দফায়-দফায় বৈঠকেও কাটল না জট, বহাল থাকল শুটিং বন্ধের সিদ্ধান্ত

Tollywood: ফলে থমথমে স্টুডিয়ো পাড়ার কোনায় কোনায় জমেছে অভিমান। পূর্ব অবস্থা থেকে সরে এসেছে রাহুলের প্রতি কি খানিক নমনীয় হবেন ফেডারেশন? নাকি নিয়মের গেরোয় আরও জটিল হবে অবস্থা? রুজিতে পড়বে টান? প্রশ্ন অনেক, উত্তর অজানা। দিন শেষে কী হয় সে উত্তর অবশ্য লুকিয়ে সময়ের হাতে।

দফায়-দফায় বৈঠকেও কাটল না জট, বহাল থাকল শুটিং বন্ধের সিদ্ধান্ত
Follow Us:
| Updated on: Jul 29, 2024 | 10:20 PM

বিহঙ্গী বিশ্বাস ও সুচরিতা দে

টলিউড অচল। অনির্দিষ্ট কালের জন্য চলছে কর্মবিরতি। একদিকে স্বরূপ বিশ্বাসের ফেডারেশন অন্যদিকে টলিউডের পরিচালক মহল। সমস্যাটা আজকের নয়। শুরু হয়েছিল সপ্তাহ খানেক আগেই। পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায় বাংলাদেশের সিরিজ় ‘লহু’র চার দিন শুটিং করেন কলকাতায়। বাকি শুটিং তিনি করেন পড়শি দেশে। এই খবর সামনে আসতেই ডিরেক্টরস গিল্ড অর্থাৎ টলিপাড়ার পরিচালকদের সংগঠন রাহুলের থেকে প্রকৃত সত্য জানতে চায়। পরিচালক প্রথমে সমস্তটাই অস্বীকার করেন। পরে তিনি স্বীকার করে নেন, তিনি বাংলাদেশে গিয়ে কাজ করেছেন।

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে আরও। তিনি নাকি কলকাতায় চার দিনের শুটিংয়ের বকেয়া মিটিয়ে দেননি। এর পরেই তাঁকে তিন মাসের কর্মবিরতির নির্দেশ দেয় ডিরেক্টরস গিল্ড। রাহুল অবশ্য স্বপক্ষে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ ডিরেক্টরস গিল্ডের হাতে তুলে দিয়ে জানান, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ ভুল।

সেই তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে শুক্রবার ডিরেক্টরস গিল্ড আনুষ্ঠানিক ভাবে জানায়, অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হওয়ায় তারা রাহুলকে কর্মবিরতি থেকে অব্যাহতি দিচ্ছে। সকলেই খুশি। ঠিক হয় এসভিএফের ব্যানারে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যের ছবিটি রাহুলই পরিচালনা করবেন। তবে সে দিন রাত বাড়তেই ফের বেঁকে বসেন ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। তিনি জানান, শ্রীকান্ত মোহতার পুজোর ছবিটি রাহুল পরিচালনা করলে তাঁর অধীনস্থ টেকনিশিয়ানরা হাজির হবেন না। তবে রাহুল ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করলে ফেডারেশনের কোনও আপত্তি নেই। প্রযোজনা সংস্থা ফেডারেশন সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেয় বা বলা ভাল মানতে বাধ্য হয়। পরিচালক হিসেবে আগমন ঘটে সৌমিক হালদারের।

তবে শনিবার সকালেই বদলে যায় ছবি। পুজোর ছবির শুটিং করতে সেটে পৌঁছে যান ছবির অন্যতম অভিনেতা প্রসেনজিৎ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, প্রযোজক শ্রীকান্ত এবং ছবির সঙ্গে যুক্ত বাকিরা। কিন্তু রাহুলকে ‘ডিরেক্টরস চেয়ারে’ দেখে বেঁকে বসেন কলাকুশলীরা। তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন রাহুল পরিচালনা করতে তাঁরা থাকবেন না। মেকআপ ভ্যানে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।

স্বরূপ বিশ্বাস জানান, কথার খেলাপ হয়েছে। সেটে কোথাও সৌমিক নেই। বদলে পরিচালকের আসনে রাহুল। তাঁর সঙ্গে কোনও কলাকুশলী কাজ করতে রাজি নন। ওদিকে পাল্টা গর্জে ওঠেন টলিপাড়ার পরিচালকেরাও। পরমব্রত বলেন, “ফেডারেশন কিন্তু আইন প্রণেতা নয়। তারা কোনও আইন তৈরি করতে পারে না। তারা একটি সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠানের অংশমাত্র। তারা নিজেদের সদস্যদের জন্য কিছু বিধিনিষেধ নিয়ম তৈরি করতে পারে। কিন্তু সেটাও কি তারা বাকি প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে তৈরি করেন? আদৌ কি সংগঠনের এই আচরণ মেনে নেওয়া যায়?”

