মা জানাল রাজকুমার রাও আমার পোস্ট শেয়ার করছে, একে একে স্মৃতি ইরানি, অনুরাগ কাশ্যপ… সব বদলে গেল: যশরাজ মুখাটে

ইনস্টাগ্রামে র‍্যান্ডমলি একটি ভিডিয়ো আপলোড করে ফোন পাশে রেখে অন্য কাজ করছিলেন বছর ২৫-এর মিউজ়িশিয়ান। হঠাৎ করেই যশরাজ মুখাটে (Yashraj Mukhate) দেখলেন, মা ফোন করেছেন। মা বললেন, রাজকুমার রাও ওঁরর ভিডিয়োতে কমেন্ট করেছেন। তারপর?

মা জানাল রাজকুমার রাও আমার পোস্ট শেয়ার করছে, একে একে স্মৃতি ইরানি, অনুরাগ কাশ্যপ... সব বদলে গেল: যশরাজ মুখাটে
গ্রাফিক্স: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Dec 14, 2022 | 6:28 PM

বিহঙ্গী বিশ্বাস 

স্টারকিডের তকমা নেই। লবিবাজির সুযোগ নেই। সোশ্যাল মিডিয়া ফেমাস করেছে তাঁকে। নাম যশরাজ মুখাটে (Yashraj Mukhate)। বয়স ২৫। হঠাৎ করে নাম শুনলে না-ও চিনতে পারেন, কিন্তু তাঁর রয়েছে এক আশ্চর্য ক্ষমতা। যে কোনও ডায়লগকে অনায়াসেই কারুকার্য করে গান আর তারপর সেখান থেকে মিউজ়িক ভিডিয়ো বানিয়ে দিতে পারেন তিনি। এই যেমন ধরুন ‘রসোড়ে মেঁ কওন থা’, ‘সাডা কুত্তা টমি’, আবার হালফিলে ‘পাওরি হো রহি হ্যায়’… সেলেব থেকে সাধারণের বলা এই সব সংলাপই আজ যশরাজের ক্যারিশ্মায় ‘গান’, আরও নির্দিষ্ট করে বললে, ডায়লগ ম্যাশ-আপ (dialogue mash-up) হয়ে লোকের মুখে মুখে। রণবীর সিং (Ranveerr Singh) হোক অথবা রাজকুমার রাও (Rajkumar Rao)–বলিউড আজ এক ডাকে চেনে মধ্যবিত্ত পরিবারের একদা ‘অখ্যাত’ এই যুবককে। সুদূর মুম্বই থেকে TV9 বাংলার সঙ্গে আড্ডা দিলেন যশরাজ। ইন্ডিয়ান আইডল-এ রিজেকশন থেকে মা-বাবার গল্প… জানালেন সবটাই।

গত বছর অগস্ট মাসে ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ার ছিল ন’ হাজার। আর এখন কুড়ি লক্ষ। সেই কুড়ি লক্ষের মধ্যে আবার শ্রেয়া ঘোষাল, রণবীর সিংও রয়েছেন। বিশ্বাস হয়? (হাসি) একটা অভাবনীয় অনুভূতি। তবে সত্যি কথা বলতে কি, এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন আমি। আগে যখন কম সংখ্যক মানুষ কাজ দেখতেন, তাঁরা যেহেতু অনেকেই আমার পরিচিত, ভাল রিভিউ-ই বেশি আসত। এখন এত মানুষ দেখছেন। সেলিব্রিটিরাও রয়েছেন প্রোফাইলে। তাই দায়িত্বটা অনেক বেশি। কিছু আপলোড করার আগেও তাই ভাবতে হয়। তবে হ্যাঁ, এই গোটা ব্যাপারটা উপভোগ করছি নিঃসন্দেহে।

