Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

ট্রোলবাহিনী তফাত্‍ যাও! ‘বেবি বাম্প’-এ জড়তা কাটছে সেলেব থেকে সাধারণের

মাতৃত্ব দারুণ ব্যাপার। তবে ওজন বেড়ে যাওয়া, বেখাপ্পা দেহ, তার বাইরে ও ভিতরে আরও পাঁচশো রকম বদল, ও সব আড়ালে থাকাই ভালো। তবে এই ভাবনাকে গত বেশ ক’বছর ধরে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যাচ্ছে হলিউড থেকে বলিউড।

ট্রোলবাহিনী তফাত্‍ যাও! ‘বেবি বাম্প’-এ জড়তা কাটছে সেলেব থেকে সাধারণের
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 09, 2021 | 12:30 PM

তেমন জুতসই হচ্ছিল না উপমাটা! ঠিক কী বললে রসিয়ে খোরাক করা যায়… নাহ, কিছুতেই মন ভরছে না ট্রোলবাহিনীর! অতঃপর মাহেন্দ্রক্ষণ! ইউরেকা! এতো পুরো রাক্ষুসে তিমি, ভাই! যাকে নিয়ে এ মন্তব্য, তিনি রাক্ষুসে কি না জানা নেই। তবে তিমি নন নিঃসন্দেহে। তিনি আসলে মাস ছয়েকের অন্তঃসত্ত্বা এক মহিলা। রীতিমতো স্বনামধন্য। নাম: কিম কার্দাশিয়ান। বলিহারি যাই কিম আপনার! কোন আক্কেলে এমন অবস্থায় আঁটোসাঁটো সাদা-কালো পোশাকে ক্যামেরার সামনে এলেন? নিউ ইয়র্কের সঙ্গে নারী-অধিকারের নাড়ির যোগ শতক-পুরনো বলেই কি এত স্পর্ধা?

বছর ছয়েক আগেকার ঘটনা। প্রশ্নটি সে সময়ে কেউ কিম কার্দাশিয়ানকে করেছিলেন কি না, জানা নেই। তবে তাঁকে নিয়ে ট্রোলবাহিনীর এমন খোরাকের কথা অনেকেরই জানা। আবার ক্ষেত্রবিশেষে উল্টোটাও শোনা গিয়েছিল। যেমন ধরুন, কেট মিডলটন। ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য হয়েও তির্যক মন্তব্য এড়াতে পারেননি। জর্জের জন্মের আগে কেটকে নিয়ে মুচমুচে শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপে এক ট্যাবলয়েড, IS SKINNY KATE TOO THIN TO BE PREGNANT? সাতসমুদ্দুর তেরো-নদীর পাড়ের এ সব গল্প না-হয় ছেড়েই দিন।

টলি-অভিনেত্রী মধুবনী গোস্বামীর অভিজ্ঞতাও কিছুটা এক রকম। নতুন অতিথির অপেক্ষায় দিন গুনছেন অভিনেত্রী। সেই ছবি মাঝেমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতেও দেন। জানালেন, সেখানেই ‘বাম্প শেমিং’ (Bump-Shaming) করা হয়েছে তাঁকে। কিন্তু কেন?উত্তরটা আমরা বেশ জানি, বেশিরভাগই মেনে চলি। মাতৃত্ব দারুণ ব্যাপার। তবে ওজন বেড়ে যাওয়া, বেখাপ্পা দেহ, তার বাইরে ও ভিতরে আরও পাঁচশো রকম বদল, ও সব আড়ালে থাকাই ভালো। তবে এই ভাবনাকে গত বেশ ক’বছর ধরে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যাচ্ছে হলিউড থেকে বলিউড। হালে তাতে সামিল টলিউডও।

তৈমুর হোক বা সদ্যোজাত দ্বিতীয় সন্তান, করিনা কাপুর খান যেমন এ ব্যাপারে রাখঢাকহীন। কিংবা ধরুন ‘বেবি বাম্প’ (Baby-Bump) নিয়ে ‘সান-কিস্ড’ অনুষ্কা শর্মার দুরন্ত ছবি। একই পথ নিয়েছেন অনুষ্কারই ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ ছবির সহ-অভিনেত্রী লিসা হেডন। শুধু তারকা কেন? আমজনতার মধ্য়েও যে মাতৃত্বকালীন ফোটোশুট (Maternity Photoshoot)-এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে, তা সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলে দিব্যি বোঝা যায়।কিন্তু প্রশ্ন হল, এগুলিকে কি সাবেকি মানসিকতার বদল বলে ধরা যেতে পারে নাকি এ-ও কোনও ট্রেন্ডের অন্ধ অনুসরণ মাত্র?

