“বেঁচে থাকার জন্য কত পয়সা দরকার?,” রুদ্রনীলকে ফেসবুকে বিঁধে প্রশ্ন অনিকেতের

চুপ থাকলেন না বন্ধু কাঞ্চন মল্লিকও। বললেন, “আমার ছোট মাথায় এত কিছু ঢুকছে না। আমার সঙ্গে ওর কথা হয়নি। আমি ফোন করিনি। করব কি না, জানি না। তবে ওর এই গোটা ব্যাপারটায় আমি ভীষণ শকড!”

“বেঁচে থাকার জন্য কত পয়সা দরকার?,” রুদ্রনীলকে ফেসবুকে বিঁধে প্রশ্ন অনিকেতের
অনিকেত-রূদ্রনীল।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 27, 2021 | 7:19 PM

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সেলফি পোস্ট করেছিলেন গত শনিবার সন্ধ্য়ায়। দু’দিন পর, আজ, সোমবার ‘দাদা আমি সাতে-পাঁচে থাকি না’ কবিতার স্রষ্টা অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষকে সোশ্য়াল মিডিয়ায় এক পাল্টা-কবিতায় বিঁধলেন পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্য়ায়। অনিকেতের ‘বাই বাই ব্যংকক’, ‘ছ-এ ছুটি’, ‘শঙ্কর মুদি’ ছবিতে অভিনয় করেছেন রুদ্রনীল। TV9 বাংলার তরফে অনিকেতকে যখন প্রশ্ন করা হয় ‘সাতে পাঁচে থাকি না’-এর ‘অনিকেত ভার্সান’ কি রুদ্রনীলকে ডেডিকেট করলেন, তখন পরিচালকের সোজাসাপ্টা উত্তর, “ধুর! ওকে ডেডিকেট করব কেন? ও আগে একটা উচ্চতায় পৌঁছক, তারপর ভাবব।” আর অনিকেতের উত্তরের পাল্টা হিসেব রুদ্রর বক্তব্য়, “আমি চাইব যে বিষয়ে উনি পারদর্শী তাতে মনোযোগ দিলে ওঁকে অন্য কাউকে ধরে ‘খবর’ হতে হবে না।” বললেন রূদ্রনীল।”

 

আরও পড়ুন ‘স্ক্যাম’ নয়, সন্দেহের তালিকায় থাকবেন প্রতীক!

 

লকডাউনের সময় ভাইরাল হয়েছিল রুদ্রনীলের স্বরচিত ভিডিয়ো-কবিতা ‘দাদা আমি সাতে-পাঁচে থাকি না’। ইতিমধ্য়েই চার বিলিয়ন ভিউজ পেরিয়েছে ভিডিয়োটি। আজ রূদ্রনীলের ‘সাতে পাঁচে থাকি না’র অনুকরণে যে নতুন কবিতাটা লিখেছেন অনিকেত, সেটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টও করেছেন। অনিকেতের পোস্ট করা কবিতা থেকে কার্যত স্পষ্ট যে, রুদ্রনীলকে এক হাত নিয়েছেন অনিকেত। অনিকেত ভিডিয়োয় বলেছেন, ‘লালে লাল উড়িয়েছে নটবিপ্লবী/দিদির আঁচল ধরে বাগিয়েছি সবই/এ বার গেরুয়া ধরে এমপি হবই আমি/‘দেব’ হতে সাধ কি মোর জাগে না?/দাদা আমি সাতে পাঁচে থাকি না।”

 

 

 

‘সাতে পাঁচে থাকি না’র লেখা, পাঠ এবং ভিডিয়োয় মানুষের হয়ে মানুষের কথা বলেছিলেন রুদ্রনীল। সেই ভিডিয়োয় ছিল একেবারে মজার ছলে বলা এমন কিছু কথা, যা মিলে যায় দিন আনা দিন খাওয়া বাঙালির সঙ্গে। ঘটনাচক্রে যে রূদ্রনীল এতদিন সাতে পাঁচে না থাকার কথা বলছিলেন, সম্প্রতি তিনি বিজেপি-ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। গত ২৩ জানুয়ারি নেতাজীর ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সেলফিও তোলেন রূদ্রনীল। এ দিনের ‘সাতে পাঁচে থাকি না’-এর ‘অনিকেত ভার্সান’ সম্পর্কে পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি দেশের মানুষদের জন্য কবিতাটি লিখেছি। মানুষদের চেনা দরকার। দেশে তো একা রুদ্রনীল নন। অজস্র রুদ্রনীল জন্ম নিচ্ছে রোজ।”

