PM Modi on News 9 Global Summit: ভারত-জার্মানি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতীক নিউজ ৯ গ্লোবাল সামিট: নরেন্দ্র মোদী

PM Modi on News 9 Global Summit: এই অনুষ্ঠানের প্রধান আয়োজক থেকে সহ-আয়োজকদের বিশেষ ধন্যবাদ জানাতেও দেখা যায় মোদীকে। তিনি বলেন, “আমি খুব আনন্দিত। যেভাবে ভারতের একটি মিডিয়া গ্রুপ আজকের এই তথ্য-প্রযুক্তির যুগে জার্মানি ও সে দেশের লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগের নতুন রাস্তা গড়ে তুলেছে তাতে দুই দেশের নাগরিকদের একে অপরকে বুঝতে অনেক সুবিধা হবে। একটা নতুন প্ল্যাটফর্ম পাওয়া যাবে।”

PM Modi on News 9 Global Summit: ভারত-জার্মানি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতীক নিউজ ৯ গ্লোবাল সামিট: নরেন্দ্র মোদী
বক্তব্য রাখছেন নরেন্দ্র মোদী Image Credit source: TV 9 Bangla
Follow Us:
| Updated on: Nov 22, 2024 | 11:06 PM

নিউজ ৯ গ্লোবাল সামিটের জার্মানি সংস্করণের দ্বিতীয় দিনে স্টুটগার্ট শহরে শিল্প-বাণিজ্য-ক্রীড়া মহলের উজ্জ্বল উপস্থিতিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ। এর আগে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত টিভি ৯ নেটওয়ার্কের ‘হোয়াট ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুডে’ শীর্ষক বৈঠকেও বিশেষ অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এদিন বক্তব্যের শুরুতেই ধন্যবাদ জানান জার্মানির রাষ্ট্র নেতাদের। তাঁর মুখে শোনা যায় জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার নামও। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাডেন-ভ্যুর্টেমবের্গের মন্ত্রী-প্রেসিডেন্ট উইনফ্রিড ক্রেটসম্যান, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া-সহ এই গ্লোবাল সামিটে আসা সমস্ত মানুষকে আমার প্রণাম জানাই। আজ ভারত-জার্মানি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা নতুন অধ্যায় জুড়ে গেল।”  

একইসঙ্গে এই অনুষ্ঠানের প্রধান আয়োজক থেকে সহ-আয়োজকদের বিশেষ ধন্যবাদ জানাতেও দেখা যায় মোদীকে। তিনি বলেন, “আমি খুব আনন্দিত। যেভাবে ভারতের একটি মিডিয়া গ্রুপ আজকের এই তথ্য-প্রযুক্তির যুগে জার্মানি ও সে দেশের লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগের নতুন রাস্তা গড়ে তুলেছে তাতে দুই দেশের নাগরিকদের একে অপরকে বুঝতে অনেক সুবিধা হবে। একটা নতুন প্ল্যাটফর্ম পাওয়া যাবে। নিউজ ৯ এর নতুন ইংরাজি চ্যানেল লঞ্চ হচ্ছে। আমি এটা জানতে পেরে খুব খুশি হয়েছি। এই সামিটের থিম ইন্ডিয়া-জার্মানিঃ রোডম্যাপ ফর সাসটেইনেবল গ্রোথ। এই থিম আসলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেরই প্রতীক। বিগত দু’দিনে অর্থনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুর সঙ্গে সঙ্গে খেলা ও বিনোদনের নানা বিষয়ে আপনারা আলোচনা করেছেন, শুনেছেন।” এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক রাজনীতির আঙিনার পাশাপাশি বাণিজ্য-বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ইউরোপ। আর জার্মানি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীগুলির মধ্যে অন্যতম দেশ।” 

এদিনের অনুষ্ঠান থেকে মোদী আরও বলেন, “২০২৪ সাল দুই দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বছর, ঐতিহাসিক একটা বছর। এবারই ইন্দো-জার্মান স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপের ২৫ বছরের পূর্ণ হচ্ছে। গত মাসেই চ্যান্সেলার শলৎস তৃতীবারের জন্য ভারত সফর করেছেন। ১২ বছর পর দিল্লিতে বড় কনফারেন্সও হয়েছিল। যেখানে জার্মানি ‘ফোকাস অন ইন্ডিয়া’ নামে বিশেষ রিপোর্ট সামনে নিয়ে আসে। একইসঙ্গে ভারত কীভাবে দক্ষ শ্রমিকদের কাজে লাগাতে পারে সেই সংক্রান্ত একটি রিপোর্টও প্রকাশ করে।” 