Yashraj Mukhate on the reactions of people

নিজস্ব চিত্র

হঠাৎ করেই একদিন দেখলেন আপনি সোশ্যাল মিডিয়া স্টার হয়ে গিয়েছেন। টুইটারে ট্রেন্ড করছেন। ঠিক কী হয়েছিল সে দিন? গত দু’তিন বছর ধরে যা করে এসেছি, সেরকমই একটি ভিডিয়ো (‘রাশি… কুকার মেঁ সে চনে…’) ইনস্টাগ্রামে র‍্যান্ডমলি আপলোড করে ফোন পাশে রেখে অন্য কাজ করছিলাম। হঠাৎ করেই দেখি মায়ের ফোন। মা বলছে, রাজকুমার রাও (Rajkumar Rao) নাকি আমার ভিডিয়োতে কমেন্ট করেছেন। আমি ভেবেছিলাম ফেক প্রোফাইল। গিয়ে দেখলাম ভেরিফায়েড। এর পরেই দেখি গায়িকা শাল্মলি খোলগড়ে (Shalmali Kholgade) মেসেজ করেছেন। হঠাৎ করে আমার ফলোয়ার সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন: ৩৩ বছর সুরে ভাসিয়ে ছিঁড়ে গেল গিটারের ‘স্ট্রিংস্’

তারপর? এ ভাবেই সে দিনটা কাটল। পরের দিন দেখি ৯ হাজার থেকে ফলোয়ার একেবারে ৫০ হাজার। ভাবলাম এ বার হয়তো থেমে যাবে। এর পর আবারও একটা ধামাকা। স্মৃতি ইরানি তাঁর পেজ থেকে শেয়ার করলেন। অনুরাগ কাশ্যপ শেয়ার করলেও। ওঁদের ফ্যানেরাও আমার প্রোফাইল ঘুরে দেখতে এসে দেখলেন ছেলেটা তো এমন ভিডিয়ো আগেও বানিয়েছে। একে-একে পুরনো ভিডিয়োগুলোও ভাইরাল হতে শুরু করল।

Yashraj Mukhate on Anurag Kashyap sharing his mash-up video

নিজস্ব চিত্র

তার মানে বলাই যায় লকডাউন আপনার কাছে আশীর্বাদ… (একটু ভেবে) হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। যেমনটা বললাম, দু’তিন বছর আগে থেকেই কিন্তু ওই রকম কনটেন্ট আমি বানিয়ে চলছি। নিজের ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করেছিলাম ২০০৯-এ। তখন কিন্তু গোটা ব্যাপারটা নজরে পড়েনি কারও। লকডাউনে টাইমিংটা ম্যাচ করে গিয়েছিল। সে সময় মানুষ গৃহবন্দী। হাতে অনেক সময়। একটা দীর্ঘ সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটছিল তাঁদের। মানুষ একটু অন্য রকমের কনটেন্ট খুঁজছিল। ফ্রেশ কন্টেন্ট, যা তাঁরা আগে দেখেননি। সেটাই হয়তো কোথাও গিয়ে ক্লিক করে গেল।

বলিউডের ফেভারিটিজ়ম, স্টারকিড কনসেপ্টের থেকেও সোশ্যাল মিডিয়া এবং নেটিজ়েনদের ক্ষমতা অনেক বেশি–মানছেন তা হলে? মানছি আবার একই সঙ্গে মানছিও না। দু’টোই একে-অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া এবং বলিউড সিনেমা–দু’টোর দর্শক কিন্তু অনেকাংশেই আলাদা। তাই দু’জনের এ ভাবে তুলনা চলে না।

Yashraj Mukhate on celebrities following his Instagram profile

নিজস্ব চিত্র

নিজেকে যশরাজ তবে কী বলবেন? সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশন নাকি আপকামিং বলি কম্পোজ়ার? (হাসি) ইঞ্জিনিয়র। আমি তিন বছর আগে পুনে থেকে ইঞ্জিনিয়রিং পাশ করেছি।

আর গান? গানের পরিবেশ ছোট থেকেই বাড়িতে ছিল। বাবা নিজেও গান গাইতেন।

এই যে ডায়লগ নিয়ে খেলা, সেটাকে মিম কন্টেণ্ট হিসেবে দেখানো, এই আইডিয়াটা এল কোথা থেকে? উমমম… ডাব শর্মা বলে একজন শিল্পীর থেকে প্রাথমিক আইডিয়াটা পেয়েছিলাম। দু’বছর আগে একটা র‍্যালির কিছু ডায়লগ নিয়ে উনি এমন একটা কাজ করেছিলেন। সেই কাজ পরে ‘গাল্লি বয়’ ছবিতেও ব্যবহার করা হয়েছিল। সেখান থেকেই আইডিয়া নিয়ে নিজের মতো টুইস্ট যোগ করে, তাতে গান-ভোকাল মিশিয়ে আমি বানাতে শুরু করি।