অভিনেতা রুদ্রনীলকে নিয়ে আপনি তো এক সময়ে একাধিক ছবি করেছেন, অনিকেতকে এই প্রশ্ন করা হলে তাঁর উত্তর, “শুধু ওকে নিয়ে কেন? আমি লকেট (চট্টোপাধ্যায়), কাঞ্চনা (মৈত্র), লামা (চট্টোপাধ্যায়), অঞ্জনাকে (বসু) নিয়েও ছবি করেছি। এরা সবাই কোনও না-কোনওভাবে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে।” এবং সেই কারণে ব্য়থিত অনিকেত। উত্তরে উঠে এল তিনটে প্রশ্ন, “কোনও সুস্থ মানুষ বিজেপিতে যোগদান করবে? সুস্থ কোনও বাঙালি বিজেপিতে যায় নাকি? বাঙালিদের সংস্কৃতিতে বিজেপির সঙ্গে?” যদি কখনও দেখা হয়ে যায় রূদ্রনীলের সঙ্গে, এই কবিতা সামনে দাঁড়িয়ে আওড়াতে পারবেন?,“কবিতা নয়, প্রশ্ন করব- ভাই, সাধারণভাবে বেঁচে থাকার জন্য কত পয়সা দরকার?”

 

 

অনিকেতের ‘সাতে-পাঁচে থাকি না’ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হয় রূদ্রনীলের সঙ্গে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, দেখেছেন অনিকেতের পাল্টা-ভিডিয়ো? রুদ্রর উত্তর, “হ্যাঁ, দেখেছি তো। ভীষণ ভাল লেগেছে। খুব ভাল লিখেছে। আমি তো বরবার বলি, অনিকেতদা খুব ভাল লেখে। তবে উনি লেখালিখি ছেড়ে দিয়ে এমন কিছু মানুষদের নিয়ে কথা বলেন, যাঁরা আরও উজ্জ্বল, উনি যা হতে পারেননি। কখনও সাংবাদিকদের, কখনও পরিচালকদের নিয়ে মন্তব্য করেছেন। আমি চাইব উনি যে বিষয়ে পারদর্শী, তাতে মনোযোগ দিলে ওঁকে অন্য কাউকে ধরে ‘খবর’ হতে হবে না।” ‘কোনও সুস্থ মানুষ বিজেপিতে যোগদান করবে?’, অনিকেতের এই বক্তব্য়ের পরিপ্রেক্ষিতে রূদ্রনীল চড়া সুরে বলন, “ভারতবর্ষের সবথেকে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিজেপি। তাহলে বিজেপিকে সমর্থন করা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে কোন শিক্ষা থেকে ‘অসুস্থ’ বলে তিনি দাবি করেন? বিজেপিকে যাঁরা ভোট দিয়েছেন, দলে পা মেলাচ্ছেন, তাঁদের অপমান করলেন? আশা রাখি একদিন ওঁর চৈতন্য হবে।”

 

অনিকেতের ‘সাধারণভাবে বেঁচে থাকার জন্য কত পয়সা দরকার?’-এর উত্তরে রূদ্রনীল বলেন, “অনিকেতদার যত টাকায় জীবনযাপন করেন, তার চেয়ে কম টাকায় আমি জীবনযাপন করি। তাতে আমার দিব্যি চলে যায়। যখনই কোনও ঘটনায় কোনও না-কোনও রাজনৈতিক দলের নাম উঠে আসে, তাকে নিয়ে উনি গলমন্দ করেন। আগেও করেছেন, এখনও করছেন। আমার প্রশ্ন, শোনা যায় উনি মাওবাদের সমর্থক, তাহলে কি উনি সব রাজনৈতিক দলের কর্মী তথা জনগণকে মাওবাদী হওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন?”

 

রুদ্র ও কাঞ্চন।

 

শুধু পরিচালক অনিকেত নয়, রুদ্রনীলের বিজেপি-ঘনিষ্ঠতা দেখে ক্ষুণ্ণ তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক। তিনি বলেন, “কী বলব, আমি তো বুঝতেই পারছি না। কীসের মেরুকরণ, কীসের কী? আমি তো আমার এত দিনের বন্ধুকে দেখে আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি। ও তো তৃণমূলের একটা পদেও ছিল। নীল আলোর গাড়ি করে ঘুরতো। তা সত্ত্বেও ওর কী প্রয়োজন পড়ল, আমি সত্যিই বুঝিনি।” তাঁর সংযোজন, “আমার ছোট মাথায় এত কিছু ঢুকছে না। আমার সঙ্গে ওর কথা হয়নি। আমি ফোন করিনি। করব কি না, জানি না। তবে ওর এই গোটা ব্যাপারটায় আমি ভীষণ শকড!”

প্রিয় বন্ধু কাঞ্চনের গোটা বক্তব্য শুনে রূদ্রনীল বললেন, “কাঞ্চন ভীষণ সৎ ছেলে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত নয়। এবং তা একেবারে পেশাগত কারণে। মানে থিয়েটার, ফিল্ম শুটিং, এসবের জন্য ও রাজ্যের পরিস্থিতির বিষয়ে ওয়াকিবহাল নয়। ও যদি চাল চুরি, ডাল চুরি, ত্রাণ চুরি, কাটমানির বিষয় জানত এবং আমার প্রতিবাদের কথা জানত, তাহলে আমি বিশ্বাস করি ও আমার সিদ্ধান্তকেই সমর্থন করত। আমি মনেপ্রাণে তা-ই বিশ্বাস করি।”