ভারতের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, সাহায্যের আর্জি জানিয়ে বাইডেনকে চিঠি সাংসদের
এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি দিলেন সাংসদ দেবরা রস।
ওয়াশিংটন: ভারতের করোনা (COVID) পরিস্থিতি ক্রমশ উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। বেলাগাম করোনা সংক্রমণে জেরবার গোটা দেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লক্ষ ৮২ হাজার ৩১৫ জন। এই পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের অন্যান্য একাধিক দেশ। প্রথমে ঢিলেমি করলেও পরবর্তীকালে ভারতের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকা।
এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি দিলেন সাংসদ দেবরা রস। ভারতকে যাতে অতি দ্রুত অক্সিজেন সিলিন্ডার, ভেন্টিলেটর বাইপাপ মেশিন ও ভ্যাকসিনের কাঁচামাল পৌঁছে দেওয়া হয়, সেই আবেদন জানিয়েই চিঠি লিখেছেন মার্কিন সাংসদ দেবরা। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমি ভারতের করোনা পরিস্থিতি সঙ্গে জানতে পেরেছি। সেখানে অক্সিজেনের সঙ্কটের জেরে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে।” তাই এই পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ দেবরা।
পাশাপাশি ওই চিঠিতে জো বাইডেনকে ভারতকে সাহায্য করার জন্যও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই আমেরিকা পিপিই, অক্সিজেন ও ভ্যাকসিনের কাঁচামাল রফতানি করেছে ভারতে। দেশে এসে পৌঁছেছে জো বাইডনের সাহায্য। তবে সেই সাহায্য যেন আরও দ্রুত ভারতের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, সে বিষয়ে জো বাইডেনকে নজর দেওয়ার অনুরোধ করেছেন দেবরা।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কোন দেশ কীভাবে সাহায্য করছে ভারতকে?
আমেরিকা: সেরাম যে কোভিশিল্ড তৈরি করে তার কাঁচামাল আসে আমেরিকা থেকে। কিন্তু সেই কাঁচামাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আমেরিকা। ফলে আমেরিকা থেকে ভারতে ভ্যাকসিনের কাঁচামাল আসার পথ কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ভারতের এহেন কঠোর পরিস্থিতিতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পরিস্থিতি নিয়ে ফোনে কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। আমেরিকা পিপিই, ভেন্টিলেটর ছাড়াও ভারতের হাতে ৩১৮ অক্সিজেন কনসানট্রেটর তুলে দিয়েছে। এ ছাড়া রফতানিতে নিষেধাজ্ঞ তুলে নিয়ে সেরামকে ভ্যাকসিনের কাঁচামাল সরবরাহের কাজও চালাচ্ছে আমেরিকা।
ব্রিটেন: করোনার বাড়বাড়ন্তের কারণে ভারত সফর বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তবে ভারতকে সাহায্য করতে ভোলেননি। ভারতের হাতে ৪৯৫ অক্সিজেন কনসানট্রেটরস, ১২০ নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর ও ২০ ম্যানুয়াল ভেন্টিলেটর তুলে দিয়েছে ব্রিটেন।
সিঙ্গাপুর: ভারতকে চারটি ক্রায়োজেনিক অক্সিজেন ট্যাঙ্ক দিয়েছে সিঙ্গাপুর।
অস্ট্রেলিয়া: ভারতকে অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর ও পিপিই কিট দেওয়ার কথা জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
সৌদি আরব: ভারতকে ৮০ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন পাঠাচ্ছে সৌদি আরব।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহি: সংযুক্ত আরব আমিরশাহি থেকে ভারতে আসছে বিপুল ক্ষমতাযুক্ত অক্সিজেন ট্যাঙ্কার।
জার্মানি: জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল জানিয়েছেন, ভারতের জন্য বিশেষ প্যাকেজ পাঠাচ্ছেন তারা। তবে তাতে কী থাকবে তা এখনও জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী জার্মানি থেকে ৮ কোটি এন ৯৫ মাস্ক, ১২০টি ভেন্টিলেটর ও মোবাইল অক্সিজেন প্ল্যান্ট আসছে।
রাশিয়া: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। এরপরই রাশিয়া থেকে ভারতে এসে পৌঁছেছে ৭৫ ভেন্টিলেটর, ১৫০ বেডসাইড মনিটর, ওষুধ ও ২০ অক্সিজেন কনসানট্রেটর। ভারতকে ৩ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ রেমডেসিভির ইঞ্জেকশন দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছে রাশিয়া।
চিন: অন্যান্য দেশগুলির মতো ভারতকে যথাসম্ভব সাহায্যের কথা জানিয়েছে চিনও। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং চিঠি দিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করকে সম্পূর্ণ সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।
ফ্রান্স: খোদ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ হিন্দিতে পোস্ট করে ভারতের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। মোট ১০টি অক্সিজেন জেনারেটর, ২৮টি ভেন্টিলেটর ও ৫ কন্টেইনার তরল অক্সিজেন আসছে ফ্রান্স থেকে। ম্যাক্রঁ জানিয়েছেন, এক একটি অক্সিজেন জেনারেটর হাসপতালকে ১০ বছরের জন্য অক্সিজেনের ওপর আত্মনির্ভরশীল বানাবে।
এ ছাড়াও আরও একাধিক দেশ ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। আয়ারল্যান্ড থেকে আসছে ৭০০ অক্সিজেন কনসানট্রেটর। অস্ট্রেলিয়া থেকে ৫০০ ভেন্টিলেটর ও মাস্ক আসছে। তাইল্যান্ড থেকেও আসছে সাহায্য।
আরও পড়ুন: ২ হাজার ছুঁই ছুঁই দৈনিক সংক্রমণ, বাংলাদেশে করোনা কাড়ল ১১ হাজারের বেশি প্রাণ