যের অভাবে ভুগছে তারা। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি সত্যিই বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকের মানদণ্ড ঠিক নয়? এই সূচকে কোনও দেশের খাদ্য সুরক্ষার প্রকৃত ছবিটা ধরা পড়ে না?
পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে চরম খাদ্য সঙ্কটের মুখে পড়েছে পাকিস্তান। ২০ কেজি আটার বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ টাকায়। আটা সংগ্রহের জন্য হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। আটার লাইনে দাঁড়িয়ে পদপিষ্ট হওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার ভাড়ারও দ্রুত গতিতে কমছে। ২০২২ সালের ভয়ঙ্কর বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু, তার আগেও অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। ভোজ্যতেল প্রতি লিটার ৬০০ টাকা, ঘি-এর প্রতি লিটার ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
কীভাবে তৈরি করা হয় গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স?
কোনও দেশের ক্ষুধা নিবৃত্তির ছবিটা ধরার জন্য চারটি বিষয়ের উপর নজর রাখা হয়। এই চারটি বিষয় হল –
১. অপুষ্টি – মোট জনসংখ্যার কত অংশ পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে না
২. শিশুদের বৃদ্ধির অভাব – ৫ বছরের কম বয়সী কত শতাংশ শিশুর উচ্চতা বয়স অনুযায়ী কম
৩. শিশুদের কম ওজন – ৫ বছরের কম বয়সী কত শতাংশ শিশুর ওজন উচ্চতা অনুযায়ী কম
৪. শিশু মৃত্যুর হার – কত শতাংশ শিশুর ৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই মৃত্যু হয়
গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স অস্বীকার করেছে ভারত
কেন্দ্রীয় মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই সূচককে খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। এই সূচকে ভারতের ক্রম, এই সূচক নির্ধারণের পদ্ধতি, সূচক নির্ধারণের জন্য সংগৃহীত তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। দাবি করা হয়েছিল, ভারতের অপুষ্টি বিষয়ক তথ্য নির্ধারণ করা হয়েছ সামান্য সংখ্য়ক নমুনার ভিত্তিতে এবং জনমত সমীক্ষার ভিত্তিতে। দ্বিতীয়ত, চারটি সূচকের মধ্যে তিনটিই শিশু স্বাস্থ্য বিষয়ক। এতে পুরো জনগণের ছবিটা ধরা পড়ে না। সম্প্রতি, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, “গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সকে ফেস ভ্যালুতে নেওয়া উচিত নয়। কারণ এটি সঠিক নয় এবং দেশের ক্ষুধার প্রকৃত ছবি এতে উঠে আসেনি।” তিনি আরও জানিয়েছিলেন, শিশুদের বৃদ্ধির অভাব এবং শিশুদের কম ওজনের বিষয় দুটি স্য়ানিটাইজেশন, জেনেটিক্স, পরিবেশ, খাদ্যের উপযুক্ত ব্যবহারের মতো অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল।
তাহলে কি ভারতই সঠিক?
বর্তমানে পাকিস্তানের যা হাল, তা দেখে এখন আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ভারত সরকারের বক্তব্যই সঠিক? এই আলোচনা আরও উসকে দিয়েছে গত সপ্তাহে বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রকাশ করা ‘গ্লোবাল ইকোনমিক আউটলুক রিপোর্ট’। এই রিপোর্টে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস, গত আর্থিক বছরের তুলনায় কমিয়ে অর্ধেক করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্কের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে পাকিস্তানের জিডিপি বৃদ্ধির হার কমে ৩.২ শতাংশে নেমে আসবে। ভারতের জিডিপিও কমবে বলেই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তব, পাকিস্তানের মতো অবস্থা হবে না। বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্টে বলা হয়েছে, “ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ২০২১-২২ সালের ৮.৭ শতাংশ থেকে কমে, ২০২২-২৩ সালে ৬.৯ শতাংশ হবে।”