Sumitra Sen Death: কেরিয়ারের প্রথম গানের অ্যালবামে সুমিত্রাদিকেই গাইড হিসেবে পেয়েছিলাম: শ্রীকান্ত আচার্য

Srikanta Acharya: দীর্ঘদিন বার্ধক্য়জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন সুমিত্রা সেন। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২০ ডিসেম্বর থেকে। নতুন বছর ১ জানুয়ারি তাঁকে বাড়িয়ে নিয়ে আসে পরিবার। ২ জানুয়ারি বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

Sumitra Sen Death: কেরিয়ারের প্রথম গানের অ্যালবামে সুমিত্রাদিকেই গাইড হিসেবে পেয়েছিলাম: শ্রীকান্ত আচার্য
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 03, 2023 | 12:45 PM

মঙ্গলবার ভোর রাতে প্রয়াত হয়েছেন সঙ্গীত শিল্পী সুমিত্রা সেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বাংলার সঙ্গীত জগৎ। পরবর্তী প্রজন্মের বহু শিল্পী কেরিয়ারে ছিল সুমিত্রাদেবীর অবদান। আজ বারবারই সেই সব কথা মনে পড়ছে তাঁদের। সেই শিল্পীদের একজনের নাম শ্রীকান্ত আচার্য। TV9 বাংলা শুনল তাঁরই কথা।

গায়িকা সুমিত্রা সেন সম্পর্কে শ্রীকান্ত আচার্য যা বললেন:

“৫০ দশকের শেষে কিংবা ৬০টের দশকের শুরুতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ে। বেতারে প্রচারিত হত বিভিন্ন শিল্পীদের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত। নানা অনুষ্ঠান, রবীন্দ্র জন্মোৎসব কিংবা ২২শে শ্রাবণ উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথের গানের শ্রোতা বেড়েছিল। একেকজন শিল্পী রবীন্দ্রসঙ্গীতের একেক ঘরানা তৈরি করেছিলেন সে সময়। যেমন আমরা জানি সুচিত্রা মিত্র এবং শান্তিদেব ঘোষকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্টাইল তৈরি হয়েছিল। দেবব্রত বিশ্বাসকে অনুসরণ করে একটা ঘরানা তৈরি হয়েছিল। সেই সব ঘরানার পাশাপাশি আমার মনে হয়েছে সুমিত্রাদি সবসময়ই একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে স্বতন্ত্র থেকেছিলেন। খুব বেশি গমগম করতেন না। কিন্তু তাঁর উপস্থিতি ছিল স্নিগ্ধ।

সুমিত্রাদির গায়কির মধ্যে নমনীয়তা ছিল। রবীন্দ্রসঙ্গীতের ছাত্র হিসেবে আমি তাঁর গান অনেক ফলো করেছি। একটা সময় তিনি অনেক আধুনিক গানও গাইতেন। মৌলিক গান গেয়েছেন। এই সব কিছুর প্রভাব তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়াকে ম্যানারিজ়ম মুক্ত করেছিল। অসম্ভব সুরেলা কণ্ঠস্বর ছিল সুমিত্রাদির। অনেক ছাত্রছাত্রী তৈরি করেছিলেন তিনি। রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি ভালবাসা, রবীন্দ্রসঙ্গীতকে ঠিক মতো গাওয়া, রবীন্দ্রসঙ্গীতকে ভালবেসে গাওয়া। কোন জায়গা থেকে রবীন্দ্রনাথের গানকে দেখতে হবে, বুঝতে হবে – খুব সরল সোজাসাপ্টা অ্যাপ্রোচে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে কীভাবে বুঝতে হবে, সেটা তিনি তাঁর ছাত্রছাত্রীদের সুন্দরভাবে শিখিয়েছিলেন বলে আমার মনে হয়। সে প্রমাণ অনেক আছে।

১৯৯৬ সালে যখন প্রথম চাকরিবাকরি ছেড়ে দিই এবং গান গাইব বলে খুব হটকারি সিদ্ধান্ত নিই, তখন প্রথম যে কোম্পানির সঙ্গে আমার কথা হয় এবং তাঁরা প্রথম যে রেকর্ডিং করার কথা জানান, আমি তাঁদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হই, সেই অ্যালবামটি হল একটি রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম। সেই অ্যালবমের নাম ছিল ‘হে বন্ধু, হে প্রিয়’। কোম্পানির কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি ট্রেনার হিসেবে কাউকে চাই কি না। সে সময় আমি পেয়েছিলাম সুমিত্রা সেনকে। আমি ভাবতেই পারিনি এই রকম একটা সুযোগ, এরকম একটা ফেভার আমি পাব।

একেবারে আনকোড়া নতুন শিল্পী ছিলাম। সুমিত্রা সেন! যাঁকে দূর থেকে দেখেছি, শ্রদ্ধা করেছি, যাঁর গান শুনে বড় হয়েছিল, অ্যালবাম করার সময় তিনি আমার গাইড হিসেবে থাকবেন, পরিচালক হিসেবে থাকবেন, সেটা আমার কাছে বিরাট বড় পাওয়া ছিল। মনে আছে, ভয়-ভয় গিয়েছিলাম তাঁর বাড়িতে। দেখেছিলাম স্নিগ্ধ পার্সোন্যালিটির একজন মানুষ। মাতৃসুলভ যাঁকে বলে। প্রথম মুহূর্ত থেকে কোনও জড়তাই আমি লক্ষ্য করিনি। আদর করে প্রতিটি গান আমাকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। তাই আজ সুমিত্রাদি যখন চলে গেলেন, ঠিক পাঁচ মাস আগে কলকাতার একটি ক্লাবে সুমিত্রাদির বড় মেয়ে ইন্দ্রাণীদির একটি বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে সুমিত্রাদির সঙ্গে শেষ দেখা হয় আমার। তখনও সুন্দর সুমিত্রাদিকেই দেখেছিলাম আমি। মনে হয় খুবই দ্রুত শরীরটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।”

দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন সুমিত্রা সেন। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২০ ডিসেম্বর থেকে। নতুন বছর ১ জানুয়ারি তাঁকে বাড়িয়ে নিয়ে আসে পরিবার। ২ জানুয়ারি বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।