সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ‘গদ্দারদের’ জন্য আসনচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা মমতার
প্রশ্ন উঠছে, গদিতে বসলেও অচিরেই তাঁর সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে এমন ভাবনাও কি রয়েছে মমতার মনে? আশঙ্কা যাই থাকুক না কেন, প্রশ্ন হল এই ধরনের কথা কী জনসমক্ষে বলা যায়?
কলকাতা: দিনহাটার জনসভায় শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) করা একটি মন্তব্যকে ঘিরে এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতিতে কার্যত বিতর্কের ঝড় উঠেছে। গতকালের সভা থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “২০০-র বেশি আসন চাই। ২০০-র কম হলে ওরা গদ্দারদের কিনে নেবে। গদ্দারদের টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে। গদ্দারদের টাকা দিয়ে কিনে নেবে। যদি সরকার চালাতে হয় তবে আমাদের প্রত্যেকটা প্রার্থীকে ভোট দিতে হবে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যে তাঁর একটা আশঙ্কা বস্তুত দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। তিনি আশঙ্কা করছেন, তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হতে পারে। ঘোড়া কেনা বেচার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই যে তিনি এই কথা বলেছেন, তা স্পষ্ট। প্রশ্ন উঠছে, গদিতে বসলেও অচিরেই তাঁর সরকার সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে এমন ভাবনাও কি রয়েছে মমতার মনে? আশঙ্কা যাই থাকুক না কেন, প্রশ্ন হল এই ধরনের কথা কী জনসমক্ষে বলা যায়?
প্রশ্ন আরও উঠতে শুরু করেছে। তাহলে কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজেরই তাঁর দলের প্রার্থীদের ওপর আস্থা নেই? যুদ্ধের সময় দলের সৈনিকদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ থাকলে যুদ্ধ জয় আদৌ কি সম্ভব? ‘গদ্দাররা’ বিক্রি হয়ে যাবে বলে আগেভাগেই কি তিনিদলের প্রার্থীদেরই মনোবলে আঘাত দিলেন না? মুখ্যমন্ত্রীর আগের কথা অনুযায়ী সব ‘গদ্দার’ চলে গিয়ে তৃণমূল কি এখনও ‘শুদ্ধ’ হয়নি?
এই নিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “যারা আছেন তাঁরা জিতে চলে যাবেন, যদি এরকম ভয় থাকে তবে উনি রাজনীতি করছেন কেন? তাহলে ওনার ভোটাররাই বা কেন ওনাকে ভোট দেবে?” তৃণমূল অবশ্য বলছে, এ হল নেত্রীর সচেতনতার বার্তা।
আরও পড়ুন: মমতার ‘কানে কানে’ মোদী বলে গেলেন, বারাণসী থেকে লড়লে কী হবে?
ওয়াকিবহাল মহলের অবশ্য দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কার কারণ আছে বৈকি! ১৯৮৫ সালে চালু হয় দলত্যাগ-বিরোধী আইন। যাতে বলা আছে কোনও দলের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ সাংসদ বা বিধায়ক একসঙ্গে দল না ছাড়লে তাঁদের আইনসভার সদস্যপদ বাতিল হবে। কিন্তু, বিধায়ক পদে শপথ গ্রহণের আগেই সরকার গঠনের সময়, দলত্যাগ-বিরোধী আইন কার্যকর হতে পারে কিনা তা নিয়ে আইনি ধোঁয়াশা রয়েছে।
২০১৮-র মে মাসে কর্নাটকে আস্থা ভোটের সময়, সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যাখ্যা দেন, শপথের আগে পর্যন্ত বিধানসভা ভোটে জয়ী প্রার্থীরা দলত্যাগ-বিরোধী আইনের আওতায় আসবেন না।
গত ৫ বছরে প্রায় কুড়ি জন কংগ্রেস বিধায়ক তৃণমূলে গিয়েছেন। অন্য দল থেকেও গেছেন অনেকে। দল ভাঙিয়ে একের পর পর এক পুরসভা দখল করেছে তৃণমূল। এ সব মনে করিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন, বাংলায় ‘গদ্দার’ সংস্কৃতির জন্ম আসলে দিয়েছেন কে?
আরও পড়ুন: পেনশন চাইলে ব্যাঙ্কের জবাব ‘মোদীকে বলুন’, প্রধানমন্ত্রীর খোঁজে বিজেপির কার্যালয়ে বৃদ্ধা, তারপর…