তৃতীয় ঢেউয়ে মৃত্যু থেকে ‘রেহাই’ পাবে শিশুরা, কতটা স্বস্তির আশ্বাস দিচ্ছেন গবেষকরা?

COVID-19 and Death Rate Among Children: ওবেসিটি বা হৃৎযন্ত্র কিংবা স্নায়ু রোগ থাকলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া, এমনকি মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকলেও সামগ্রিকভাবে শিশুদের সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া বা মৃত্যুর সম্ভাবনা খুবই কম।

তৃতীয় ঢেউয়ে মৃত্যু থেকে 'রেহাই' পাবে শিশুরা, কতটা স্বস্তির আশ্বাস দিচ্ছেন গবেষকরা?
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 18, 2021 | 3:05 PM

লন্ডন: আগামী মাসের শেষ ভাগের মধ্যেই করোনার তৃতীয় ঢেউ (Third Wave of COVID-19) আছড়ে পড়বে, এমনই সতর্কতা জারি করেছেন চিকিৎসক-গবেষকরা। দ্বিতীয় ঢেউয়ের ক্ষয়ক্ষতি সামাল দেওয়ার আগেই শোনা গিয়েছিল, তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদেরই করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেই অনুযায়ী ইতিমধ্যেই রাজ্যগুলি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। জেলার হাসপাতালগুলিতে তৈরি হচ্ছে শিশুদের চিকিৎসার জন্য় বিশেষ বিভাগ। অনুমোদন মিললে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই জ়াইডাস ক্যাডিলার ভ্যাকসিন ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের দেওয়া যাবে। কোভ্যাক্সিনেরও ট্রায়াল চলছে।

প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে যে মৃত্যুমিছিল দেখা গিয়েছে, তৃতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যাবে কিনা, এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক থেকে চিকিৎসকরা। তবে গবেষকরা জানাচ্ছেন, করোনা আক্রান্ত হলেও সংক্রমণে শিশুমৃত্যুর হার নামমাত্র। ইংল্যান্ডে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ১৮ বছরের কমবয়সীদের মৃত্যুহার বা আইসিইউতে ভর্তি করার হার খুবই কম।

মেডআরক্সিভ(medRxiv) নামক একটি জার্নালে প্রকাশিত একাধিক গবেষণায় জানা গিয়েছে, সমস্ত হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি অবধি ১৮ বছরের কম বয়সী এমন মাত্র ২৫ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেকেরই আবার শারীরিক জটিল সমস্যা ছিল, যার কারণে শ্বাসকষ্ট বা খেতে না পারার মতো সমস্যা দেখা দিয়েছিল।

তবে ওই গবেষণায় স্বল্প উপসর্গযুক্ত রোগী ও লং কোভিড (Long COVID) অর্থাৎ যারা করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর মাসের পর মাস নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন, তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়নি। গবেষণার প্রাথমিক রিপোর্টে শিশুদের মৃত্যুহার একদমই কম হলেও গবেষকদের মতে, মৃত্যুহার কম বা গুরুতর অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম হলেও শিশুদের দেহে করোনা সংক্রমণকে হেলাফেলা করা উচিত নয়। যতক্ষণ না টিকাকরণ হচ্ছে, ততক্ষণ সমস্ত ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

এই বিষয়ে চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, “বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পরিবারের বাকি সদস্যের পাশাপাশি শিশুরাও করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন। তবে সেক্ষেত্রে উপসর্গ থাকছে না বা সামান্য জ্বর বা সর্দিকাশির মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে দ্রুত রোগ চিহ্নিতকরণের উপরই জোর দিতে হবে। কারণ দেরিতে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়লে তা গুরুতর আকার ধারণ করার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এছাড়াও করোনাভাইরাসের মধ্যে যদি অভিযোজন ঘটে  নতুন কোনও রূপ তৈরি হয়, যা শিশুদের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে, তবে সেটিও  চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ বহু শিশুরই টিকাকরণ হয়নি।  তবে আপাতভাবে শিশুদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ও তার জেরে মৃত্যুর হার সীমিতই রয়েছে।”

কী বলা হয়েছে গবেষণার ফলে?

ওবেসিটি বা হৃৎযন্ত্র কিংবা স্নায়ু রোগ থাকলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া, এমনকি মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকলেও সামগ্রিকভাবে শিশুদের সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া বা মৃত্যুর সম্ভাবনা খুবই কম। ইংল্যান্ডে বিগত একবছরে ১৮ বছরের কম বয়সীদের করোনা সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, ৬ হাজার ৩৩৮ জনের মধ্যে মাত্র ২৫৯ জন শিশু ও নাবালক-নাবালিকাকেই আইসিইউতে ভর্তি করতে হয়েছিল।

গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে, বিগত একবছরে ইংল্যান্ডে মোট ৩১০৫ জন ১৮ বছর কমবয়সীদের বিভিন্ন কারণে মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে কেবল ২৫ জনেরই করোনায় মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ১০ লক্ষে মাত্র ২ জন শিশুর মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে করোনায়।

মৃত্যুহার অত্যন্ত কম হলেও বিশেষজ্ঞরা অভিভাবকদের আগের মতোই সমস্ত সতর্কতা ও কোভিডবিধি অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। মাস্ক পরা, হাত ধোয়ার মতো অভ্যাস যেমন বজায় রাখতে বলা হয়েছে, তেমনই অভিভাবকদেরও ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ, শিশুরা মূলত তাদের অভিভাবকদের মাধ্যমেই সংক্রমিত হচ্ছেন। সুতরাং অভিভাবকদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠলে শিশুদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কম হবে। এরজন্যও রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর মায়েদের করোনা টিকাকরণে বিশেষ জোর দিচ্ছে।

তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের সুরক্ষা দিতে প্রস্তুতি কেমন?

ডঃ অনির্বাণ দলুই জানান, শিশুদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এনআইসিইউ, পিআইসিইউ খোলা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় শিশুদের চিকিৎসার জন্য যাতে আইসিইউ ব্যবস্থা থাকে, তা নিশ্চিত করছে স্বাস্থ্য দফতর। শিশু হাসপাতালে শয্যা, ভেন্টিলেটরের মতো পরিকাঠামোর উন্নতি করা হচ্ছে। পাশাপাশি শিশুদের চিকিৎসার জন্য জেলার চিকিৎসকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই বিভিন্ন জেলায় এই প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করছে স্বাস্থ্য ভবন।    আরও পড়ুন: মান্যতা পেল কোভিশিল্ড, বদলাল ভ্রমণনীতি, ফ্রান্সে প্রবেশ করতে পূরণ করতে হবে কী কী শর্ত? 

COVID third Wave