Explained Waqf Bill Section 40: ‘কাগুজে বাঘ’ হয়ে গেল ওয়াকফ বোর্ড! কী এমন ছিল আইনের ৪০ ধারায়, যা ঘিরে এত বিতর্ক?
Explained Waqf Bill Section 40: ওয়াকফ আইনের ৪০ ধারায় ওয়াকফ সম্পত্তি নির্ধারণের ক্ষমতা নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। কোনও সম্পত্তি ওয়াকফের কি না, তা নির্ণয় করার ক্ষমতা আইনের এই ধারা।

নয়া দিল্লি: বাধা-বিতর্ক কাটিয়ে, দীর্ঘ আলোচনার পর লোকসভায় পাশ হয়ে গেল ওয়াকফ সংশোধনী বিল। আজ, বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় এই বিল পেশ করা হবে। সেখানেও বিল পাশ হয়ে গেলে, আইন সংশোধনে আর কোনও বাধা থাকবে না। এই ওয়াকফ বিল নিয়ে এত হইচই, বিরোধীদের আপত্তি ঠিক কোন জায়গায়? আইনে সংশোধন হলে ওয়াকফের কোন নখ-দাঁত খসে যাবে?
ওয়াকফ বোর্ডের কাঠামো এবং দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ওয়াকফ সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণের জন্যই মূলত ওয়াকফ আইনে সংশোধন করতে চাইছে সরকার। এই সংশোধনী প্রস্তাবের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে, এমন একটি ধারা, যা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে দিতে চায় সরকার। কী সেই ধারা? ৪০ নং ধারা।
বুধবারের লোকসভা আলোচনায় বারবার উঠে এসেছিল ওয়াকফ আইনের এই ৪০ নং ধারার কথা। এমনকী তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যদি ৪০ নং ধারা বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তবে ওয়াকফ বোর্ড দাঁতহীন পুতুলে পরিণত হবে। যদি এই ধারা না থাকে, তবে ওয়াকফ বোর্ডের প্রয়োজনই থাকবে না।”
কী এমন বলা রয়েছে ওয়াকফ আইনের ৪০ ধারায়, যা ওয়াকফ বোর্ডের অস্তিত্বকেই প্রশ্নের মুখে ফেলছে?
ওয়াকফ আইনের ৪০ ধারায় ওয়াকফ সম্পত্তি নির্ধারণের ক্ষমতা নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে। কোনও সম্পত্তি ওয়াকফের কি না, তা নির্ণয় করার ক্ষমতা আইনের এই ধারা। এই ধারায় বলা ছিল, কোনও জমি বা সম্পত্তি ওয়াকফের কি না, তা একমাত্র ওয়াকফ বোর্ডই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এই ধারায় সাব সেকশন ১-এ বলা হয়েছে, যদি কোনও সম্পত্তি ওয়াকফের বলে মনে হয়, তবে ওয়াকফ বোর্ড নিজে সেই সম্পত্তি সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতে পারে। বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
৪০(২) ধারায় ওয়াকফ বোর্ডকে আইনি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, কোনও সম্পত্তি নিয়ে বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে, যদি না তা ওয়াকফ ট্রাইবুনাল প্রত্যাহার বা পরিবর্তিত করে। এতে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও ভূমিকা থাকে না। অর্থাৎ কোনও জমিকে ওয়াকফের দাবি করা হলে, সেক্ষেত্রে রাজ্য বা কেন্দ্র চ্যালেঞ্জ করতে পারে না।
৪০(১)(৩) ধারায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে সম্পত্তি ওয়াকফের নয়, অন্য কোনও ট্রাস্ট বা সোসাইটির নামে রয়েছে, সেক্ষেত্রে কী হবে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, যদি ওয়াকফ বোর্ড মনে করে সরকারি রেজিস্টার্ড অন্য কোনও সোসাইটি বা ট্রাস্টের জমি আসলে ওয়াকফের জমি, তবে বোর্ড এই সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে তদন্ত করতে পারে। যদি তদন্তে ওয়াকফ সম্পত্তি প্রমাণিত হয়, তবে ওই ট্রাস্ট বা সোসাইটিকে উল্লেখিত সম্পত্তি ওয়াকফে রেজিস্টার করতে বলতে পারে বা কেন তা ওয়াকফে রেজিস্টার হবে না, তার কারণ দেখাতে বলতে পারে।
৪০(১)(৪) ধারায় ওয়াকফ বোর্ডের সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, তাকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। ওয়াকফ ট্রাইবুনাল ছাড়া অন্য কেউ এই সিদ্ধান্ত বদলাতে পারে না।
নতুন সংশোধনী বিলে ওয়াকফ আইনের এই ৪০ ধারাই মুছে ফেলা হয়েছে। অর্থাৎ ওয়াকফ এত দিন ধরে যে কোনও সম্পত্তিকে যে চাইলেই নিজস্ব সম্পত্তি বলে দাবি করতে পারত, তা আর করতে পারবে না।
- ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যে ওয়াকফ সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে জেলা কালেকটরের অফিসে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে।
- আইন কার্যকর হওয়ার আগে বা পরে যদি কোনও সরকারি সম্পত্তি ‘ওয়াকফ সম্পত্তি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে, সংশোধনী পাশ হওয়ার পর তা ওয়াকফ সম্পত্তি থাকবে না। জেলা কালেকটর ঠিক করবেন, সেটা ওয়াকফ সম্পত্তি নাকি সরকারি জমি। কালেকটরের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।
- রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট না পেশ করা পর্যন্ত ওয়াকফ সম্পত্তি বলে গণ্য করা যাবে না।
- ওয়াকফ বোর্ডের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও বিতর্ক থাকলে হাইকোর্টে আবেদন করা হবে।
- এতদিন কোনও নথি না থাকলেও মৌখিকভাবে ওয়াকফ সম্পত্তি চিহ্নিত করা যেত। সংশোধনী বিল পাশ হলে, ওয়াকফনামা অর্থাৎ নথি না থাকলে, সেই জমি বিতর্কিত বলেই গণ্য করা হবে।
- ওয়াকফ সম্পত্তির ক্ষেত্রে অডিট করতে পারবে ক্যাগ।