মনোবিদ সুদর্শনা দাশগুপ্তের মতে, সাধারণের মধ্যে মাতৃত্বকালীন ফোটোশুট (Maternity Photoshoot)-এর এই জনপ্রিয়তা তারকাদের দেখেই অনেকটা বেড়েছে। তবে এর একটি অন্য দিকও রয়েছে। কী রকম? সহজ উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন সুদর্শনা। বললেন, ‘‘ধরুন আমার চকোলেট খেতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু খাব কি না দ্বিধায় রয়েছি। এখন যদি দেখি, আমার কোনও বন্ধু চকোলেট খাচ্ছে, তা হলে আমার সেই ইচ্ছাটায় যেন সিলমোহর পড়ে যায়। এক্ষেত্রেও বিষয়টা অনেকটা এক রকম। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারকা তো বটেই, এমনকী বন্ধুবান্ধবদেরও দেখছি যে তারা ‘বেবি বাম্প’-এর ছবি দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে অন্যদের ইচ্ছেও বৈধতা পাচ্ছে।’’

বিশিষ্ট রেডিয়ো জকি ও রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রী বসুর মত অবশ্য খানিকটা আলাদা। তাঁর কথায়, ‘‘ডেলিভারির আগের দিন পর্যন্ত যদি অফিসের কাজ করতে পারি, অ্যাপ-ক্যাবে যাতায়াত করতে পারি, তা হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বেবি বাম্প’-এর ছবি দিতে অসুবিধা কোথায়?’’ মানেটা স্পষ্ট। ‘বেবি বাম্প’ নিয়ে কোনও জড়তা নেই তাঁর।

একসুর মধুবনীরও। বললেন, ‘‘গোটা প্রাণীজগতেই সন্তান জন্মের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়। জীবনের নানা পর্যায়ের মতো এটিও একটি পর্ব। যদি সেগুলির ছবি দিতে পারি, তা হলে এই সময়ের ছবি-ই বা নয় কেন?’’ এ ব্যাপারে ট্রোলবাহিনীকে স্রেফ কোনও পাত্তা দিতে নারাজ মধুবনী। আর শ্রী-র বার্তা, ‘‘এই ‘বেবি বাম্প’ স্বাভাবিক ব়্যাপার। তাই সেটি আড়ালে থাকবে না। এ নিয়ে সুবিধা হলে দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরান বা চোখ বন্ধ থাকুন। অযথা উল্টোপাল্টা মন্তব্য করবেন না।’’

এটিও ঘটনা যে আমাদের দেশের যা পরিস্থিতি, তাতে বেশিরভাগ হবু মায়ের কাছে ‘বাম্প শেমিং’ (Bump-Shamimg) ও নারী-স্বাধীনতার এ সব ভাবনা অনেক পরের কথা। কিন্তু মাতৃত্বকালীন মানসিক স্বাস্থ্য? সেটিও কি একেবারে পিছনের সারিতে রাখার মতো বিষয়? উত্তরটা যদি ‘না’ হয়, সেক্ষেত্রে কয়েকটি পরিসংখ্যানে চোখ বোলানো যাক। বছর ছয়েক আগের এক সমীক্ষা বলছে, হবু মায়েদের প্রায় ৯৪ শতাংশকেই ‘বাম্প শেমড’ (Bump-Shamded) হতে হয়।

কিম কার্দাশিয়ানের মতো না হলেও অদ্ভূত কিছু প্রশ্ন হামেশাই শুনতে হয় তাঁদের। যেমন ধরুন, ‘বাবা রে, তোমার তো বেশ ওজন বেড়েছে’, ‘তোমার ট্রিপলেট হবে না তো?’ কী বললেন? ও সব কথার কথা? হতে পারে। বেশিরভাগ হবু মায়েরা ধরেই নেন, হরমোনের ওঠানামা, শারীরিক অস্বস্তি-সমস্যার পাশাপাশি মাতৃত্বের এ সব ফ্রি-গিফট তাঁদের পেতে হবে। সে মতো প্রস্তুতও থাকেন তাঁরা। কিন্তু সকলের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি এত সহজ হয় না, তা স্পষ্ট মনোবিদ সুদীপা বসুর কথায়। বললেন, ‘‘অনেকে যেমন ফিগারের ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত সচেতন হন। এমনকী সন্তানজন্মের সময়ও তাঁদের কাছে নিজের ওজন, বডি শেপ, এগুলি ঢের বেশি গুরুত্ব পায়।’’

এ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক এক অভিজ্ঞতার কথাও জানালেন সুদীপা। সন্তানজন্মের পর দিনই এক মা সুদীপাকে ফোন করেছিলেন। গলায় খুশির আমেজ স্পষ্ট। কারণ?এক ধাক্কায় ওজন অনেকটাই কমে গিয়েছে তাঁর। তবে আরও কমাতে চান, তাও যত দ্রুত সম্ভব। এ ধরনের ক্ষেত্রে ‘বাম্প শেমিং’ (Bump-Shamimg)-এর প্রভাব তীব্র হতে পারে। মানসিক ধকলের অনুভূতি বাড়তে পারে। তবে সাধারণত এ সবই সামলে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে হবু মায়েদের।

তা হলে কী নিদান দিচ্ছেন তাঁরা? যেমন চলছে চলুক? সুদীপার মতে, এক্ষেত্রে বদলটা দুপক্ষেরই প্রয়োজন। হবু মায়েদেরও যেমন এই মন্তব্যে তেমন পাত্তা দেওয়া কাঙ্খিত নয়, তেমন বাকিদেরও বুঝতে হবে মাতৃত্ব (Motherhood)-এর অভিজ্ঞতা এমনিতেই বড় কঠিন। তাই এ ধরনের তির্যক মন্তব্য, ‘বাম্প শেমিং’ (Bump-Shamimg) করে তা কঠিন করে তোলা মানবিক তো নয়ই, যুক্তিবুদ্ধিরও বাইরে।

গ্রাফিক্স এবং অলঙ্করণ- অভীক দেবনাথ