ভারতের প্রথম মহিলা শিক্ষিকা সাবিত্রীবাঈ ফুলে, মেয়েদের প্রথম স্কুলও গড়েছিলেন তিনিই
১৮৪৮ সালে মাত্র ৯ জন মেয়েকে নিয়ে প্রথম স্কুল শুরু করেছিলেন সাবিত্রীবাঈ। নিজেই পড়াতেন মেয়েদের।
সাবিত্রীবাঈ ফুলে। ভারতের প্রথম মহিলা শিক্ষিকা তিনি। এ দেশে তিনিই প্রথম মেয়েদের জন্য আলাদা করে স্কুল খুলেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন সাবিত্রিবাঈয়ের স্বামী জ্যোতিরাও ফুলে। মহিলাদের জন্য সুষ্ঠু সমাজ গড়ার নেশায় বুঁদ সাবিত্রীবাঈ অনেক আন্দোলনেরই কাণ্ডারী ছিলেন। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের চোখে চোখ রেখে মহিলাদের শিক্ষার জন্য লড়াইয়ের পাশাপাশি জাতপাত-কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছিলেন তিনি। মহারাষ্ট্রের সাবিত্রীবাঈ ছিলেন শত শত মহিলার অনুপ্রেরণা। বাল্যবিবাহ রুখে মেয়েদের শিক্ষার জগতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু মহিলাদের জন্য ন্যায়ের লড়াইয়ে সফল হলেও অসুখের কাছে হার মেনেছিলেন সাবিত্রীবাঈ। দেশের হাজার হাজার মহিলার প্রার্থনাও তাঁর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারেনি। মাত্র ৬৬ বছর বয়সে মহামারী প্লেগ রোগে মৃত্যু হয় তাঁর। আজ তাঁর ১২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। শতবর্ষ পার হলেও ভারতীয় সমাজে নারীকল্যাণের ক্ষেত্রে সাবিত্রীবাঈয়ের অবদান ভোলেননি কেউই।
তবে এত আন্দোলনের পুরোধা সাবিত্রীবাঈয়ের জীবন কেমন ছিল? এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক তাঁরই জীবনের বিভিন্ন অজানা গল্প।
১। মাত্র ১০ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল ছোট্ট সাবিত্রীর। স্বামী জ্যোতিরাওয়ের বয়স তখন ১৩ বছর। এত অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণেই মধ্যে সমস্যাগুলো আরও ভাল ভাবে বুঝতে পেরেছিলেন সাবিত্রী-জ্যোতিরাও। আর তাই বাল্যবিবাহ রুখে মেয়েদের পড়াশোনা শেখানোর পরামর্শ দিতেন এই মারাঠি দম্পতি।
২। ভারতের প্রথম মেয়েদের স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সাবিত্রীবাঈ এবং জ্যোতিরাও ফুলে। এরপর এরকম আরও ১৮টি স্কুল খুলেছিলেন তাঁরা। লক্ষ্য ছিল একটাই। সব মেয়েরা যেন লেখাপড়ার সুযোগ পাই। বড় হয়ে যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে নিজের অধিকার বুঝে নিতে শেখে।
৩। ১৮৪৮ সালে মাত্র ৯ জন মেয়েকে নিয়ে প্রথম স্কুল শুরু করেছিলেন সাবিত্রীবাঈ। নিজেই পড়াতেন মেয়েদের। ছোট মেয়েরা যাতে স্কুল পালিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে না দেয়, সেজন্য প্রতিনিয়ত তাদের উৎসাহ দিতেন। এমনভাবে পড়াতেন যে সাবিত্রীবাঈয়ের স্কুলে পড়তে আসতে ভাল লাগত বাচ্চাদের।
৪। মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার নাইগাঁওতে জন্ম সাবিত্রীর। নিজে ছিলেন চাষি পরিবারের সন্তান। সাধারণ পরিবারে জন্ম হলেও সাবিত্রী বড় হয়েছিলেন এক অভূতপূর্ব আদর্শ নিয়ে। বিধবাদের মাথা কামিয়ে দেওয়ার অর্থাৎ চুল কেটে ন্যাড়া করে দেওয়ার চল ছিল একসময়। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
৫। যেসব মহিলাদের ধর্ষণ হতো এবং তাঁরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে পরিবার ফিরিয়ে নিত না, সেই অসহায় মহিলাদের জন্য হাসপাতাল (কেয়ার হাব) খুলেছিলেন সাবিত্রীবাঈ। নিজে দায়িত্ব নিয়ে ওই মহিলাদের সন্তান জন্মানোর ব্যবস্থাও করতেন তিনি।
৬। পুত্রসন্তান দত্তক নিয়েছিলেন সাবিত্রী আর জ্যোতিরাও। ছেলের নাম রেখেছিলেন যশোবন্ত। এই ছেলের সহযোগিতায় ১৮৯৭ সালে প্লেগ রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য একটি ক্লিনিক খোলেন সাবিত্রী। সেখানেই এক রোগীর পরিষেবা করতে গিয়ে নিজেও প্লেগে আক্রান্ত হন। মহামারী প্রাণ কেড়ে নেয় তাঁর।
৭। নিজের বাড়িতে তৈরি করেছিলেন বিশাল কুয়ো। সমাজ যাঁদের অস্পৃশ্য বলে দূরে সরিয়ে দিত, তাঁদেরকেই কাছে টেনে নিতেন সাবিত্রী। ওই কুয়ো থেকেই জল নিতেন তাঁরা।
৮। স্বামী জ্যোতিরাওয়ের সঙ্গে মিলে গড়ে তুলেছিলেন ‘সত্যশোধক সমাজ’। ইন্টার-কাস্ট ম্যারেজ, যা সমাজ মেনে নিত না, সেই বিয়েই করাতেন সাবিত্রী আর জ্যোতিরাও। থাকতেন না পুরোহিত। থাকত না পণের বোঝা।
৯। ১৯৯৮ সালে সাবিত্রীবাঈকে সম্মান জানিয়ে ডাকটিকিট বের করেছিল ভারত সরকার।