সিঙ্গুরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন মমতা: মোদী
১০ বছরে সিঙ্গুরের জন্য কী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee)? তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী (PM Narendra Modi)।
তারকেশ্বর: এবার বিধানসভা নির্বাচনে একটাই কেন্দ্রে নজর গোটা রাজনৈতিক মহলের, নন্দীগ্রাম । যে আন্দোলন মমতাকে রাজ্যের মসনদ উপহার দিয়েছিল, সেই কেন্দ্রই এবার নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তবে মমতার আন্দোলনের ইতিহাসে সিঙ্গুরের (Singur) নামও যথেষ্ট উজ্জ্বল। তৃতীয় দফার আগে সেটাই আবারও প্রকট ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। এক দিকে মমতা টাটাদের ফেরানো সেই সিঙ্গুরে গিয়ে মমতা দাবি করেছেন, তিনি আসলে সিঙ্গুর থেকেই লড়বেন বলে ঠিক করেছিলেন। অন্য দিকে, তখন রাজ্যে এসে নরেন্দ্র মোদী বলে গেলেন, ‘সিঙ্গুরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন মমতা।’
তৃতীয় দফার আগে শনিবার রাজ্যে প্রচারে এসে হুগলির তারকেশ্বরে গিয়েছিলেন নমো। মমতাকে আক্রমণের চেনা সুর এ দিনও তাঁর গলায় বেশ স্পষ্ট। নন্দীগ্রাম নিয়ে আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে গোটা বিজেপির। তাই বলে সিঙ্গুরের জমি দখলেও কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না বিজেপি। মোদীর মন্তব্যেই স্পষ্ট হয়ে গেল সে কথা। ১০ বছরে সিঙ্গুরের জন্য কী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী? তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেলেন মোদী। সিঙ্গুরের জমি থেকে টাটাকে ফেরানোর পর তাঁদের গন্তব্য হয়েছিল গুজরাট। সে রাজ্যে তখন মুখ্যমন্ত্রী মোদী। আর এ রাজ্যে তখনও পদ্ম শিবিরের জমিই ছিল না। তাই বাংলার মাটি থেকে ফিরে যাওয়া শিল্পকে স্থান দেওয়ার তেমন কোনও রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল না তখনও। অথচ ২০২১-এ এসে সেটাই কী সুবিধা করে দিল মোদীকে? এ দিন সিঙ্গুর নিয়ে মমতাকে তোপ তাই নিছক প্রচারের চেনা স্ক্রিপ্টের থেকে কিছু বেশি গুরুত্ব রাখল।
কয়েক দিন আগেই সিঙ্গুরে গিয়ে কী কী করা হয়েছে সেই তালিকা দিয়ে এসেছেন তৃণমূল নেত্রী। সন্তোষি মায়ের ব্রত করে সিঙ্গুরের আন্দোলনে জয় পেয়েছিলেন বলে মন্দির করে দিয়েছেন, এমন দাবিও করেছেন তিনি। অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে মমতা আরও বলেছেন, ‘সিঙ্গুরে শিল্প হবে।’ শিল্প সরিয়ে কৃষি রক্ষা করে জয় এনেছিলেন মমতা, সেই মাটি দখলে রাখতে কী আবার শিল্পের পথেই হাঁটছেন মুখ্যমন্ত্রী? উঠছে এমনই প্রশ্ন। আর শনিবার তারকেশ্বরে দাঁড়িয়ে মোদী বার্তা দিয়ে এলেন, কী কী করেননি মমতা। তিনি বলেন, ‘মমতা শিল্প ফিরিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু সিঙ্গুরের মানুষের জন্য কিছুই করেননি।’ সেখানকার মানুষ সব হারিয়ে ফেলেছেন বলেই দাবি করেন মোদী।
সিঙ্গুরের রাজনৈতিক চিত্র যে তৃণমূলকে খুব একটা স্বস্তি দিচ্ছে, এমনটাও নয়। লোকসভা নির্বাচনে হুগলি আসন থেকে জয়ী হয়ে বিজেপির সংসদ হন লকেট চট্টোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, বিধানসভার নিরিখেও ফল ভালো ছিল লকেটের। সিঙ্গুর বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থী রত্না দে নাগের চেয়ে ১০,৪২৯ ভোট বেশি পেয়েছিলে লকেট। এমনকি টাটাদের প্রকল্প এলাকাতেও ফল আাশানুরূপ ছিল না তৃণমূলের। যে তিনটি মৌজার জমি ওই প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তার দুটিতে অধিকাংশ পঞ্চায়েত আসনে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। গোপালনগরে মোট ১৮টি পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ১১টিতেই জয়ী হয় বিজেপি, ৭টিতে তৃণমূল।
আরও পড়ুন: ‘দুটো সিটেই যদি হেরে যায়, তাই সিদ্ধান্ত বদল!’ ফের কটাক্ষ মোদীর
এর মধ্যে আবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতেই মুখ ভার সিঙ্গুরের চার বারের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের। তড়িঘড়ি দল বদলে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন তিনি। সুযোগ ছাড়েনি বিজেপিও। তাঁকেই প্রার্থী করা হয়েছে। আর প্রতিপক্ষ তৃণমূলের বেচারাম মান্না। সিঙ্গুরে গিয়ে সেই মাস্টারমশাইয়ের কথাও বলেছেন মমতা। আজও সম্মান করেন বলে জানিয়েছেন। বলেছেন মাস্টারমশাইকে জায়গা দিতেই নাকি নিজে লড়েননি সিঙ্গুরে। তাহলে কেন বাদ পড়লেন মাস্টারমশাই, সে ব্যাখ্যা অবশ্য স্পষ্ট নয়। তবে আন্দোলনের ইতিহাস নাকি শিল্প ফিরিয়ে দেওয়ার তোপ? চারবারের বিধায়ক নাকি তাঁরই শিষ্য বেচারাম? মানুষ কোনটা বেছে নেবেন, সেটা বোঝা যাবে বিধানসভা ভোটের ফলাফলেই।