Agnipath scheme: ৪ বছরের জন্য নিয়োগ, বার্ষিক ৬.৯ লাখ টাকার প্যাকেজ! জেনে নিন ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প সম্পর্কে সবকিছু
Agnipath scheme: 'ট্যুর অফ ডিউটি' বা 'অগ্নিপথ' প্রকল্প কী? জেনে নিন তিন প্রতিরক্ষা বাহিনীতে সেনা নিয়োগের নয়া নিয়ম।
নয়া দিল্লি: বড়সড় পরিবর্তন ভারতের তিন প্রধান প্রতিরক্ষা বাহিনীর সেনা নিয়োগের পদ্ধতিতে। কেন্দ্রীয় সরকার মঙ্গলবার (১৪ জুন) নতুন ‘ট্যুর অফ ডিউটি’ প্রকল্পের উন্মোচন করেছে, যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘অগ্নিপথ’। দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এদিন এই প্রকল্পের প্রস্তাব পাশ হয়েছে। অবিলম্বে এই নয়ুন ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে। বর্তমাবনে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে সেনা নিয়োগ করা হয় দশ বছরের জন্য, নতুন মডেলে নিয়োগ করা হবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। এই প্রকল্পের অধীনে নিয়োজিত সৈন্যদের বলা হবে ‘অগ্নিবীর’। কী এই ‘ট্যুর অফ ডিউটি’ বা ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প? আসুন জেনে নেওয়া যাক –
অগ্নিপথ প্রকল্প
নতুন প্রকল্পের অধীনে, প্রতি বছর তিন বাহিনী মিলিয়ে অফিসার পদমর্যাদার নীচের পদে প্রায় ৪৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ সৈনিক নিয়োগ করা হবে। ছয় মাসের ব্যবধানে বছরে দুবার করে নিয়োগ করা হবে। এঁরা কাজ পাবেন চার বছরের অস্থায়ী ভিত্তিতে। প্রতি বছর যতজনকে নিয়োগ করা হবে, তাদের মধ্যে, মাত্র ২৫ শতাংশ সৈনিককে স্থায়ী কমিশনের আওতায় আরও ১৫ বছরের জন্য পুনর্নিয়োগ করা হবে। বর্তমানে দেশের স্থায়ী সেনা সদস্যের সংখ্যা ১৩ লক্ষেরও বেশি। নয়া পদক্ষেপে সশস্ত্র বাহিনীর স্থায়ী সদস্যের সংখ্যা কমবে। ফলে, প্রতিরক্ষা পেনশন বিল উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। দূর হবে সরকারের দীর্ঘদিনের উদ্বেগ।
যোগ্যতার মানদণ্ড
নতুন ব্যবস্থাটি শুধুমাত্র অফিসার পদমর্যাদার নীচের স্তরের কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ, যারা অফিসার হিসাবে বাহিনীতে যোগদান করবে, তারা এই ব্যবস্থার আওতার বাইরে থাকবে। সাড়ে সতেরো থেকে একুশ বছর বয়সীরা এই প্রকল্পের অধীনে আবেদন করার যোগ্য হবে। নিয়োগের অন্যান্য যোগ্যতামান আগের মতোই থাকবে। নতুন মডেলের অধীনে নিয়োগের পরের ছয় মাস সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বাকি সাড়ে তিন বছর সৈনিকের দায়িত্ব পালন করবে।
কবে থেকে নিয়োগ
এই প্রকল্পের অধীনে প্রথম নিয়োগ প্রক্রিয়া ৯০ দিনের মধ্যে শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রথম ব্যাচ আসবে টি ২০২৩ সালে।
অগ্নিপথের সুবিধা
এই প্রকল্পে সৈনিকরা, প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় সরকার – তিন পক্ষই বিবিধ সুবিধা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সৈনিকদের সুবিধা
