বিশ্লেষণ: বিশ্বের কোণায় কোণায় এবার কি সন্ত্রাস আর ড্রাগ পৌঁছে দেবে তালিবান?

TV9 Bangla Explained: সাধারণত, পাকিস্তান, তুরকমেনিস্তান মাদক পাচারের অন্যতম রাস্তা তালিবানের। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এবার মাদক পাচারে আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর।

বিশ্লেষণ: বিশ্বের কোণায় কোণায় এবার কি সন্ত্রাস আর ড্রাগ পৌঁছে দেবে তালিবান?
ড্রাগ পাচার ও সন্ত্রাসে শীর্ষে হবে আফগানিস্তান?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 22, 2022 | 1:14 PM

কাবুল: রুক্ষ্ম মাটির ছোট ছোট টিলা। তার আনাচ কানাচে ঝোপঝাড়ে যে গাছটি আখছাড় পাওয়া যায়, তার নাম এফিদ্রা। শক্ত রসকসহীন সরুসরু ডালপালা। তার ভাঁজে ভাঁজে অসংখ্য লাল ডুমুরের মতো ফুল। ফারাহ, হেরাতের রাস্তা দিয়ে গেলে ওই টিলাগুলো মনে হবে কেউ লাল রঙ দিয়ে লেপে দিয়েছে। এফিদ্রার ডাল, ফুল, শিকর সবকিছুই ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে। তবে উত্তেজক ড্রাগ তৈরির জন্য এফিদ্রার হাঁকডাক আরও বেশি। আফগানিস্তানের স্থানীয় অধিবাসীরা এই গাছকে ‘ওমান’ বা ‘বন্দক’ বলে ডাকে। বিশ্বে সবথেকে বেশি  আফিম চাষ হয় আফগানিস্তানে। তবে একচ্ছত্র মুনাফা লুটতে ‘এফিদ্রা’ তালিবানের কাছে মাস্টারস্ট্রোক হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ephedra

আফগানিস্তানে পাহাড়ের কোলে এভাবেই পাওয়া যায় এফিদ্রা

এফিদ্রা ব্যান:

আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন জায়গা এফিদ্রা চাষ হলেও আফগানিস্তানে শুষ্ক আবহাওয়ায় আগাছার মতো এফিদ্রা দেখা যায় পাহাড়ে কোলে। এর জন্য আলাদা করে চাষ করতে হয় না আফগানদের। জ্বর, সর্দিকাশি, মাথাব্যাথ্যা, হাড়ে ব্যাথ্যা কিংবা ওজন কমানোয় সাধারণত এফিদ্রার ব্যবহার হয়। তবে, এর থেকে তৈরি ড্রাগের মাত্রারিক্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকায় এফিদ্রা চাষ নিষিদ্ধ করে আমেরিকার ওষুধ নিয়ামক সংস্থা এফডিএ। এফিদ্রায় ‘এফিদ্রিন’ নামক উত্তেজক কেমিক্যাল থাকে, যা ‘ক্রিস্টাল মেথামফেটামাইন’ ড্রাগ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। অধিকাংশ অ্যাথেলিটরা ড্রাগ হিসাবে এফিদ্রিন নিয়ে থাকেন। অলিম্পিক্স কমিটি, ন্যাশনাল কলেজিয়েট অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন, ন্যাশনাল ফুটবল লিগের মতো একাধিক সংস্থা এফিদ্রাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

এফিদ্রায় ‘এফিদ্রিন’ নামক উত্তেজক কেমিক্যাল থাকে, যা ‘ক্রিস্টাল মেথামফেটামাইন’ ড্রাগ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

এফিদ্রায়- তালিবান যোগ:

