Chhattisgarh election 2023: কী কী কারণে ছত্তীসগঢ়ে ভরাডুবি কংগ্রেসের? কেন মিলল না অঙ্কের হিসেব?
Chhattisgarh election 2023: রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতা ধরে রাখবে, এই বিষয়ে এক প্রকার নিশ্চিত ছিল সব পক্ষ। এমনকি, বিজেপি নেতারাও জানিয়েছিলেন, রাজ্যে জয় আসলেও, তা আসবে বেশ কষ্ট করে। কিন্তু, সবার হিসেব উল্টে গিয়েছে ছত্তীসগঢ়ে। কী কী কারণে এতটা পিছিয়ে গেল কংগ্রেস?
হায়দরাবাদ: চারটি রাজ্যেই বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনা প্রায় শেষ। মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান এবং তেলঙ্গানা নিয়ে বিভিন্ন সমীক্ষক সংস্থার বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলে পার্থক্য ছিল। একটি রাজ্য নিয়ে দ্বিমত ছিল না কোনও সংস্খাই, ছত্তীসগঢ়। রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতা ধরে রাখবে, এই বিষয়ে এক প্রকার নিশ্চিত ছিল সব পক্ষ। এমনকি, বিজেপি নেতারাও জানিয়েছিলেন, রাজ্যে জয় আসলেও, তা আসবে বেশ কষ্ট করে। রবিবার সকালে গণনা শুরু হওয়ার সময়, প্রাথমিকভাবে কংগ্রেস এগিয়ে থাকলেও, বেলা যত বেড়েছে, ততই এগিয়েছে বিজেপি। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে, ৯০টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৪৯ আসনে জিতেছে আর ৫টিতে এগিয়ে আছে। কংগ্রেস জিতেছে ৩৩ আসনে, এগিয়ে ২টিতে। আর ১টি আসন জিতেছে গন্ডোয়ানা গণতন্ত্র পার্টি। কিন্তু, কেন সমীক্ষক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সব হিসেব উল্টে গেল? কী কী কারণে ছত্তীসগঢ়ে এতটা পিছিয়ে গেল কংগ্রেস?
প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা
মধ্য প্রদেশে গত ৪ বারের সরকারের বিরুদ্ধে যে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ছিল, বিভিন্ন কৌশলে তা প্রতিহত করেছে বিজেপি। কিন্তু, ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেস তাদের এক মেয়াদের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতারই মোকাবিলা করতে পারেনি। বরং, রাজ্য জুড়ে বিজেপি নেতা-কর্মীরা ভূপেশ বাঘেলের পাঁচ বছরের দুঃশাসনকেই তাদের নির্বাচনী প্রচারের প্রধান বিষয় করে তুলেছিল।
অত্যধিক আত্মবিশ্বাস
৩০ নভেম্বর, বুথ ফেরত সমীক্ষাগুলিতে কংগ্রেসকে এগিয়ে রাখার পর, বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বলেছিলেন, কংগ্রেস ‘ল্যান্ডাসাইড ভিকট্রি’ পাবে। তিনি আরও দাবি করেছিলেন, অনেক এক্সিট পোলে কংগ্রেস ৫৭টি আসন পাবে বলে দেখানো হলেও, গণনার দিন তা ৭৫-এ গিয়ে দাঁড়াবে। কংগ্রেস নেতা তথা সাংসদ রাহুল গান্ধীও রাজ্যে প্রচারে এসে দাবি করেছিলেন, চারটি রাজ্যেই বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হবে কংগ্রেস। অনেকেই মনে করছেন, ছত্তীসগঢ়ে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে প্রচারে সেভাবে জোরই দেয়নি কংগ্রেস।
একাধিক ‘কেলেঙ্কারি’র অভিযোগ
ছত্তিশগড় বিধানসভা নির্বাচনের আগে, বিজেপি ভূপেশ বাঘেল সরকারের বিরুদ্ধে, মদ কেলেঙ্কারি, কয়লা কেলেঙ্কারি, মহাদেব বেটিং অ্যাপ কেসের মতো একাধিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলেছিল। এছাড়া, ইডি তদন্ত শুরু করেছিল কাস্টম রাইস মিলিং কেলেঙ্কারি নিয়ে। ছত্তিশগড় পাবলিক সার্ভিস কমিশনে নিয়োগের ক্ষেত্রেও কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছে বিজেপি। বিজেপি সহ-সভাপতি রমন সিং এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। দুর্নীতির পাশাপাশি স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করে, নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ১০৪-পৃষ্ঠার একটি ‘চার্জশিট’ প্রকাশ করেছিল বিজেপি।
আদিবাসীদের জোর করে ধর্মান্তরকরণ
ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনের ফল অনেকটাই নির্ভর করে আদিবাসী অধ্যুষিত বস্তার বেল্টের উপর। এই এলাকায় আদিবাসীদের জোর করে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ উঠেছিল। এই ক্ষেত্রে আদিবাসীদের পাশে না দাঁড়ানোর অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছে বাঘেল সরকার। বছর খানেক আগে, এলাকার দীর্ঘদিনের কংগ্রেস নেতা দল ছেড়ে আদিবাসীদের নিজস্ব দল গঠন করেছিলেন। আদিবাসীদের এই নয়া দল এই এলাকায় কংগ্রেসের ভোটে অনেকটাই দাঁত ফুটিয়েছে।
কংগ্রেসের অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি
২০১৮-য় ক্ষমতায় আসার সময় যে প্রতিশ্রুতিগুলি দিয়েছিল কংগ্রেস, পাঁচ বছরে সেই সব প্রতিশ্রুতি তারা পূরণ করতে পারেনি। এর জন্যও বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ভূপেশ বাঘেল। এর মধ্যে রয়েছে মদ নিষিদ্ধ করা, বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার প্রদান, রাজ্যের বিভিন্ন দফতরে কর্মরত চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়মিত চাকরি দেওয়া।
কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব
ছত্তীসগঢ়ে উপমুখ্যমন্ত্রী টিএস সিং দেও প্রকাশ্যেই রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছেন। টিএস সিং দেও এবং ভূপেশ বাঘেলের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব কারও অজানা ছিল না। তাঁকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে ভেবেছিল কংগ্রেস। কিন্তু, সেই সমাধান যে কাজে আসেনি, তা ভোটের ফলেই প্রমাণিত।
মোদী ফ্যাক্টর
বর্তমানে যে কোনও রাজ্যেই বিজেপির জয়ের পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে থাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাকি তিন রাজ্যের মতো, ছত্তীসগঢ়েও তিনিই ছিলেন বিজেপির প্রধান প্রচার মুখ। ছত্তীসগঢ়ের এক সভাতেই প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনার মেয়াদ আরও ৫ বথর বাড়ানোর কথা।