চাকরির শুরুতে তাঁরা অতিরিক্ত সুবিধা সহ ৩০,০০০ টাকা বেতন পাবেন (৪.৭৬ লাখ টাকার বার্ষিক প্যাকেজ )। চার বছরের পরিষেবা শেষে বেতন বেড়ে দাঁড়াবে ৪০,০০০ টাকা (৬.৯২ লাখ বার্ষিক প্যাকেজ)। এই সময়কালে তাদের বেতনের ৩০ শতাংশ একটি সেবা নিধি প্রকল্পের অধীনে সঞ্চয় করা হবে। প্রতি মাসে সরকারও সেই অ্যাকাউন্টে সমান পরিমাণ অবদান দেবে। তার উপরে সুদও সংগ্রহ হবে। এই সৈনিকরা পেনশন পাবেন না। তবে, চার বছরের মেয়াদ শেষে প্রত্যেক সৈনিককে এককালীন ১১.৭১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। এর জন্য করও দিতে হবে না। এছাড়া প্রশিক্ষণ এবং কর্মের মেয়াদকালে অর্জিত দক্ষতার উপর ভিত্তি করে, তাঁদের ডিপ্লোমা বা ক্রেডিট দেওয়া হতে পারে। এটা তাদের পরবর্তী সময়ে কাজ পেতে সাহায্য করবে। চার বছরের জন্য ৪৮ লক্ষ টাকার জীবন বীমা কভারও পাবেন। চার বছরের মেয়াদকালে যদি কারোর মৃত্যু হয়, বাকি মেয়াদের বেতন সহ ১ কোটি টাকার বেশি পাবেন তাঁর পরিবার।
তবে, নিয়োগপ্রাপ্ত সৈনিকদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশকে আরও ১৫ বছরের জন্য তাদের নিজ নিজ পরিষেবায় পুনরায় নিয়োগ করা হবে। তাঁরা অবসরকালীন সুবিধাও পাবেন। তবে, অবসরকালীন সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে, অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত থাকার চার বছরকে বিবেচনা করা হবে না।
প্রতিরক্ষা বিভাগের সুবিধা
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে শূন্যপদ দ্রুত পূরণে সাহায্য করবে এই নয়া মডেল। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে গত দুই বছরে তিন বাহিনীতেই প্রায় কোনও সেনা নিয়োগই হয়নি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, বাহিনীতে বর্তমানে জুনিয়র কমিশনড অফিসারের প্রায় ১ লক্ষেরও বেশি পদ খালি রয়েছে। সেই সঙ্গে বাহিনীর গড় বয়সও উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। বর্তমানে তিন বাহিনীর গড় বয়স ৩২ বছর। অগ্নিপথ প্রকল্পের অধীনে আগামী ছয়-সাত বছরে, তা ২৬-এ নেমে আসবে। তরুণতর সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষে নতুন সামরিক প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ গ্রহণ সহজ হবে।
সরকারের সুবিধা
কর্মী ঘাটতির সমস্যার সমাধান হবে। বাড়বে কর্মসংস্থান। পাশাপাশি, নয়া মডেলে সরকারের ঘাড় থেকে প্রতিরক্ষা পেনশনের চাপ অনেকটাই হাল্কা হবে। চলতি আর্থিক বছরে এই খাতে প্রায় ১.২ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যা, মোট প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রায় এক চতুর্থাংশ। পুরোনো মডেলের সঙ্গে নয়া মডেলের তুলনা করে দেখা গিয়েছে সৈন্য প্রতি সরকারের ১১.৫ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে! এই বাবদ সঞ্চিত অর্থ সামরিক আধুনিকীকরণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
অগ্নিপথের নিয়ে উদ্বেগ
এই ত্রিপাক্ষিক সুবিধার সত্ত্বেও, সামরিক বিশেষজ্ঞরা এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্নও বটে। বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশন-সহ প্রায় ২০ বছর চাকরি করেন সৈনিকরা। নতুন ব্যবস্থায় বেশিরভাগ সৈন্যই পেনশন ছাড়া মাত্র চার বছর কাজ করবে। এই সৈন্যরা বড় মাপের কোনও অভিযানের জন্য যথেষ্ট প্রশিক্ষণ পাবেন কিনা এবং যথেষ্ট অভিজ্ঞতা অর্জন করবে পারবেন কিনা, তাই নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। তবে, প্রাথমিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই প্রকল্প এমন যুবকদের জন্যই, যারা সামরিক বাহিনীকে স্থায়ী কর্মজীবন হিসাবে ভাবে না, কিন্তু সামরিক পেশাদারিত্বের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়। নিয়োগের মানদণ্ড শিথিল না করেই তাদের জন্য এই পরিকল্পনা করা হয়েছে।