শুধু শুভেন্দুই নয়, নন্দীগ্রামে এবার ছেষট্টির মমতা বনাম তরুণী মমতার লড়াই

নেহাতই সংখ্যার মিল। তবু নন্দীগ্রামের কুরুক্ষেত্রে সে মিলও বুক ঠুকে অবজ্ঞা করতে পারছেন না কেউই। সালটা ১৯৮৪। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে বাংলার রাজনীতিতে জন্ম হয়েছিল নতুন তারকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার দিদি। ১৯৮৪ থেকে ২০২১। ব্যবধান প্রায় ৩৭ বছর। নন্দীগ্রামে এ বার লড়াই মমতা বনাম শুভেন্দুর হলেও উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন বাম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ও।

শুধু শুভেন্দুই নয়, নন্দীগ্রামে এবার ছেষট্টির মমতা বনাম তরুণী মমতার লড়াই
গ্রাফিক্স: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Mar 30, 2021 | 10:50 PM

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ: এ নেহাতই সংখ্যার মিল। তবু নন্দীগ্রামের কুরুক্ষেত্রে সে মিলও বুক ঠুকে অবজ্ঞা করতে পারছেন না কেউই। সালটা ১৯৮৪। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে বাংলার রাজনীতিতে জন্ম হয়েছিল নতুন তারকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বাংলার দিদি। ১৯৮৪ থেকে ২০২১। ব্যবধান প্রায় ৩৭ বছর। নন্দীগ্রামে এ বার লড়াই মমতা বনাম শুভেন্দুর হলেও উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন বাম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ও ( Minakshi Mukherjee)। হলফনামায় যাঁর বয়স ৩৭ বছর।

দিনের আলো পড়ে আসছে। তবু হনহন করে হাঁটছেন তিনি। যতটুকু পথ চলার কথা ছিল তা যে শেষ করতেই হবে। তাঁকে দেখে তরুণী এক গৃহবধূ বলে উঠলেন, ‘হাঁটায় কি মিল না!’ তরুণীর সঙ্গেই ছিল এক বালক। সে বলল, ‘এ কি আমাদের দিদি?’’

নন্দীগ্রাম পেয়েছে এক নতুন দিদি। মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। জোট প্রার্থী মীনাক্ষীর হাঁটার সঙ্গে যাঁর মিল খুঁজে পাচ্ছিলেন তরুণী গৃহবধূ। তিনি সকলের দিদি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী। নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী। এখন হুইল চেয়ারে প্রচার করলে কী হবে, হাঁটতে দিদি বরাবরই পছন্দ করেন। অনেকে বলেন, হেঁটে মানুষের কাছে পৌঁছে, তাঁদের সুখ-দুঃখের কথা শুনে, তাঁদের ঘরের মানুষের একজন হয়ে নাকি বাম সরকার ফেলে দিয়েছিলেন মমতা। নন্দীগ্রামের নতুন দিদিও হাঁটছেন। ভাবভঙ্গী, আদবকায়দায় অদ্ভুত মিল। সহনশীল হয়ে মানুষের কথা শোনা থেকে বিরোধীদের উদ্দেশে জ্বালাময়ী বক্তৃতা। সেখানেও মিল কাকতালীয়।

মিল আরও আছে, সংখ্যায়। রাজনীতির পথে হাঁটা আগে থেকে শুরু হলেও দিদি জনপ্রতিনিধি হয়েছিলেন ১৯৮৪ সালে। যাদবপুর কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে মমতা বুঝেয়েছিলেন বাংলার রাজনীতিতে আর্বিভাব হয়েছে এক উল্কার। কালক্রমে যিনি পরিচিত হয়েছেন অগ্নিকন্যা রূপে। সিপিএম বিরোধিতার পথ ধরে হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দিদিই এখন প্রতিষ্ঠান। ১০ বছর রাজ্যপাট সামলে তাঁকেও প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

১৯৮৪ থেকে ২০২১। পেরিয়ে গিয়েছে ৩৭ বছর। যে নন্দীগ্রাম তাঁকে রাজনীতির জমি দিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রিত্ব দিয়েছে, সেখানেই তাঁর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন এক তরুণী। বয়স তাঁর ৩৭। নাম তাঁর মীনাক্ষী। নন্দীগ্রামের নতুন দিদি। লাল কামিজ-সালোয়ার পরে যিনি বলছেন, ‘‘ভোট আপনারা যে কাউকেই দিতে পারেন, কিন্তু যদি ভাবেন, আপনার বাড়ির ছেলেটা এ রাজ্যেই চাকরি করবে। দিনের শেষে কাজ থেকে ফিরে মেয়েকে পড়াতে বসাবে তবে আস্থা রাখুন আমাদের উপরে।” আক্রমণ শানাচ্ছেন নন্দীগ্রামের প্রাক্ত বিধায়ক তথা বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)-র দিকে।

আরও পড়ুন: ব্যুমেরাং মমতা: শুভেন্দু-শিশিরের উপর দোষ চাপিয়েই কি দায় ঝেড়ে ফেলতে পারেন মমতা? 

একটা সময় ছিল যখন অনেকে বলতেন, বাংলায় প্রকৃত বামপন্থী মমতাই। রাজ্য বাম আর বামে নেই। তবে ফুলেফেঁপে উঠছে রাম। বাম-মমতা কি এখনও বাম রয়েছেন? রামকে তুলোধনা করে প্রশ্ন তুলছেন নন্দীগ্রামের নতুন দিদি।