কাশ্মীর ইস্যুতে তালিবানের ইউ-টার্ন! মুসলিম প্রীতিকে হাতিয়ার করে নাক গলানোর চেষ্টা?

তাদের বক্তব্য, কোনও অবস্থাতেই কোনও দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেওয়ার নীতি তাদের অভিধানের নেই।

কাশ্মীর ইস্যুতে তালিবানের ইউ-টার্ন! মুসলিম প্রীতিকে হাতিয়ার করে নাক গলানোর চেষ্টা?
সুহেল শাহিন। ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 03, 2021 | 12:48 PM

কাবুল: কথায় আছে, যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়। হুবহু সেই প্রবাদই যেন এবার ভারতের জন্য সত্যি হতে চলেছে। আফগানিস্তানে তালিবান ক্ষমতা দখল নেওয়ার পর থেকেই কাশ্মীর ইস্যু চিন্তায় রেখেছে নয়া দিল্লিকে। প্রাথমিকভাবে যদিও তালিবান এই নিয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। নাক গলাতেও চায়নি। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে, একটু একটু করে আসল চেহারা দেখাতে শুরু করেছে কাবুলের উগ্রপন্থী শাসক। কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়ে এ বার কাশ্মীরি মুসলিমদের সমর্থনে সুর চড়ানোর কথা বলতে শোনা গিয়েছে তালিবানকে। তালিব মুখপাত্রের দাবি, শুধু কাশ্মীর নয়, গোটা বিশ্বের ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের হয়ে কথা বলার অধিকার তালিবানের রয়েছে। কিঞ্চিৎ আগ্রাসনের সুরে এই কথা বলে অবশ্য পিঠ বাঁচানোর জন্য আরও একটি মন্তব্য করেছে তালিবান। তাদের বক্তব্য, কোনও অবস্থাতেই কোনও দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেওয়ার নীতি তাদের অভিধানের নেই।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি উর্দু কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তালেবানের মুখপাত্র সোহেল শাহিন বলেন, “কাশ্মীর হোক, ভারত হোক বা অন্য কোনও দেশ। মুসলিম হিসেবে অন্যান্য মুসলিমদের সমর্থনে কথা বলার অধিকার আমাদের রয়েছে।” অন্যান্য রাষ্ট্রগুলির উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, “আমরা আমাদের সুর আরও চড়াবো এবং বারবার করে (বাকি দেশগুলিকে) বলব, মুসলিমরা আপনাদের নিজেদের লোক, আপনাদের দেশের নাগরিক। দেশের আইন অনুসারে বাকিদের মতো সমান অধিকার তাদেরও রয়েছে।”

তালিবানের এই মন্তব্যের মাধ্যমে তাদের দ্বৈত চরিত্র এবং রংবদলের বিষয়টি আরও বেশি করে প্রকাশ্যে আসছে। কারণ কাবুলে দখল নেওয়ার পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই সোহেল শাহিনকেই বলতে শোনা গিয়েছিল, কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে তারা আগ্রহী নন। কাশ্মীর সম্পূর্ণ ভারতের অন্তর্বর্তী এবং দ্বিপাক্ষিক একটি বিষয়। তাই এই নিয়ে তারা নাক গলাতে চান না। অথচ একমাস কাটতে না কাটতেই সেই অবস্থান থেকে সরে এসে সমগ্র বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক আঙ্গিকে নামিয়ে আনতে চাইছে তালিবান।

ভারত অবশ্য তালিবান নিয়ে এখনো পর্যন্ত ধীরে চলো নীতি নিয়েই এগোচ্ছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বিষ্যুদবার  একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আফগানিস্তানের মাটি যদি সন্ত্রাসবাদের পালন-ভূমি হিসেবে গড়ে ওঠে, তবে ভারত সেটা বরদাস্ত করবেন না। দিন কয়েক আগেই তালিবানের সঙ্গে কাতারে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রথম বৈঠকেও ভারত এই বিষয়টি স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিল।

ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তল দেখা করেছিলেন তালিবানের শীর্ষ নেতা আব্বাস স্তানিকজাইয়ের সঙ্গে। সেই বৈঠক শেষে তালিবানের পক্ষ থেকেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে আফগানিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসবাদি কার্যকলাপ চলতে দেওয়া হবে না। যদিও বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতি কতটা পূরণ হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ তালিবান ক্ষমতা দখলের পর থেকেই আল কায়েদা, লস্কর-ই-তৈয়বা থেকে শুরু করে আইএসের মত চরমপন্থী জঙ্গি সংগঠন নতুন করে সক্রিয়তা শুরু করছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে এমনটাও বলা হয়েছে যে, এই জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠতে পারে আফগানিস্তান। এই বিষয়টি সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে রয়েছে নয়া দিল্লির জন্য। ঘোষিত শরীয়ত আইনের শাসিত দেশ যদি ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের এপিসেন্টার না হয়, তবে অবাকই তো হতেই হবে। তাই ভারত বারবার করে আফগানিস্তানকে সতর্ক করছে তালিবান যেন এই ভুল না করে। আরও পড়ুন: শুক্রবারের নমাজের পরই ‘শুভকাজ’! আন্তর্জাতিক সাহায্যের আশায় বসে নয়া তালিবান সরকারও