Yashraj Mukhate on the phone call of his mother

নিজস্ব চিত্র

আপনি অন্যকে নিয়ে মিম বানান। অথচ আপনার কমেন্ট সেকশনে আপনাকে নিয়ে ট্রোল তো সেভাবে চোখে পড়ে না! আমায় নিয়ে ট্রোলিং হয়নি একেবারেই সেটা বলব না। আগে যখন আমার দর্শক কম ছিল, আমি তাঁদের চাওয়া-পাওয়া সম্পর্কে জানতাম। সে রকম কন্টেন্টই দেওয়ার চেষ্টা করতাম। এখন যখন দর্শক বেড়ে গিয়েছে, সবার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ তো আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, এটা ঠিক, ৯৯% শতাংশ ভাল কমেন্ট পেয়েছি এখনও পর্যন্ত। কিন্তু ওই বাকি ১% বলেছেন, “কী সব আজেবাজে গান বানাও”, “ভীষণ রিপিটেটিভ”, “সিরিয়াস মিউজ়িক না বানিয়ে মিম করে কিচ্ছু হবে না…” ইত্যাদি।

ওই ১%-এর সূত্র ধরেই প্রশ্ন, এই ডায়লগ ম্যাশ-আপের কারণে আপনি কোথাও গিয়ে টাইপকাস্ট হয়ে যাচ্ছেন না কি? এরপর কোনও দিন যদি সিরিয়াস মিউজিক কম্পোজ় করতেও যান, ওই ৯৯% তো রুষ্ট হতে পারেন…

অনেকেই ভাবেন এই ডায়লগ ম্যাশ-আপ বানানোর জন্য হয়তো স্কিলের প্রয়োজন হয় না। তাঁদেরকে বলি সিরিয়াস মিউজ়িক বানানোর জন্য যে ক্রিয়েটিভ মাইণ্ড, স্কিল আমায় দিতে হবে, এক্ষেত্রেও কিন্তু তাই… আমি বিশ্বাস করি গুড কন্টেন্টের থেকেও রিলেটেবল কন্টেন্ট অনেক বেশি আকর্ষণীয়। একই সঙ্গে এটাও বিশ্বাস করি সেই রিলেটেবল কন্টেন্টকে ক্রেডিবল বানাতে হবে। আমি একটা বেশ উচ্চমানের সিরিয়াস গান বানালাম, অথচ মানুষ তার সঙ্গে নিজেকে রিলেটই করতে পারল ন…সেটায় তো লাভ নেই।

Yashraj Mukhate on how lockdown helped his music become popular and viral

নিজস্ব চিত্র

সাফল্যের গল্প তো শুনলাম, জীবনে ব্যর্থতা এসেছে? ব্যর্থতা বলা যাবে কি না জানি না, তবে কয়েক বছর আগে বাবা-মা’র জোরাজুরিতে ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এর অডিশন দিতে গিয়েছিলাম। সারাদিনের শেষে সন্ধে বেলা ডাক এসেছিল। প্রথম রাউণ্ডে পাঁচ জনের সঙ্গে আমায় দাঁড় করিয়ে দিল। আমি জাস্ট গানের প্রথম শব্দটা বলেছি, তিন সেকেন্ডের মধ্যে আমায় বলা হয় অডিশন শেষ। তুমি সিলেক্ট হওনি। তিন সেকন্ডে ওঁরা কী বুঝেছিলেন, ওঁরাই জানেন।

যশরাজ যাঁদের কাছে আইডল, সেই সব ইয়ং কম্পোজ়ারদের কী বলবেন?

পৃথিবীটা এখন খুব ছোট। তোমাদের যেটা বেস্ট, যেটা ইউনিক ধারাবাহিকভাবে আপলোড করে যেও সোশ্যাল মিডিয়ায়। আজ না হোক কাল, নোটিসড হবেই। আমারও কিন্তু সব একদিনে হয়নি। আবারও মনে করিয়ে দিই ইউটিউব চ্যানেলটা খুলেছিলাম ২০০৯ সালে। তাই লেগে থাকো, সাফল্য আসবেই।