এখানে টিভি নেই, মোবাইল এক অকেজো খেলনা, ভোট উৎসব পালনে বক্সার দুর্গম পাহাড়ে ‘বাবুরা’

লেপচা, ডুকপা, গাড়ো, মেচ জনজাতির এই গ্রামগুলো দেখলে মনে হবে, কোনও দক্ষ শিল্পী নিজের তুলি হাতে নিয়ে যেন ক্যানভাসে এক নিখুঁত ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।

এখানে টিভি নেই, মোবাইল এক অকেজো খেলনা, ভোট উৎসব পালনে বক্সার দুর্গম পাহাড়ে 'বাবুরা'
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Apr 09, 2021 | 11:41 PM

আলিপুরদুয়ার: নেমেছে অন্ধকার। চারিদিক থেকে ভেসে আসছে ঝিঝি পোকার ডাক। তার মাঝে শোনা যাচ্ছে কেবল কেন্দ্রীয় বাহিনীর শক্ত বুটের শব্দ। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসবে সামিল হতে ভুটান লাগোয়া দুর্গম বক্সা পাহাড়ের গ্রামগুলিতে পৌঁছে গিয়েছেন ভোটকর্মীরা। গ্রামবাসীদের উৎসাহও দেখার মতো, ‘বাবুরা’ এসেছেন বলে কথা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়কে ঢাকা এই এলাকা এখনও বহু দূরে আধুনিক সমাজ থেকে। এখানে টিভি নেই, মোবাইল এক অকেজো খেলনা বস্তু মাত্র। রয়েছে পর্যান্ত পরিমাণ পানীয় জল এবং খাবারের অভাব। কিন্তু লেপচা, ডুকপা, গাড়ো, মেচ জনজাতির এই গ্রামগুলো দেখলে মনে হবে, কোনও দক্ষ শিল্পী নিজের তুলি হাতে নিয়ে যেন ক্যানভাসে এক নিখুঁত ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।

ঐতিহাসিক এই বক্সা পাহাড়ের কোলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ১৩ টি গ্রাম যেগুলির অবস্থান দুর্গম বললেও কম বলা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই গ্রামগুলির কোনটির উচ্চতা ২৬০০ ফুট। কোনও গ্রাম আবার ৩০০০ হাজার ফুট উচ্চতায়। এই পাহাড়ের বুকে রয়েছে চুনাভাটি, আদমা, ওসলুম, তাসিগাও, লেপচাখা, বক্সাফোর্ট, সদরবাজার, লালবাংলোর মতো একাধিক গ্রাম। যেখানে পৌঁছনোর জন্য দীর্ঘ পাহাড়ি পথ পায়ে হেঁটেই যেতে হয়েছে ভোটকর্মীদের।

কী নেই সেই পথে! বিপদসংকুল রাস্তা, পাহাড়ি জন্তু জানোয়ারদের ভয় তো রয়েছেই। তার সঙ্গে একটা ভুল পদক্ষেপ পড়লেই যেখানে পা ভেঙে যাওয়া বা গুরুতব চোট পাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। সে সব উপেক্ষা করেই ভোটকর্মীদের পৌঁছে যেতে হয় গন্তব্যস্থলে। এই ১৩ টি গ্রাম মিলিয়ে মোট জনসংখ্যা ২০০০ জনের কাছাকাছি। এই দুর্গম, নির্জন গ্রামগুলিতে কোথাও ভোটারের সংখ্যা ১০০, আবার কোনও গ্রামের ভোটারের সংখ্যা ৫০ এর নিচে।

আরও পড়ুন: ‘অবহেলিত’ উত্তরবঙ্গকে বড় প্রতিশ্রুতি, ‘শিলিগুড়িতে মেট্রো তৈরি হবে’, বললেন শাহ

রাত পোহালেই রাজ্যে চতুর্থ দফার নির্বাচন। রাজ্যের অন্যান্য ভোট কেন্দ্রগুলির খুঁটিনাটি তথ্য কমিশনের কাছে থাকলেও, ভোট চলাকালীন এই গ্রামগুলির কোনও সঠিক তথ্য থাকে না কমিশনের কাছে। কেননা ইন্টারনেট বা মোবাইল টাওয়ার নামক কোনও বস্তুর অস্তিত্ব নেই এখানে। ফলে ভোটকর্মীরা না ফেরা পর্যন্ত এই কেন্দ্রগুলি নিয়ে একপ্রকার অন্ধকারেই থাকতে হয় কমিশনকে।

বক্সার গভীর জঙ্গলের বুক চিরে এই দুর্গম পাহাড়ের কোলে পৌঁছতে হয় ভোট কর্মীদের। আলিপুরদুয়ার থেকে বাসে করে প্রথমে সন্তলাবাড়ি। সেখান থেকে ছোট গাড়ি করে বক্সা পাহাড়ের জিরো পয়েন্ট। এরপর থেকে হাঁটা পথে যাত্রা হয় শুরু। জিরো পয়েন্ট থেকে হাঁটা পথে এই গ্রামগুলিতে পৌঁছতে সময় লাগে ২-৫ ঘণ্টা। দুর্গম চরাই উতরাই পেরিয়ে এখানে পৌঁছে ভোট করানোটাই একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ।

যদিও গণতন্ত্রের এই উৎসবের তাগিদে ইভিএম মেশিন ও ভিভিপ্যাট বয়ে বক্সা পাহাড়ে পৌঁছে গিয়েছেন ভোটবাবুরা। এখানে ৩ টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোট দেবেন সাধারণ মানুষ।

আরও পড়ুন: অমিত শাহের কঠোর পদক্ষেপ, বিজেপির অর্থ অপচয় রুখতে দিল্লি থেকে এলেন জোড়া পরীক্ষক