Exclusive Ditipriya : কাল থেকে আমার আর রানিমা সাজা হবে না: ‘রাসমণি’

Ditipriya Roy: মাত্র তিন মাসের জন্য অভিনয় করার কথা ছিল এই ধারাবাহিকে। আজ যে আমিই রাসমণি চরিত্রটা শেষ করছি, সেটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি।

Exclusive Ditipriya : কাল থেকে আমার আর রানিমা সাজা হবে না: 'রাসমণি'
রাসমণি লুকে দিতিপ্রিয়া
Follow Us:
| Updated on: Jul 03, 2021 | 9:40 AM

আজ, ৩ জুলাই ২০২১। আজ থেকে ঠিক চার বছর আগে শুরু হয়েছিল তাঁর জার্নি। কথা ছিল মাত্র তিন মাস কাজ করার। কিন্তু সেই তিন মাস পেরিয়ে গিয়ে যে এতগুলো দিন, মাস, বছর অতিক্রম করে যাবে, তা হয় তো তিনি নিজেও ভাবতে পারেননি। তিনি দিতিপ্রিয়া রায়। আপনাদের আদরের ‘রানিমা’। আজ এই চার বছরের ‘রানিমা’র জার্নি শেষ। মাত্র ১৪ বছর পেরিয়েই ইন্দ্রপুরী স্টুডিওর মেক-আপ রুম, সেট হয়ে উঠেছিল কখনও তাঁর স্টাডি-রুম। কখনও আবার বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করার জায়গা। কখনও আবার মন খারাপের দিনের ‘পজিটিভ ভাইবস’। প্রথমদিনের দিতিপ্রিয়া ছিল সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া ছাত্রী। আজ সে পরিণত, প্রাপ্তবয়স্ক এবং সর্বোপরি এক স্টার। তাঁর ‘রানিমা’-র জার্নি শেষ হলেও সম্পর্কগুলো একই থাকবে। শেষ দিনে অনেকটা আবেগপ্রবণ, অনেকটা পরিণত দিতিপ্রিয়া রায়। মনের ঝাঁপি মেলে ধরলেন TV9 বাংলার কাছে।

 পাক্কা চার বছরের জার্নি। চার বছর আগে দিতিপ্রিয়া ছিল ১৪। আর আজ সে প্রাপ্তবয়স্কা। প্রথম দিন আর আজ শেষ দিনের নিজের জীবনে কী-কী পরিবর্তন ঘটল?

নিজের জীবনে প্রচুর পরিবর্তন হয়েছে। স্কুল ছিল, কলেজ হয়েছে। ছোট রানি থেকে রানিমা হয়ে উঠেছি। আজ আমি প্রাপ্তবয়স্ক। দর্শকদের জন্য যেমন ছোট রানি থেকে রানিমা হয়ে উঠেছি, তেমনিই একটা মেয়ের কৈশোর থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠতে যা-যা পরিবর্তনের মধ্যে যেতে হয়, সেই সব পরিবর্তনই হয়েছে আমার। যার সঙ্গে রানিমার কোনও সম্পর্ক নেই।

 টিনএজ বয়সেই অভিনয়ের এতগুলো শেড। নিজের প্রস্তুতি কী ছিল?

প্রথমে আমি সত্যিই প্রস্তুত ছিলাম না। আমাকে রানির ছোটবেলার জন্য অভিনয় করতেই ডাকা হয়েছিল। মাত্র তিন মাসের জন্য অভিনয় করার কথা ছিল এই ধারাবাহিকে। আজ যে আমিই রাসমণি চরিত্রটা শেষ করছি, সেটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। তবে হ্যাঁ এই কয়েক বছরে আমি যে কয়েকটা সিরিজ বা ছবি দেখেছি, সেখানে আমি আমার বয়সী চরিত্রগুলোর থেকে তাদের মা, বাবার চরিত্র বেশি লক্ষ্য করতাম। কারণ আমার মেয়ে আছে, জামাই আছে। বলা যায় সেটাই আমার প্রস্তুতি ছিল।

 মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক জীবনের দুই বড় পরীক্ষার সাক্ষী রাসমণির মেক-আপ রুম। কোন স্মৃতিটা বারবার ফিরে-ফিরে আসছে?

আমার কৈশোর বয়সের সাক্ষী রাসমণির এই মেক-আপ রুম। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি থেকে কলেজের পরীক্ষা… জীবনের প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সাক্ষী এই ঘরটা। ছোট রানির লুক সেট থেকে, আমার বিয়ের সাজ, বৈধব্যের লুক কিংবা আজকের এই মারা যাওয়ার দৃশ্যের মেক-আপ। ইন্দ্রপুরীর এই ঘরটাতে আরও অনেকে আসবে, যাবে, কিন্তু দিতিপ্রিয়া হয়ে ওঠার প্রতিটা স্মৃতি এই ঘরটার সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে। ১০ আগস্ট আমার জন্মদিন। আর এই দিনটায় আমাদের টিম এই ঘরটাকে অন্যভাবে সাজিয়ে তোলে। ফুলের পাপড়ি দিয়ে লেখে আমার নাম। কত-কত মুহূর্ত…

 এই কয়েক বছরে বহু চরিত্র এসেছে, গিয়েছে। কে তোমার সবথেকে প্রিয়?

