৯২ আসন ‘সুরক্ষিত’ কংগ্রেসের, তবে আব্বাসকে আসন ছাড়া নিয়ে জট অব্যাহত

আরও একদফা বৈঠক বাম(Left)-কংগ্রেসের (Congress)। বৈঠক শেষে অধীর জানালেন, ৯২ টি আসন সুরক্ষিত করে ফেলেছে কংগ্রেস। যদিও আইএসএফ (ISF)-কে কতগুলি আসন ছাড়া হবে তা স্পষ্ট করে জানাননি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। অন্যদিকে, বামেরা কতগুলি আসনে লড়বে তা এখনও পরিষ্কারভাবে জানালেন না বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।

৯২ আসন 'সুরক্ষিত' কংগ্রেসের, তবে আব্বাসকে আসন ছাড়া নিয়ে জট অব্যাহত
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Mar 02, 2021 | 11:16 AM

কলকাতা: ২৭ মার্চ থেকে রাজ্যে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। আগামিকাল থেকেই মনোনয়ন পত্র দাখিলও শুরু হয়ে যাচ্ছে। তবে ‘সংযুক্ত মোর্চা’ বাম-কংগ্রেস ও আইএসএফ (ISF)-র কোন প্রার্থীরা কোথায় লড়বেন, সেই প্রশ্নের নিরসন এখনও হল না। যদিও প্রদেশ কংগ্রেস (Congress) সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) এ দিন জানিয়ে দেন, ৯২ টি আসন তারা ‘সুরক্ষিত’ করে ফেলেছেন। কিন্তু, এর মধ্যে কোনও আসন আব্বাসের দলকে দেবে না কংগ্রেস। এর পর বামেরা (CPIM) কংগ্রেসকে আরও কত আসন ছাড়ছে, তার উপরই নির্ভর করবে কংগ্রেস আইএসএফ-কে কতগুলো আসন ছাড়বে।

রবিবাসরীয় ব্রিগেডের পর সোমবার আবারও আসন রফা নিয়ে বৈঠকে বসেন বিমান বসু ও অধীর চৌধুরীরা। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টার বৈঠক শেষে দুই দলের নেতৃত্বই জানিয়ে দেন, আসন ধরে ধরে আলোচনা শেষ। কংগ্রেস ৯২ টি আসনে লড়ছে। সেটা নিয়েও কোনও সংশয় নেই। তবে বামেরা কতগুলি আসনে লড়বে এবং আইএসএফ-কে মোট কত আসন ছাড়া হবে, সেই ছবিটা এখনও স্পষ্ট হয়নি।

অধীর সাফ করে দিয়েছেন, এই ৯২ টি আসন থেকে একটি আসনও কাউকে ছাড়া হবে না। বাড়তি আসন পেলে তবেই সেখান থেকে আসন দেওয়া হবে। আরজেডি ও এনসিপি এই জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যে ‘অতিরিক্ত’ আসনগুলি জোটের হাতে এসেছে, সেখান থেকেই ‘ভাগিদার’ করা হবে আব্বাস সিদ্দিকিকে। অর্থাৎ কংগ্রেস যে মালদা ও মুর্শিদাবাদের পয়া আসনগুলি ছাড়বে না, সেটা বুঝিয়ে দিতে কোনও দ্বিধা করেননি প্রদেশ সভাপতি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে একবারও আব্বাস সিদ্দিকির দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট আব্বাস সিদ্দিকির নাম মুখে আনেননি অধীর। ঠিক যেভাবে গতকাল ব্রিগেডের মঞ্চে আব্বাস এড়িয়ে গিয়েছিলেন অধীর চৌধুরীর নাম।

কংগ্রেস কোন কোন কেন্দ্রে ভোটে লড়বে তা অবশ্য এ দিন জানাননি বহরমপুরের সাংসদ। তবে আগামী দু-একদিনের মধ্যেই সেটা পরিষ্কার করে দেওয়া হবে, এমনটাই দাবি অধীরের। অন্যদিকে, প্রথম দফার ভোটে ৩০ টি বিধানসবা কেন্দ্রের প্রার্থী তালিকা আগামিকালই জানিয়ে দেওয়ার কথা ছিল আলিমুদ্দিনের। তবে আজকের বৈঠকের পর তার প্রকাশ আরও বিলম্বিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও সূত্রের খবর, বামেরা মোট ১২১ টি আসনে লড়তে পারে। তবে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু আজও বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখেছেন।