বিকেলেও সুর নরম হয় না। ফেডারেশন সিদ্ধান্তে অনড়। বেঁকে বসেন পরিচালকেরাও। সোমবার থেকে ডাক দেন কর্মবিরতির। গোটা টলিউড জুড়ে শুরু হয় কার্যত লকডাউন। এই পরিস্থিতির সমাধান খুঁজতেই সোমবার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বালিগঞ্জের বাড়িতে সকাল সকাল বসে বৈঠক। যেখানে উপস্থিত থাকেন টলিপাড়ার প্রথম সারির একগুচ্ছ পরিচালকেরা। রাজ চক্রবর্তী থেকে শুরু করে হরনাথ চক্রবর্তী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীল, গৌতম ঘোষ প্রমুখেরা।

বৈঠক শেষে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে বলতে শোনা যায়, ”আমরা সারাজীবন লড়াই করেছি টেকনিশিয়ানদের জন্য। টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে থাকাটা আমাদের এক বড় ধর্ম। পাশাপাশি শিল্পীদের আর্টিস্ট ফোরাম, যেখান প্রচুর শিল্পী রয়েছেন। তবে আমার মনে হয়, এখন যে জায়গাটায় আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি, সেটা কোনও লড়াই নয়, এটা মানসম্মানের লড়াই চলছে। একটা পরিবারে যদি আমরা সবাই বাস করি, সেখানে মান-সম্মান সবই থাকবে। তার জন্য পরিবারটা তো ভেঙে যায় না। আমরা চাই উন্নয়ন।”

এরপরই বিকেলে পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করে ফেডারেশনও, স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘আলোচনার দ্বারা সবকিছুই সম্ভাব। আলোচনা করতে রাজি, ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করে কেন? আমাদের MOU ইম্পার সঙ্গে। WATP হঠাৎ করে কেন কাজ বন্ধ করে দিল? আমি বুঝতেই পারছি না। যাঁরা কাজ করতে চাইছিলেন, হুমকি দিয়ে তাঁদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হল।’

ওদিকে আর্টিস্ট ফোরামও তাঁদের তরফে দেয় বিবৃতি। সেখানে তারা জানায়, “শুটিং বন্ধ এটা একটি অনভিপ্রেত পরিস্থিতি। বিভিন্ন সংগঠন শুটিং-এর নীতি পরিবর্তন সংক্রান্ত কিছু দাবি তুলেছেন। আমাদের সদস্যদের অর্থাৎ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সুস্থ কর্মসংস্কৃতির দাবিতে কিছু পরিবর্তিত নীতি সামনে আনতে চাই। সেই বিষয় বিশদ আলোচনা প্রয়োজন আছে। সমস্ত পক্ষের যথাযথ প্রতিনিধিত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের আলোচনার আয়োজন হোক। সেখানে আর্টিস্ট ফোরামের প্রতিনিধিদল আমাদের পরামর্শ ও দাবিগুলো সামনে রাখবেন। কিন্তু এই আলোচনা চালানোর জন্য কোনওভাবে শুটিং যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে।” ভেন্ডার্স গিল্ড জানিয়ে দেয় তাঁরাও রয়েছেন প্রযোজক ও পরিচালকের সঙ্গে।

যদিও রাত আটটা পর্যন্তও নির্দিষ্ট কোনও সমাধান সূত্রে পৌঁছয়নি টলিপাড়া। এরপরই শুরু হয় আরও এক বৈঠক। যেখানে পরিচালকদের থেকে একগুচ্ছ প্রশ্ন তোলা হয়, দেওয়া হয় সমাধান সূত্রও। এদিন রাতে কী কী প্রসঙ্গে আলোচনা হল– ফেডারেশনের আইন কি আদৌ আইন? মৌচুক্তির আইন কি? সিরিয়ালের পরিচালকদের অনেক সমস্যা অনেক চাপ থাকার পরও তাঁরা শ্যুটিং বন্ধ করছে। এর কারণ গভীর। মস্যার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে । নিয়মের বেড়াজালে সমস্যা। একতরফা আইন বানাচ্ছে ফেডারেশন। এটা কী হতে পারে? কোন রেগুলেটরি বডি থাক। একটা থার্ড পার্টিতে এসে সমাধান করা হোক। যে সব নানান সমস্যা রয়েছে। সিনেমার লোক হোক, যে সিনেমার রিয়ালিটি বোঝে আমাদের সমস্যা গুলো বোঝে। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সমস্যাই আজ এত বড় সমস্যা হয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই কর্মবিরতিতে আছে পরিচালকরা। পরিবার বোধে টেকনিশিয়ানদের থেকে আমরা আলাদা নয়। আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে। ফলে সোমবার রাতেও কাটল না জট।

ফলে থমথমে স্টুডিয়ো পাড়ার কোনায় কোনায় জমেছে অভিমান। পূর্ব অবস্থা থেকে সরে এসেছে রাহুলের প্রতি কি খানিক নমনীয় হবেন ফেডারেশন? নাকি নিয়মের গেরোয় আরও জটিল হবে অবস্থা? রুজিতে পড়বে টান? প্রশ্ন অনেক, উত্তর অজানা। দিন শেষে কী হয় সে উত্তর অবশ্য লুকিয়ে সময়ের হাতে।