এতটুকু মরচে না-ধরা ‘টিনের তলোয়ার’-এর গোল্ডেন জুবিলিতে TV9 বাংলার বিশেষ নিবেদন ‘টিনের তলোয়ার ৫০’
একটি সাক্ষাৎকারে সত্য়জিৎ-জীবনীকার অরূপ মুখোপাধ্যায় ‘রে’-কে অনুরোধ করেছিলেন, ‘‘মানিকদা, চলচ্চিত্র ও থিয়েটার তো খুব কাছাকাছি শিল্প মাধ্যম। আপনি ভারতীয় থিয়েটার সম্পর্কে কিছু বলুন।’’ উত্তরে সত্যজিৎ বলেছিলেন, ‘‘তুমি ‘টিনের তলোয়ার’ দেখেছ? ওই হল ভারতীয় থিয়েটারের হাইট।
‘ভারতীয় থিয়েটারের হাইট’ বলে যে নাটককে অভিহিত করেছিলেন অস্কারজয়ী সত্যজিৎ রায়, সেই ঐতিহাসিক নাটক ‘টিনের তলোয়ার’-এর বয়স আজ ৫০ বছর। তবে বয়সের ভারে সেই ‘টিনের তলোয়ার’-এ মরচে ধরেনি এতটুকুও। ৫০ পেরিয়ে যাওয়া সেই যুগান্তকারী নাটকের আবহমান আবেদনকে আরও একবার বাঙালির মননে, সংস্কৃতিতে ফিরিয়ে আনতে TV9 বাংলার বিশেষ নিবেদন ‘টিনের তলোয়ার ৫০’। আজ, শনিবার রাত ১০টায় যা সম্প্রচারিত হল TV9 বাংলার পর্দায়।
উৎপল দত্ত রচিত, নির্দেশিত, অভিনীত ‘টিনের তলোয়ার’ নাটক ‘পিপলস লিটল থিয়েটার’-এর পরিবেশনায় প্রথম মঞ্চস্থ হয় ১৯৭১ সালের ১২ অগস্ট, রবীন্দ্রসদনে। তারই সূত্র ধরে ৫০ বছর পর আজ, শনিবার TV9 বাংলার পরিবেশনায় ‘টিনের তলোয়ার ৫০’-এর সম্প্রচার হল টেলিভিশনে।
১৯৭১-এর ১২ অগস্ট ‘টিনের তলোয়ার’-এর প্রথম শোয়ের কয়েকজন সাক্ষী আজ উপস্থিত ছিলেন TV9 বাংলার টিনের তলোয়ার-গোল্ডেন জুবিলিতে: বীরকৃষ্ণ দাঁ (মহাধনী) সমীর মজুমদার, ময়না (রাস্তার মেয়ে) ছন্দা চট্টোপাধ্যায় ও প্ৰিয়নাথ (ইয়ংবেঙ্গল) অসিত বসু।
‘টিনের তলোয়ার’-এর পটভূমি ১৮৭৬-এর কলকাতা-চীৎপুর, বৌবাজার এবং শোভাবাজারস্থ নাট্যশালা। ঊনবিংশ শতাব্দীর এক বাস্তব চিত্র এই নাটকে তৎকালীন সমাজের নিপীড়ন, নিষ্পেষণের ছবি তাঁর সুনিপুণ রচনা ও পরিচালনার মাধ্যমে এঁকেছিলেন উৎপল দত্ত। তাপস সেনের আলো, মনু দত্তের মঞ্চসজ্জা, প্রশান্ত ভট্টাচার্যের সঙ্গীত পরিচালনা ‘টিনের তলোয়ার’কে আক্ষরিক অর্থেই উন্নীত করেছিল ক্ল্য়াসিকে। একটি সাক্ষাৎকারে সত্য়জিৎ-জীবনীকার অরূপ মুখোপাধ্যায় ‘রে’-কে অনুরোধ করেছিলেন, ‘‘মানিকদা, চলচ্চিত্র ও থিয়েটার তো খুব কাছাকাছি শিল্প মাধ্যম। আপনি ভারতীয় থিয়েটার সম্পর্কে কিছু বলুন।’’ উত্তরে সত্যজিৎ বলেছিলেন, ‘‘তুমি ‘টিনের তলোয়ার’ দেখেছ? ওই হল ভারতীয় থিয়েটারের হাইট। আমি শিশির ভাদুড়িকে মঞ্চে অভিনয় করতে দেখেছি। খুবই প্রতিভাশীল অভিনেতা। কিন্তু তখন নাটক ছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক। পরে আইপিটি-র যুগে বিজনবাবুরা নতুন ধরনের কাজ শুরু করেন। দারুণ আন্তরিক ছিল সেই প্রচেষ্টা। আমরা অভিভূত হয়েছিলাম। তবে পরে প্রথম শ্রেণীর থিয়েটারের কাজ শুরু হল। আমি তো কখনই উৎপলের গ্রেট, ম্য়াসিভ নাটকের শো-গুলি করতে পারতাম না। উৎপলের কয়েকটি থিয়েটার দেখা আমার কাছে ফেনোমেনল এক্সপিরিয়েন্স।’’
