বঙ্গ রাজনীতিতে রাতারাতি প্রাসঙ্গিক সিদ্দিকির আইএসএফ, কে এই আব্বাস সিদ্দিকি?

২০১৯ সালে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে পিরজাদা থেকে রাজনীতিক হওয়ার আগ্রহ জন্মায় সিদ্দিকির

বঙ্গ রাজনীতিতে রাতারাতি প্রাসঙ্গিক সিদ্দিকির আইএসএফ, কে এই আব্বাস সিদ্দিকি?
ফাইল ফটো
Follow Us:
| Updated on: Mar 02, 2021 | 12:03 AM

পশ্চিমবঙ্গ: একুশের নির্বাচনে বাংলাকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। অন্যদিকে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া তৃণমূল। ২০১৬ সালের জোট থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারেও কংগ্রেসকে পাশে চাইছে সিপিএম। তবে তার সঙ্গে নতুন দল এই জোটে প্রাধান্য পেয়েছে, সেটা হল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (ISF)। ইতিমধ্যেই আইএসএফের সঙ্গে জোট সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে সিপিএম। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের জোট জট অব্যাহত। এই প্রেক্ষিতে ব্রিগেডের সভায় দলের প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকির ভাষণ এবং তাঁর দলের সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের জোট নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে বিস্তর আলোচনা। কিন্তু কে এই আব্বাস সিদ্দিকি? হুগলির পিরজাদা থেকে রাজনৈতিক নেতা, আব্বাসের উত্থানই কীভাবে? তার আগে দেখে নিতে হবে বঙ্গ সংস্কৃতি ধর্মে ফুরফুরার প্রভাব কী?

বঙ্গের ফুরফুরা ঐতিহ্য:

ইতিহাসবিদদের মতে চতুর্দশ শতকে ফুরফুরায় মসজিদ স্থাপিত হয়। বহু যুগ ধরে সমাজ সংস্কারে ফুরফুরার বড় অবদান ছিল। অবিভক্ত বাংলা ছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে বহু মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ আসতেন ফুরফুরায়। বাঙালি মুসলিমদের শিক্ষায় সুফি ভাবধারার উন্মেষে ফুরফুরা শরিফের বড় অবদান রয়েছে। বাঙালি মুসলিমদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন আবু বকর সিদ্দিকি নামে এক পিরজাদা। দাদা হুজুর নামে পরিচিত এই আবু বকরের হাত ধরেই নতুন করে সমাজ সংস্কার শুরু হয়। হুগলি জেলার শ্রীরামপুর মহকুমার জাঙ্গিপাড়ায় একটি মুসলিম মাজার বা কবরস্থান আছে। যাকে বলা হয় ফুরফুরা শরিফের মাজার। আসলে গ্রামটার নামই ফুরফুরা শরীফ। ১৮৯০ সালে ফুরফুরায় সিনিয়র মাদ্রাসা স্থাপিত হয়। বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষা বিস্তারের কাজ শুরু করেন আবু বকর। ১৯৩৯ সালে এই দাদা হুজুরের মৃত্যুর পর এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যান তাঁর পাঁচ সন্তান। বিশেষত উত্তরবঙ্গের কিছু অংশ এবং দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রভাব রয়েছে এই ফুরফুরা শরিফের। বিশেষ করে হুগলি, দুই মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং হাওড়া জেলায় এই দারগার অনেক ভক্ত আছেন। দশকের পর দশক ধরে চলছে ফুরফুরার দাতব্য চিকিৎসালয়ও।

আব্বাস-নামা:

ফুরফুরা শরিফের প্রথম পির আবু বকর সিদ্দিকির পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের প্রতিনিধি হলেন পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। ফুরফুরায় অনেক ইমাম আছেন, তার মধ্য সিদ্দিকিও একজন। পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকির খুড়তুতো ভাইয়ের ছেলে তিনি। অনুগামীরা তাঁকে ডাকেন ভাইজান নামে। আব্বাস নামাজ পড়া ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় মুসলিম জমায়েতে জলসা করতেন। ধর্মীয় বাণী ব্যাখ্যা করে শোনাতেন ভক্তদের। এই ভাবে অল্প বয়সেই তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়ে। তবে আস্তে আস্তে সেই জলসাগুলিতেই আব্বাসের মুখে উঠে আসে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক খোঁজখবর ও ব্যাখ্যার কথাও। তাঁর কিছু ভিডিয়ো রীতিমতো ভাইরাল হতে থাকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ২০১৫ সালে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করেন সিদ্দিকি। ২০১৯ সালে ফুরফুরা ‘নলেজ সিটি’-রও শিলান্যাস করেন তিনি। এর মধ্যে ২০১৯ সালেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা CAA নিয়ে যখন দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয় তখনই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা শোনা যায় সিদ্দিকির গলায়। তখন থেকেই নাকি ঘনিষ্ঠ মহলে রাজনীতিতে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন এই ধর্মীয় নেতা।

আরও পড়ুন: ৯২ আসন ‘সুরক্ষিত’ কংগ্রেসের, তবে আব্বাসকে আসন ছাড়া নিয়ে জট অব্যাহত

একুশের ভোটের কয়েক মাস আগে থেকে রীতিমতো বিভিন্ন ধর্মীয় সভায় আগুনে বক্তব্য রাখা শুরু করেন আব্বাস। রাজ্যের কংগ্রেস থেকে বাম হয়ে বর্তমান তৃণমূল সরকারের সমালোচনা শোনা য়ায় তাঁর মুখে। ক্রমশ অনুগামীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। মূলত মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। তবে প্রথম দিকে তিনি তৃণমূলের সঙ্গে জোট করার ব্যাপারে আগ্রহী হলেও তা ভেস্তে যায়। এর মধ্যে আব্বাসের সঙ্গে জোট গড়তে আগ্রহী হয় বামেরা। তারপর গত ২১ জানুয়ারি ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট নামে আত্মপ্রকাশ করে আব্বাসের রাজনৈতিক দল। প্রথমে মিম-এর সঙ্গে তাদের কথা হলেও শেষপর্যন্ত বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেই বিধানসভা ভোটে লড়তে চাইছেন সিদ্দিকি। ফুরফুরার সিদ্দিকি পরিবারে আব্বাসই প্রথম যিনি ধর্মগুরু পরিচয় সঙ্গে নিয়েই পা রেখেছেন রাজনীতির আঙিনায়। কিন্তু দলের নামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ টানতে নয়, সিদ্দিকি ঘোষণা করেছেন দলিত, তফশিলি সহ সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নয়নই হবে তাঁর রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য।