বিশ্বের সবচেয়ে সস্তায় এফিদ্রিন মেলে একমাত্র আফগানিস্তানে। আফগানিস্তানের হেরাত, কাবুল, মাজার, নানগড়হরের আনাচ-কানাচে ল্যাবে ক্রিস্টাল মেথামফেটামাইন ড্রাগ তৈরি হয়। রিপোর্ট বলছে, বিশ্বে মোট হিরোইন পাচারের ৮০ শতাংশ আফগানিস্তান থেকে হয়ে থাকে। আর এই রিপোর্ট রাষ্ট্রপুঞ্জের মাদক পাচার ও অপরাধ সংক্রান্ত অফিসে পেশ করেন আফগানিস্তানের প্রতিনিধিই সিজার ফ্রেরস। 

আফগানিস্তানে অধিকাংশ এফিদ্রা ও আফিম চাষ হয় তালিবান প্রভাবিত এলাকাগুলিতে। এফিদ্রার চাহিদা থাকায় তালিবানের তত্ত্বাবধানে এই গাছের চাষ হয়ে থাকে। বলা যায়, তালিবানের অন্যতম আয়ের উৎস এই এফিদ্রা চাষ করে। এতদিন সরকারের নজরদারি থাকায় চোরাপথেই এই কারবার চালাত তালিবান। এখন খোদ তারা সিংহাসনে। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না, এবার দিনের আলোয় আফিমের মতো এফিদ্রা চাষ করতে পারবে তালিবান।

taliban

কোন পথে ড্রাগ পাচার:

আফগানিস্তানের একদিকে পাকিস্তান, চিন, ইরান। অন্য দিকে তুরকমেনিস্তান, তাজিকিস্তান। তাজিকিস্তান বাদে তালিবানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুসম্পর্ক রেখে এসেছে বাকি প্রতিবেশী দেশগুলি। ক্ষমতায় আসার পরপরই তালিবানকে স্বাগত জানিয়েছে চিন, ইরান। মুখে কুলুপ আঁটলেও মুখোশের আড়ালে তালিবানকে ধারাবাহিকভাবে মদত করার অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। আর তুরকমেনিস্তান কার্যত তালিবানের হাতের মুঠোয়। রাশিয়াও তালিবান শাসিত সরকারকে সমর্থন দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই সব রুট দিয়ে বিশ্বে মাদক পাচার আরও সহজ হবে তালিবান সরকারের কাছে।

আফগানিস্তানে কোথায় কোথায় ‘ক্রিস্টাল মেথামফেটামাইন’ ড্রাগ পাওয়া যায়

ভারতেও মাদক রমরমা:

সাধারণত, পাকিস্তান, তুরকমেনিস্তান মাদক পাচারের অন্যতম রাস্তা তালিবানের। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এবার মাদক পাচারে আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর। তালিবানের সহযোগিতায় ভারতে সন্ত্রাসের পাশাপাশি মাদক পাচারে ইন্ধন দিতে পারে ইসলামাবাদ। এই মুহূর্তে তালিবান শাসিত আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে ভারত। 

আফগানিস্তানে তালিবান শাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কূটনৈতিক চালচিত্রও পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকা, ভারত নীতিগতভাবে কিছুটা ব্যাকফুটে। আফগানিস্তানে আমেরিকার প্রভাব কমায় ইরান ও রাশিয়ার যথেষ্ট তৎপরতা দেখা গিয়েছে। অন্যদিকে ভারতকে টেক্কা দিতে হিসেব কষছে চিন ও পাকিস্তান। যে যেভাবেই কূটনৈতিকভাবে এগোক না কেন, এই মুহূর্তে বিপুল অর্থের প্রয়োজন তালিবান সরকারের। আগামী দিনে আমেরিকার তরফে ফান্ডের দরজা সেভাবে খোলা নাও থাকতে পারে। তাই আয়ের ভরপাই করতে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে কি এবার ড্রাগ পাচারে সরকারি সিলমোহর দেবে তালিবান? আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। আরও পড়ুন- কখন আমাকে মারবে, তাদের অপেক্ষায় বসে আছি: আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা মেয়র