এক কথায়, কোনও দ্বন্দ না-রেখে আমার প্রিয় হল মথুরবাবু। আমার সঙ্গে গোগোর (গৌরব চট্টোপাধ্য়ায়) একটা অদ্ভুত বন্ডিং আছে। ওঁর প্রথম ধারাবাহিক দুর্গাতে আমি গোগোর মেয়ে হয়েছিলাম। আর এখানে ওঁ আমার জামাই। অফস্ক্রিনও আমার আর গোগোর এক অন্যরকম বন্ধুত্ব। তারপরেই যাঁর কথা বলব, সে হল সৌরভমামু (সৌরভ সাহা)। এক মিনিটে আমার মন ভাল করার ওষুধ মামুর জানা।

রাসমণিতে যদি রাসমণির চরিত্রের অফার না পেতে এই ধারাবাহিকের অন্য কোন চরিত্রে অভিনয় করতে?

আমার সব সময় মনে হয় যদি রাসমণির চরিত্রে অভিনয় না করতাম, তাহলে আমি জগদম্বার চরিত্রে অভিনয় করতে চাইতাম। কারণ এই চরিত্রের মধ্যে রানিমার একটা ছাপ দেখা যায়। এক দিকে সে প্রতিবাদী, আবার অন্য দিকে দয়াময়ীও। সব রকম উপাদান রয়েছে এই জগদম্বা চরিত্রে।

 যদি অপশন থাকে স্মৃতি হিসেবে বাড়িতে কিছু নিয়ে যেতে চাইলে কী নিয়ে যাবে?

অপশন থাকে, ইতিমধ্যেই আমি সঙ্গে নিয়ে নিয়েছি। রানিমার গেরুয়া চাদর, যা ছাড়া রানিমা অসম্পূর্ণ, গলায় পরতাম যে হার, হাতের রুদ্রাক্ষের মালা ইতিমধ্যেই আমার সঙ্গে নিয়ে নিয়েছি। যা সারাজীবন আমার সঙ্গেই থাকবে। আরও একটা জিনিস আমি নিয়েছি। তা হল যে বেনারসি পরে আমি প্রথম প্রোমো শুট করি, সেটা।

 আগামীকাল থেকে তো শুটিং নেই। তাহলে পরের দিনের সকাল ঠিক কেমন হবে?

কাল থেকে আমাকে আর ইন্দ্রপুরী স্টুডিওয়ে যেতে হবে না। কাল থেকে আমাকে কেউ আর ফোন করে বলবে না রানি তোর ১২টায় কল টাইম, তুই ১টায় ঢোক। বলতে গিয়েই আমার এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। কাল থেকে আর রানিমা সাজা হবে না।

 এক দিকে অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে ছবি, ‘অভিযাত্রিক’ কলকাতা ফ্লিম ফেস্টিভ্য়াল-এ বেশ প্রশংসা পেল, আবার পাভেলের সঙ্গে ছবি। কয়েক দিনের মধ্যে ‘অচেনা উত্তম’ শুরু হবে। কম বয়েসে এ এক বাড়তি চাপ না?

বাড়তি চাপ বলতে সিনেমার ক্ষেত্রে আমি বেবিস্টেপ ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সিরিয়ালের ক্ষেত্রে এই কয়েক বছরে যতগুলো ধারাবাহিক হয়েছে, তার মধ্যে ‘রাণী রাসমণি’ ছিল অন্যতম জনপ্রিয় এবং প্রথম সারির মধ্যে একটা। এখানে তাই-ই আমি আমার সবথেকে বড় প্রতিদ্বন্দী। আমাকে এবার নিজেকে নিজের রেকর্ড ভাঙতে হবে।

 সদ্য শেষ হচ্ছে ধারাবাহিক। এরপর হাতে বেশ কিছু সিনেমার কাজ। তাহলে এরপর কি দিতিপ্রিয়াকে আবার ছোটপর্দায় দেখতে পাবে দর্শক?

এই করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের জীবনটাই ভীষণ অস্থায়ী। প্যানডেমিকের জন্য আমার ছবির শুটিং পিছিয়ে গিয়েছে। ছবি কবে মুক্তি পাবে, তা-ও ঠিক জানি না। ইচ্ছে আছে কিছুদিনের জন্য ব্রেক নেওয়ার। তারপর ভাল প্রজেক্ট এলে অবশ্যই করব। আপাতত একটা রোড ট্রিপের প্ল্যান আছে।

কোথায় যাবে?

এখনও অবধি প্ল্যান করে ওঠা হয়নি। তবে যাব, এটা নিশ্চিত। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ব। মা, বাবা আর কাছের কিছু বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে।

 নতুন সিনেমা হোক কিংবা রাজনৈতিক পদযাত্রায় হাঁটা। যদিও এখনও অবধি কোনও পদযাত্রায় তোমায় দেখা যায়নি। কোনটা করবে, কোনটা করবে না এই সিদ্ধান্তগুলো তুমিই নাও নাকি মা?

মা আর আমি দু’জনে মিলে নিই। মা আমার সব। এখন যেহেতু বড় হয়েছি, তাই নিজের মত প্রকাশের জায়গা হয়েছে। তবে যা সিদ্ধান্তই নিই না কেন, সব মায়ের সঙ্গে আলোচনার পরই নেওয়া হয়।

 তোমার অভিনীত শেষ এপিসোড কি বাড়িতে বসেই দেখবে?

অবশ্যই। প্রথম এপিসোডও বাড়িতে বসে দেখেছিলাম, শেষ এপিসোডও দেখব।

 দিতিপ্রিয়া নাকি ম্যানেজার রাখার কথা ভাবছে। অনেকের সঙ্গে নাকি ভালভাবে কথাও বলে না আজকাল, এমন শোনা যাচ্ছে। কী বলবে?

অনেকেই অনেক কথা বলে। আমি মনে করি লোকের কাজই কথা বলা। সবকিছুকে গুরুত্ব দিলে হয় না। আমার কাছের মানুষেরা জানেন, আমি কেমন। আর হ্যাঁ আমার মা-ই হল আমার ম্যানেজার। আমার এই মুহূর্তে কাউকে লাগবে না।