Hawala Scam : অর্পিতার টাকায় হাওয়ালা যোগ! ২১ কোটি টাকা পাচার করলে কীভাবে হত জেনে নিন

Hawala Scam : দেশে হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা লেনদেন নিষিদ্ধ। এর জন্য ভারতে দুটি আইনও বলবৎ রয়েছে।

Hawala Scam : অর্পিতার টাকায় হাওয়ালা যোগ! ২১ কোটি টাকা পাচার করলে কীভাবে হত জেনে নিন
অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 26, 2022 | 6:18 PM

রাজ্য তথা দেশে এখন হট টপিক পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। এসএসসি দুর্নীতির কারণে বেশ কয়েকদিন ধরে সংবাদ শিরোনামে রয়েছে এই দুটি। তার সঙ্গে দুর্নীতি, আর্থিক কেলেঙ্কারি, ২১ কোটি টাকা- এই শব্দগুলো মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদিকে দেশে যখনই কোনও আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে হাওয়ালা শব্দটিও তখন উঠে এসেছে। অর্পিতার ফ্ল্যাটে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার হওয়ার পর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে হাওয়ালা শব্দটি। এখন পথে-ঘাটে সাধারণের মানুষের মুখে শোনা যাচ্ছে হাওয়ালা শব্দটি। তবে হাওয়ালা শব্দের আসল অর্থ কী? এটি কি কোনও ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা নাকি পুরোটাই চলে হাওয়ায় হাওয়ায়?

হাওয়ালা কী?

বড়সড় কোনও আর্থিক কেলেঙ্কারি বা দুর্নীতির কোনও ঘটনা প্রকাশ্য়ে এলে হাওয়ালার প্রসঙ্গ ওঠে। হাওয়ালা ও আর্থিক দুর্নীতি একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। এক কথায় হাওয়ালা হল ব্য়াঙ্ককে এড়িয়ে ও সরকারকে ফাঁকি টাকার লেনদেনই হল হাওয়ালা। হাওয়ালা একটি আরবি শব্দ। হাওয়ালা শব্দের অর্থ হল লেনদেন। মধ্য এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

ডাকাতির ভয়ে অষ্টম শতাব্দীতে টাকা-পয়সা, সোনা-দানা নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া নিরাপদ ছিল না। সেইসময় নিজেদের টাকা-পয়সা নিরাপদ রাখতে তা লেনদেনের জন্য এই ব্যবস্থা চালু হয়। শুরু তখন থেকেই। তখন ডাকাতদের থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় ছিল। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হিসেবে শুরু হলেও এখন তা ধরন পাল্টে এক একটি বড় দুর্নীতিতে পরিণত হয়েছে। বিদেশে কর্মরত অনেক ভারতীয় ব্য়াঙ্ক দেশে ব্য়াঙ্ক মারফত টাকা পাঠান না। এর অন্যতম কারণ হতে পারে, তাঁরা হয়ত সংশ্লিষ্ট দেশে বেআইনিভাবে বসবাস করছেন। কোনও ব্যক্তিকে ব্য়াঙ্ক মারফত টাকা পাঠাতে হলে কাগজপত্রের দরকার পড়ে। পাশপাশি করও দিতে হয়। সেক্ষেত্রে বেআইনিভাবে বসবাস ধরা পড়ে যেতে পারে। তবে হাওয়ালার ক্ষেত্রে এসবের কোনও বালাই নেই। ব্যাঙ্কে যে পদ্ধতিতে টাকা-পয়সা লেনদেন হয় হাওয়ালা তার মতোই সমান্তরাল একটি পদ্ধতি। কালো টাকার কারবারিরা মূলত এই পদ্ধতির শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে কালো টাকার কারবারি ও এক শ্রেণির দালালদের পারস্পরিক বিশ্বাসই এর মূল ভিত্তি।

কীভাবে কাজ হয় এই হাওয়ালায়?

এই ব্যবস্থায় এক দল দালাল থাকেন যাঁরা টাকা সংগ্রহ করেন। তাঁদের হাওয়ালাদার বলা হয়ে থাকে। বিষয়টি খুলে বলা যাক। ধরে নেওয়া যাক, কোনও ব্যক্তি ভারতে বসে অন্য কোনও দেশে হাওলার মারফত টাকা পাঠাতে চান। তাহলে সেই প্রেরক ব্যক্তি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ও একটি পাসওয়ার্ড এক হাওলাদারকে দিয়ে দেবেন। সেই সঙ্গে পাসওয়ার্ডটি পাঠিয়ে দেবেন যাঁকে টাকা পাঠাচ্ছেন তাঁর কাছেও। এরপর হাওলাদার অন্য দেশে থাকা তাঁর এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তাঁকে বলে দেওয়া পাসওয়ার্ডটি সেই এজেন্টকে জানিয়ে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে টাকা পাঠিয়ে দিতে বলবেন। যে ব্যক্তিকে টাকা পাঠাতে হবে তিনি পাসওয়ার্ড জানিয়ে দিলেই সেই এজেন্ট টাকা ঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।

এই ব্যবস্থায় যাঁরা টাকা সংগ্রহ করে টাকা পৌঁছে দিচ্ছে তাঁরা এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। টাকা লেনদেনের জন্য মোটা টাকা কমিশন পান তাঁরা। যেহেতু সব লেনদেনই মুখে মুখে হয় তাই ব্যাঙ্ক বা বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রে এর কোনও প্রমাণ থাকে না। হাওয়ালার গোটা বিষয়টি দালাল ও এজেন্টের বিশ্বাসের উপর ভরসা করে চলে।

ভারতে বেআইনি হাওয়ালা :

শুনতে সহজ মনে হলেও ভারতে এই প্রক্রিয়ায় টাকা পাঠানো যায় না। ভারতে বেআইনি হাওয়ালা। হাওয়ালার বিরুদ্ধে দুটি আইন রয়েছে দেশে। একটি ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট, ২০০০ বা ফেমা। অন্যটি হল প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট, ২০০২। এই আইনে গ্রেফতারির সম্ভবনা থাকলেও হাওয়ালার মাধ্য়মে টাকা লেনদেনে ভরসা করেন অনেকেই। তবে হাওয়ালা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্য উদ্বেগের কারণ রয়েছে। নাশকতার ছক কষতে জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদীরা যে টাকা জোগাড় করে তার বড় অংশ হাওয়ালার মাধ্য়মেই করে থাকে। এদিকে হাওয়ালার সঙ্গে রাজনীতি জড়িয়ে থাকারও অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, রাজনীতিকদের একাংশ অনেক সময় ভোটের খরচ যোগাতে বিদেশ থেকে এই হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা লেনদেন করেন।

নয়ের দশকের হাওয়ালা কাণ্ড :

নয়ের দশকে হাওয়ালা অপারেটর জৈন ভাইদের ডায়েরিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নাম উঠে আসায় দেশজুড়ে তোলপাড় দেখা গিয়েছিল। সেই ডায়েরিতে নাম ছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী, প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা, প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী দেবী লাল, উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এনডি তিওয়ারি, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নটবর সিং-র। তবে আদালতে সিবিআই তাঁদের বিরুদ্ধ কোনও প্রমাণ দিতে না পারায় সকলেই ছাড়া পেয়ে যান।