একই চায়ের দোকানে চা খেতাম বুদ্ধবাবুর সঙ্গে, ওখানেই আলাপ, কেউ জানেন না: অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়
Biplob Chattopadhyay On Buddhadeb Bhattacharya: বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর প্রয়াণে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। প্রচণ্ড কান্নাকাটি করেছেন তিনি। বুদ্ধদেব ছিলেন তাঁর কাছের বন্ধু। যে বন্ধুর সঙ্গে তাঁর আলাপ একটি চায়ের দোকানে। না বলা অনেক কথাই চোখের জল ফেলতে-ফেলতে ভাগ করে নিলেন বিপ্লব।
তিনি নিজেও খুবই অসুস্থ। হাঁটতে পারছেন না ঠিক করে। ফোনটা তোলার পরই বিপ্লব বললেন, “ও তো আমার বন্ধু ছিল। আমার সখা। আমাকে নিজের মতোই মনে করত। সৎ।” প্রিয় বন্ধু পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর প্রয়াণে প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছেন বিপ্লব। টিভি নাইন বাংলা ডিজিটালের জন্য কলম ধরলেন তিনি।
সালটা আমার মনে নেই ঠিক করে। কয়েক দশক তো হবেই। আমার সঙ্গে একটা চায়ের দোকানে প্রথম আলাপ হয় বুদ্ধবাবুর। মির্জাপুর স্ট্রিটের একটি রেস্তোরাঁয় চা খেতে আসতেন তিনি। ওখানকার চা তাঁর খুবই প্রিয় ছিল। কাকতালীয়ভাবে আমিও সেই চায়ের দোকানটাতেই যেতাম চা খেতে। ওখানেই আমাদের আলাপ, গল্প, সখ্যতা ডানা পায়। তিনি তখন রাজনীতিক নন। আমিও অভিনেতা নই। এটা কিন্তু কেউ জানেন না। এই প্রথম আপনাদের জন্য লিখতে গিয়ে ব্যক্ত করলাম।
তারপর তিনি রাজনীতিক হলেন। আমিও অভিনেতা হলাম। আমার সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়ল। তিনি ভেবেছিলেন, আমি বুঝি খুব সৎ। দু’-এক জায়গায় এই কথা তিনি বলেওছিলেন আমার সম্পর্কে। যেটা বরাবরই মনে হত, বুদ্ধবাবু রাজনীতিতে না এলেই বোধ হয় ভাল করতেন। আমাদের দেশের এই নোংরা রাজনীতি ওঁর জন্য নয়।
এরকম একটা মানুষকে আমরা হারিয়েছিল। এই ক্ষতি কোনওদিনও মিটবে বলুন? আমার তো মনে হয়, পার্টি থেকে অনেক আগেই ওঁকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিল। তবে তিনি যা চেয়েছিলেন, তা করতে পারেননি। পশ্চিমবঙ্গের জন্য নতুন স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর স্বপ্ন সত্যি হয়নি। আমাকে বলতেন, “জানো বিপ্লব, একটা সুন্দর রাজ্য তৈরি করব আমরা। যেটাকে প্রকৃত অর্থেই সুন্দর বলা যায়। সবাই এখানে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকবে।” শেষ জীবনটা খুবই কষ্টে কাটিয়েছেন বুদ্ধবাবু। আমি যেমন এখন শারীরিক অসুস্থতায় দিন কাটাচ্ছি, তিনিও কাটিয়েছিলেন।
আমার সঙ্গে আরও একটা বিষয় নিয়ে খুবই আলোচনা করতেন তিনি। সিনেমাপ্রেমী ছিলেন তো। দেখা হলেই বাংলা ছবি নিয়ে আলোচনা হত। আমার অভিনয় ভাল লাগত বুদ্ধবাবুর। আমার একটি নাটক তিনি দেখতে এসেছিলেন ‘শকুনির পাশা’। মধুমূদন মঞ্চে মঞ্চস্থ হয়েছিল নাটকটা। আমাকে কাছে ডেকে বলেছিলেন, “অভিনয় তোমার ১০০-এ ১০০…।” একটাই যন্ত্রণা হচ্ছে, মানুষটাকে আমরা যথাযথ সম্মান দিতে পারলাম না।