উঠে আসে ইতিহাসের কথা 

এদিন ভারত জার্মানির সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে একের পর এক ইতিহাসের পাতা ওল্টান নরেন্দ্র মোদী। তাঁর আরও সংযোজন, “ভারত-জার্মানি স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্কের মাত্র ২৫ বছর হয়েছে, কিন্তু আমাদের আত্মিক সম্পর্ক শতাব্দী প্রাচীন। ইউরোপের প্রথম সংস্কৃত ব্যাকরণের বই লিখেছিলেন একজন জার্মান। দুই জার্মানের হাত ধরে জার্মানি ইউরোপের এমন দেশ হিসাবে উঠে আসে যেখানে প্রথম তামিল ও তেলেগুতে বই ছাপা হয়। আজ জার্মানিতে প্রায় ৩ লক্ষ ভারতীয় থাকে। ভারতের ৫০ হাজার পড়ুয়া জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করে। অন্যদিকে আজ ভারতে ১৮০০-র বেশি জার্মান সংস্থা কাজ করছে। এই সংস্থাগুলি থেকে বিগত ৩ থেকে ৪ বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগও এসেছে। দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। আমার বিশ্বাস আগামী বছরগুলিতে বাণিজ্যের পরিমাণ আরও বাড়বে। কারণ, বিগত কিছু বছরে ভারত-জার্মানির সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে। ভারত আজ বিশ্বের সবথেকে দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। দুনিয়ার প্রত্যেক দেশ বিকাশের মন্ত্রে ভারতের সঙ্গে একযোগে চলতে চায়। জার্মানির ‘ফোকাস অন ইন্ডিয়া’ ডকুমেন্ট এ ক্ষেত্রে সবথেকে বড় প্রমাণ। এই ডকুমেন্ট থেকে বোঝা যায় কীভাবে আজ গোটা বিশ্ব ভারতের গুরুত্ব বুঝতে পারছে। বিশ্বের এই চিন্তা বদলের পিছনে বিগত ১০ বছর ধরে চলা ভারতের পুর্নগঠন, নতুন আঙ্গিকের রূপায়ন, এবং দিনের শেষে বাস্তবায়নের বড় ভূমিকা থেকেছে।” এথানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, “ভারত প্রতিটা ক্ষেত্রে, প্রতি সেক্টরে নতুন পলিসি তৈরি করেছে। দ্রুত বৃদ্ধির জন্য নিজেকে সদা প্রস্তুত রেখেছে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বদল এসেছে। নতুন নীতি রূপায়ন হয়েছে। ব্যঙ্কিং সেক্টরও আরও শক্তিশালী হয়েছে। জিএসটি এনে জটিল কর ব্যবস্থার বদল করা হয়েছে। তার উপর দিয়েই বিকশিত ভারতের স্বপ্নপূরণের যাত্রা আরও সুগম হচ্ছে। আর এই ক্ষেত্রে জার্মানি হবে ভারতের ভরসাযোগ্য সঙ্গী। জার্মানির বিকাশ যাত্রায় ম্যানুফ্যাকচারিং আর ইঞ্জিনিয়রিংয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। ভারতও আজ বিশ্বের বড় ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হয়ে ওঠার দিকে এগিয়ে চলেছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র ছাতার তলায় যে সমস্ত ম্যানুফ্যাকচারিং সংস্থা এসেছে তাদের প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ দেওয়া হয়। আমাদের দেশের ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রের মানচিত্রেও বড় পরিবর্তন হয়েছে। মোবাইল আর ইলেকট্রনিক ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের অগ্রণী দেশগুলির মধ্যে একটি। আজ ভারত বিশ্বের সবথেকে বড় দু’চাকা ও চারচাকার প্রস্তুতকারক হিসাবে উঠে এসেছে। একইসঙ্গে সবথেকে বড় সিমেন্ট ও স্টিল প্রস্তুতকারকও বটে।”

এখানেই না থেমে মোদী আরও বলেন, “ভারতের সেমিকনডাক্টার ইন্ড্রাস্ট্রি খুব দ্রুত গোটা বিশ্বে নিজের জয়ধ্বজা ওড়াতে চলেছে। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ বিগত কয়েক বছরে আমাদের সরকার পরিকাঠামো খাতে উন্নতির চেষ্টা করে গিয়েছে। সুষ্ঠ প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য লাগাতার নতুন নতুন নীতি তৈরি হয়েছে, নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারতের ডিজিটাল প্রযুক্তির উপর উদ্ভাবনী ক্ষমতা, তার প্রভাব আজ গোটা বিশ্ব দেখছে। এখনও অনেক জার্মান সংস্থা আছে যারা এখনও ভারতে পা রাখেনি। আমি তাদের ভারতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এটাই ভারতের সঙ্গে একসঙ্গে পথচলার সবথেকে সেরা সময়। জার্মানির ইঞ্জিনিয়ারিং এখন ভারতের উদ্ভাবনীর সঙ্গে জুড়ে একসঙ্গে কাজ করছে। এই প্রয়াস আমাদের চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে।” তাঁর বক্তৃতার শেষে প্রধানমন্ত্রী ভারতের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি এবং ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর চেতনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ভারত সর্বদা সারা বিশ্বের মানুষকে স্বাগত জানিয়েছে, তাঁদের আমাদের দেশের একটি অংশ করে তুলেছে। আমরা বিশ্বের জন্য একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গড়ার অংশীদার হতে প্রস্তুত।”