কবরের মাটি গায়ে মেখে রফি-পুজো কলকাতার বাচ্চুর

দক্ষিণ কলকাতার ঝিল রোডের বাসিন্দা শিবদাস ব্যানার্জি,পরিচিত বাচ্চু নামে। তালবাদ্য শিল্পী হিসাবে জীবন শুরু করেন তিনি। গান বাজনা নিয়েই কেটেছে জীবন।

কবরের মাটি গায়ে মেখে রফি-পুজো কলকাতার বাচ্চুর
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 31, 2021 | 8:31 AM

নন্দন পাল:  কখনও মেঘে লুকোচুরি করা চাঁদ, কখনও খোলা আসমান, আবার কখনও মস্তি ভরা জঙ্গুলে উদ্দামতা। মহম্মদ রফির কন্ঠ মানেই দুঃখ আর সুখ দুইই শ্রুতি মধুর, সুখকর। হাজারেরও ওপর বলিউডি গানে প্লেব্যাক করা রফির গানে বুঁদ আসমুদ্র হিমাচল। ৩১ জুলাই মহম্মদ রফির ৪১ তম মৃত্যুবার্ষিকী। আজ রইল আমাদের শহরের এক রফি ভক্তের গল্প যিনি তাঁর ঠাকুরঘরে দেবতার পাশাপাশি পুজো করেন মহম্মদ রফির।

দক্ষিণ কলকাতার ঝিল রোডের বাসিন্দা শিবদাস ব্যানার্জি,পরিচিত বাচ্চু নামে। তালবাদ্য শিল্পী হিসাবে জীবন শুরু করেন তিনি। গান বাজনা নিয়েই কেটেছে জীবন। প্রবীণ এই মানুষটি তাঁর বাড়ির পুজোর আসনে দেবী দেবতার পাশাপাশি প্রতিদিন দেবজ্ঞানে পুজো করেন বলিউডের প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত শিল্পী মহম্মদ রফিকে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি বার্নপুরের একটি অনুষ্ঠানে বোনের সঙ্গে তালবাদ্য বাজাতে গিয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন মহম্মদ রফিও। সেখানেই মহম্মদ রফির সঙ্গে প্রথম পরিচয়। তারপর প্রায় দুই দশক রফির সান্নিধ্য পেয়েছিলেন শিবদাস ব্যানার্জি। এরফলে ‘রফি সাব’ এর সঙ্গে গড়ে ওঠে তাঁর এক দারুন সম্পর্ক। তাই মহম্মদ রফি বাংলায় অনুষ্ঠান করতে এলেই ডাক পড়ত শিবদাসের। একাধিকবার মহম্মদ রফির ব্যাণ্ডের খারাপ হয়ে যাওয়া সরঞ্জামও সরিয়ে দিয়েছেন বাচ্চু।

বাংলার রসগোল্লা, দই আর আমসত্ত্ব খুব পছন্দের ছিল মহম্মদ রফির। কলকাতায় এলেই ৪ -৫ কেজি করে আমসত্ত্ব কিনে নিয়ে যেতেন রফি সাব। আর রফিকে সেই সব মিষ্টি একেবারে এয়ারপোর্টে গিয়ে বিমানে তুলে দিয়ে আসতেন শিবদাস। মহম্মদ রফির মুম্বাইয়ের বাড়িতেও একাধিকবার গিয়েছেন শিবদাস। চেহারায় রোগা পাতলা শিবদাসকে দেখে রফি পকেট থেকে পেস্তা আর কাজু বাদাম বের করে হাতে তুলে দিয়েছিলেন। কলকাতার পার্ক হোটেলে সারাদিনের পর ক্লান্ত শিবদাসকে মুখের সামনে রফি সাব তুলে ধরেছিলেন নিজের হাতে তৈরি স্যাণ্ডুইচ। এতটাই আন্তরিক ছিল তাঁর সঙ্গে রফির সম্পর্ক। বাংলায় রফির অনুষ্ঠান হলেই হাজির থাকতেন শিবদাস। স্টেজের কাছে সাউন্ড কন্ট্রোল সিস্টেমের কাছ থেকে বসে অনেকবার দেখেছেন তাঁর প্রিয় গায়কের অনুষ্ঠান। আর অনুষ্ঠানের আগে গানের তালিকা তৈরি করবার সময়েও হোটেলের ঘরে থেকেছেন বাচ্চু। বেলেঘাটায় একবার শিবদাস ব্যানার্জি আয়োজন করেছিলেন ‘মহম্মদ রফি নাইট’। রফি সাবের অনুমতি নিয়ে সেই অনুষ্ঠানে রফির গানে ট্রিপল কঙ্গো বাজিয়েছিলেন শিবদাস। আজও সেরা প্রাপ্তি সেই স্মৃতি।

শিবদাস ব্যানার্জি বলেন, “রফি সাব আমার কাছে ভগবান, পয়গম্বর। তাই বাড়ি থেকে বেরোবার সময়ে রোজ আমি যখন ঠাকুরকে ধুপ দেখাই ওনাকেও ধুপ দিয়ে পুজো করি “। ১৯৮০ র ৩১ জুলাই যখন খবর এল মহম্মদ রফি প্রয়াত তখন মুম্বাই গিয়ে রফির শেষকৃত্যে তাঁর পরিবারের পাশে থাকেন শিবদাস। শেষকৃত্যের পর মহম্মদ রফির সমাধির মাটি বিমানে নিয়ে ফেরেন কলকাতায়। তারপর সেই মাটি গায়ে মেখে তাঁর ভগবানকে শেষ শ্রদ্ধা জানান শিবদাস। বন্ধু আর পরিচিতরা বলেছিলেন “কবরের মাটি গায়ে মাখলে ভুতে ধরবে !” শিবদাস বলেছিলেন, “এমন ভুত যদি আমাকে ধরে তাহলেও তো পুণ্য, উনি তো আমার ঈশ্বর !” এভাবেই রফি অনুরাগে সিক্ত আজও শিবদাস ব্যানার্জি ।