আঁচল সামলাতে গিয়ে যা-তা অবস্থা, দিনে শাড়ি পরেছি প্রায় বারো ঘণ্টা: বিশ্বনাথ বসু
বিশ্বনাথ বসু। মাস খানেক আগেই লন্ডনে সেরে এসেছেন 'বাজি' ছবির শুটিং। আগামীকাল, বড়দিনেই স্টার জলসায় আসছে তাঁর 'নাটকের মতো ছবি' 'জয় মা কালী বোর্ডিং'। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত, হরিদাস সান্যাল পরিচালিত নস্টালজিয়া উস্কে দেওয়া সেই মজার নাটক, যা একসময় হাসির রোল তুলত গোটা প্রেক্ষাগৃহে... টিভিনাইন বাংলা আড্ডা দিল আদ্যপান্ত 'ফ্যামিলি ম্যান' বিশ্বনাথের সঙ্গে। কথায়-কথায় উঠে এল, তাঁর বেলঘরিয়ার মেস, দেশের বাড়ি, প্রজেক্টে দশ-বারো ঘণ্টা শাড়ি পরে থাকার গল্প আর পরিবারের কথা।
দুই বন্ধুর বাড়ি ভাড়া পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মজার গল্প ‘জয় মা কালী বোর্ডিং’, আপনিও তো মেসে থেকেছেন একটা দীর্ঘ সময়…কোনও মজার ঘটনা? আমি একটা দীর্ঘ সময় নিজের পয়সায় নয়, বন্ধুদের মেসে থাকতাম বেলঘরিয়ায়। আমার বন্ধু রোহন, রাজু ওরা সব থাকতে দিত আমায়। সব থেকে খারাপ ঘটনা ঘটেছিল একবার। তখন আমায় লোকজন অল্পসল্প চেনে। রাত্রে বাড়ি ফিরেছি। প্রচন্ড গরম। দেখি কলে জল নেই। এ দিকে শুটের মেকআপ লেগে। ওই রাত্রে গামছা জড়িয়ে পাশের পুকুরে দে ডুব।
নাটক অথচ ‘নাটক’ নয়, সিনেমার মতো অথচ সিনেমা নয়… এমন একটি প্রোজেক্টে কাজ করতে রাজি হলেন কেন? ‘জয় মা কালী বোর্ডিং’ একটি সফল নাটক। দিকপাল মানুষেরা অভিনয় করেছেন এই নাটকে। আমাদের এই প্রজেক্টে মেক-আপ রয়েছেন যে আলিদা, তিনি ওই নাটকেও মেক-আপ আর্টিস্টের কাজ করেছিলেন। এ ছাড়াও পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় এই প্রজেক্ট পরিচালনা করেছেন। অনির্বাণ চক্রবর্তী (‘একেনবাবু’ এবং সাম্প্রতিকতম জটায়ু)-র মতো এখনকার অন্যতম শক্তিশালী অভিনেতাকে এই প্রজেক্টে পেয়েছি। সব মিলিয়ে না-কাজ করার কোনও কারণ ছিল না।
অফারটা কী করে এল? বুম্বাদার কাছে থেকেই প্রথম আঁচটা পেয়েছিলাম (এই প্রজেক্টের প্রযোজনা করেছে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের প্রযোজনা সংস্থা)। পরমব্রত একটা ছবি করছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে। সেখানেই পদ্মদাকে (পদ্মনাভ দাশগুপ্ত) আমার এই প্রজেক্টে অভিনয় করার ব্যাপারে জানায় বুম্বাদা জানায়। আমি তো অবাক। পদ্মদা হেসে বলেছিল, ‘ক্রমশ প্রকাশ্য’। আর তারপরই…
পরিবারের সঙ্গে
বিশ্বনাথ বসু মানেই কি মজার চরিত্র? কমিক রিলিফ? তা কেন? কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনাতেই ‘দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট’ করেছি। ‘উড়ো চিঠি’তে অভিনয় করেছি।
দুই বন্ধুর ঘর ভাড়া পাওয়ার জন্য রূপ বদল, ভোলবদলের গল্প বলে ‘জয় মা কালী বোর্ডিং। বিশ্বনাথ বসুকে আর কী কী বদল করতে হল এই প্রজেক্টে? (হাসি) বদল বলতে থিয়েটারের অনেক মানুষের সঙ্গে অনেক বছর বাদে কাজ করলাম। একটা সেম এজ ব্যাচ কাজ করেছি। আনন্দ করেছি।
আপনাকে তো মেয়ে সাজতে হয়েছে? শাড়িও পরতে হয়েছে? হ্যাঁ, দিনে ১০-১২ ঘণ্টা শাড়ি পরে থাকতে হয়েছে। ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা। শাড়ি ঠিক থাকলে চুল ঠিক থাকে না। চুল ঠিক করতে গেলে সিঁদুর ঘেঁটে যায়। রোজ-রোজ তো আর অভ্যেস নেই। আঁচল সামলাতে গিয়ে তো আরও সমস্যা।
শাড়ি পরা নিয়ে স্ত্রী কিছু বললেন? বাড়িতে অনেক দিন আগেই আমাকে বলেছিল এই ধরনের রোল এ বার বন্ধ হোক। ছেলেরা বড় হচ্ছে। ছেলেদের স্কুলে কী বলবে? দীর্ঘদিন ধরে আমি ‘টক-ঝাল আন্টি’ করেছি। অনেক নারীসুলভ চরিত্রে বা নারীদের চরিত্রে অভিনয় করেছি। তাই বারণ ছিল। কিন্তু রোল যে মুহূর্তে চ্যালেঞ্জিং হবে, সেই মুহূর্তে আমি তো আর কারও কথা শুনব না।
ইন্ডাস্ট্রিতে বিশ্বনাথ বসু বললেই ওঁরা বলে, ‘আদ্যপান্ত ফ্যামিলি ম্যান’। কাজ আর পরিবার একসঙ্গে ব্যালেন্স করার ফর্মুলা কী? ব্যালান্স বলতে রাজি নই। ব্যালান্সে ইচ্ছে থাকে না। আজ আমার শুট নেই। ছেলেরা পড়তে যাবে। ওদের নিয়ে যাব। কাল বড়দিন। সন্ধেটা ওদের জন্য রাখব। ওদের খোলা মাঠ দিতে পারিনি, খেলার জায়গা দিতে পারিনি… বাবা হিসেবে ওদের সঙ্গে সময়ই না-হয় খানিক কাটালাম। আমার শৈশবের সুখস্মৃতি, চার মন্দিরের আড্ডা, মাঠে দৌড়ে বেড়ানো… এসব মনে করে নস্ট্য়ালজিক হয়ে পড়ি। আমার বয়সে এসে ওদেরও হয়তো মনে পড়বে বাবার সঙ্গে কাটান ছেলেবেলা, হাত ধরে ঘুরতে যাওয়া…আরও নানা টুকরো মুহূর্ত।