এই সবের মাঝে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা আনন্দ শর্মার একটি টুইট গতকালের ব্রিগেডে ফাটলের জল্পনায় ঘৃতাহুতি করেছে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ দিন টুইট করে নিশানায় নিয়েছেন অধীর চৌধুরীকে। তিনি লেখেন, আইএসএফের মতো দলের সঙ্গে জোট কংগ্রেসের আদর্শের পরিপন্থী। গান্ধী-নেহরুর আদর্শের সঙ্গেও এই ধরনের জোটের বিরোধ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এই ইস্যুতে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির অনুমোদন লাগবে বলে উল্লেখ করেছেন বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতা। এমনকি, অধীরকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, অধীরের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব হলেও মঞ্চে উপস্থিত আরেক কংগ্রেসে নেতা ছত্তিশগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলকে নিয়ে টুঁ শব্দ করেননি আনন্দ।

আরও পড়ুন: আইএসএফের সঙ্গে জোট গান্ধী-নেহরুর আদর্শের পরিপন্থী: আনন্দ শর্মা

এই নিয়ে প্রশ্ন উঠলে অধীর পালটা তোপ দেগে বলেন, দিল্লিতে বসে থাকা নেতারা বাংলার বাস্তব পরিস্থিতির কথা জানেন না। উল্টে তাঁর প্রশ্ন, “উনি (আনন্দ শর্মা) কি কোথাও গিয়ে অন্যদিক থেকে রাজ্যসভার আসন ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন! এ রাজ্যে যে একটা স্বৈরাতান্ত্রিক সরকার চলছে তার বিরুদ্ধেও যদি উনি কিছু বলতেন তাহলে আমরা খুশি হতাম।” উল্লেখ্য, ২০২০ সালে কংগ্রেসের শীর্ষ স্থানীয় ২৩ বিক্ষুদ্ধ নেতা সনিয়া গান্ধীকে চিঠি লিখে নেতৃত্বে অবিলম্বে বদল চেয়েছিলেন। সেই তালিকায় গুলাম নবি আজাদ, কপিল সিব্বলের পাশাপাশি আনন্দ শর্মারও নাম ছিল। সেই চিঠির পর থেকেই এই ২৩ নেতা হাইকমান্ডের ‘চিহ্নিতের’ তালিকায় রয়েছেন বলে দাবি সূত্রের। উল্লেখযোগ্যভাবে, আজাদের রাজ্যসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সুনাম গাইতে শুরু করেছেন। তবে কি আনন্দও অন্য পথের যাত্রী? এ দিন যেন খানিকটা সেই জল্পনাই উস্কে দিয়েছেন অধীর।

ব্রিগেডের মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠে কংগ্রেসকে কিছুটা চমকেই দিয়েছিলেন আব্বাস সিদ্দিকি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “দিল্লি থেকে সনিয়া গান্ধী জোট চাইছেন। কিন্তু এখানে কেউ ঢিলেমি করছে।” কারোর নাম না নিলেও তাঁর নিশানায় যে অধীর ছিলেন, তা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট। সংযুক্ত মোর্চার অভিষেক মঞ্চেই ফাটলের এই ছবিকে একহাতও নিয়েছিল তৃণমূল-বিজেপি। এমন পরিস্থিতিতে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হল সেই সিপিএমকেই। এ দিন সেই প্রসঙ্গে বিমান বলেন, “যখন সবার সঙ্গে বোঝাপড়া হয় তখন কমন কথা বলতে হয়। এই উপলব্ধি তাঁদের নিশ্চই হবে। যেটা বলা হয়েছে সেটা যাতে আবার না হয় সেই চেষ্টা তাঁরা নিশ্চই করবেন।” অন্যদিকে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অধীরও হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোনও ভাবেই নিজের অবস্থান থেকে সরবেন না। কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা আবার এই জোট নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করে জট আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।

বঙ্গযুদ্ধ ২০২১: সব খবর পড়ুন এখানে