সত্য়জিতের সেই ‘ফেনোমেনল এক্সপিরিয়েন্স’ সম্পর্কে TV9 বাংলার ‘টিনের তলোয়ার ৫০’-এ একে-একে হাজির হলেন ব্রাত্য বসু, সুমন মুখোপাধ্যায়, সমীর মজুমদার (চরিত্র: বীরকৃষ্ণ দাঁ), অসিত বসু (চরিত্র: প্রিয়নাথ মল্লিক), ছন্দা চট্টোপাধ্যায় (চরিত্র: ময়না), রজত বন্দ্যোপাধ্যায় (চরিত্র: প্রিয়নাথ মল্লিক), বিমল চক্রবর্তী, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুপ্রিয় দত্ত, অরুণ মুখোপাধ্যায় ও দেবশঙ্কর হালদার।
‘টিনের তলোয়ার’-এর কলাকুশলীদের মধ্যে TV9 বাংলার ‘টিনের তলোয়ার ৫০’-এ উপস্থিত রয়েছেন সমীর মজুমদার, ছন্দা চট্টোপাধ্যায়, অসিত বসু ও রজত বন্দ্য়োপাধ্যায়। তাঁদের মধ্য়ে প্রথম তিনজন যা বললেন:
সমীর মজুমদার (চরিত্র: বীরকৃষ্ণ)
‘‘উনি (উৎপল দত্ত) বললেন এই হাসিটা একে বলে গাফুয়া, লাফটার অফ ইনসাল্টেশন। আমাদের অভিনেতারা তো একরকমই হাসে। কিন্তু স্মার্ক, স্নিগর, গাফুয়া, গিগল, লাফটার ৫ রকমের হাসি আছে। সেই পার্থক্যগুলো বুঝতে হবে। যেমন এই হাসিটা হচ্ছে লাফটার অফ ইনসাল্টেশন বা গাফুয়া।’’
ছন্দা চট্টোপাধ্যায় (চরিত্র: ময়না)
‘‘না শুনলে বোঝা যাবে না যে চরিত্রটা কী। ওনার (উৎপল দত্তর) স্ক্রিপ্টটা শুনতে হবে। প্রত্যেকটা চরিত্র উনি নানা রকমভাবে পড়তেন। পড়াটা, স্ক্রিপ্ট পড়াটা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারপর আমাদের রিডিং রিহার্সাল হত। মানে খালি পড়ে যাচ্ছি, পড়ে যাচ্ছি,পড়ে যাচ্ছি… রিডিং রিহার্সাল। তারপর উনি বোঝাচ্ছেন। টয় সেট-ও থাকত একটা। খেলার মতো সেট থাকত একটা। সেখানে আমাদের নাম্বারিং করা থাকত রিহার্সালে। কাজেই যখন বড় স্টেজে গিয়ে নামতাম, তখন কোনও অসুবিধেই হত না।’’
অসিত বসু (চরিত্র: প্রিয়নাথ মল্লিক)
‘‘৬৭তে প্রায় ১১ জন পিলার কাস্ট চলে গিয়েছে। আমরা সাতদিনের মধ্যে রিপ্লেস করে সেই নাটক আবার নামিয়েছি। সবাই ছেড়ে চলে গিয়েছে। এলটিজি-র ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা তখন নেই তাঁর। তখনকার উৎপল দত্ত বম্বের সুপারষ্টার উৎপল দত্ত নন। অর্থ সামর্থ্য় নেই তাঁর। ওই সময়টা থেকে উৎপলদা প্রায় একা। আমি আর অনিল ঘোষ। কয়েক দিন, তারপর সে-ও আসা বন্ধ করে দিল। আমি সকাল আটটায় ঢুকতাম। রাত ন’টা সাড়ে ন’টা পর্যন্ত উৎপলদার একমাত্র সঙ্গী। বিবেক যাত্রা সমাজ তৈরি হল। নতুন রিক্রুট করা হল। সমীর মজুমদার, কনক মৈত্র, বিশ্বনাথ সামন্তরা এলেন। পুরনোদের মধ্যে আমি মৃনাল, অরূপ, অনিল এল। সেই সময় উৎপলদার পশে আমি।’’