সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে ঝুঁকি নাকি সাবধানতা, কোন পথে টলিউড?
ব্য়ক্তি? ব্য়ক্তিত্ব? ব্র্য়ান্ড? সোশ্য়াল মিডিয়ায় নিজেদের পরিচয় বা 'আইডেন্টিটি' তুলে ধরার ক্ষেত্রে কতটা কৌশলী তারকারা?
ব্য়ক্তি? ব্য়ক্তিত্ব? ব্র্য়ান্ড? সোশ্য়াল মিডিয়ায় নিজেদের পরিচয় বা ‘আইডেন্টিটি’ তুলে ধরার ক্ষেত্রে কতটা কৌশলী তারকারা? বছরের প্রথম দিনে “হাই এভরিওয়ান, ওয়েলকাম টু মাই অডিও ডায়েরি…” বলে সোশ্য়াল মিডিয়া থেকে কার্যত ‘ভ্য়ানিশ’ হয়ে যাওয়া দীপিকা পাডুকন যেন এই প্রশ্নই তুলে দিলেন। নিছক নিজের উপস্থিতি বা ‘প্রেজেন্স’-এর প্রদর্শনী নয়। নিজের ব্য়ক্তিত্বকে ধীরে-ধীরে ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে তৈরি করে কীভাবে তা নেটিজেন (কেউ-কেউ আবার বলেন ডিজিটাল নেটিভ)-দের সামনে তুলে ধরতে হয়, প্রতিনিয়ত সেই কৌশল নতুন থেকে নতুনতর কায়দায় রপ্ত করে চলেছে বলিউড। উল্টো দিকে, এই বিদ্য়ে কতটা আয়ত্ত করেছে টলিউড? বলিউডের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে টলিউডও কি পারছে এইভাবে সোশ্য়াল মিডিয়াকে নিংড়ে নিতে? সোশ্য়াল মিডিয়ায় ‘অ্যাক্টিভ’ থাকা আর ‘ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্ট’-এর সঙ্গেসঙ্গে সুকৌশলে সোশ্য়াল মিডিয়াকে ব্য়বহার করে নিজের স্বতন্ত্র ‘ব্র্যান্ড’ ইমেজ বানানো, দু’টো এক নয়। টলিউড এই দৌড়ে কতটা সামিল হতে পারল?
খুঁজলে কয়েকটা নাম যে পাওয়া যাবে না, তা নয়। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, ঋতাভরী চক্রবর্তী, শ্রীলেখা মিত্র এবং তাঁদের মতো আরও অনেকে এই দৌড়ে বাকি টলিউডিদের থেকে খানিকটা হলেও এগিয়ে। কীভাবে? এঁদের সোশ্য়াল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই দেখা যাবে নিছক ‘প্রোমোশন’-এর বাইরে বেরিয়ে নিজেদের ব্য়ক্তি ‘ইমেজ’-এর ছাপ রাখার চেষ্টা করেছেন। স্বস্তিকা সোশ্য়াল মিডিয়ায় বিভিন্ন বিষয়ে নিজের মন্তব্য স্পষ্ট ভাবে জানান। শ্রীলেখার রাজনৈতিক মতামত সোশ্য়াল মিডিয়ায় বেশ স্পষ্ট। তা-ও কি বলিউডের মতো টলিউড নিজের ইমেজ গড়তে ব্যবহার করতে পারল সোশ্য়াল মিডিয়াকে? সোশ্য়াল মিডিয়া পাবলিসিস্ট অনিমেষ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য়, “টলিউড এখনও সোশ্য়াল মিডিয়াকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারেনি। কোনও কিছু পোস্ট করার আগে এখানকার সেলেবরা অনেক বেশি ভাবেন। কোনও পোস্ট যদি বিতর্ক সৃষ্টি করে, তা ‘উচিৎ কথা’ হলেও এড়িয়ে চলেন তারকারা।
তবে কে, কীভাবে সোশ্য়াল মিডিয়াকে ব্যবহার করেন, তা একেবারেই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।” অনিমেষের সংযোজন, “ধরা যাক, কারও অনেকদিন সিনেমা রিলিজ করছে না। তখন এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা সোশ্য়াল মিডিয়ায় নিজের ছবি পোস্ট করে ‘প্রেজেন্স’টাকে বজায় রাখার চেষ্টা করেন। আবার অনেকে আছেন যাঁরা শুধুমাত্র সেল্ফ-প্রোমোশন ছাড়াও নানা বিযয়ে মতামত প্রকাশ করে নিজেদের ব্র্যান্ডকে গড়ে তুলতে সোশ্য়াল মিডিয়াকে ‘টুল’ হিসেবে ব্যবহার করেন। তবে এই সংখ্যাটা এখানে খুবই কম।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইন্ডাস্ট্রির আর একজন সোশ্য়াল মিডিয়া পাবলিসিস্টের গলায় অন্য সুর। তিনি বলেন, “সোশ্য়াল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের ‘ব্র্যান্ড’ গড়ার সংখ্যাটা বলিউডের তুলনায় টলিউডে কম হলেও সংখ্যাটা এখন বাড়ছে। একটু যদি রিসার্চ করি তাহলে দেখব, মিমি চক্রবর্তী, প্রিয়াঙ্কা সরকার, জয়া এহসান, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, স্বস্তিকা মুখোপাধ্য়ায়, ঋতাভরী চক্রবর্তী, সায়নী ঘোষ এবং আরও কেউ-কেউ নিজের প্রোমোশনের বাইরে গিয়ে একটা ‘ব্র্যান্ড’ তৈরি করার চেষ্টা করছেন।” সঙ্গে ওই সোশ্য়াল মিডিয়া পাবলিসিস্টের খোঁচা, “আমার মতে বিতর্ক এড়িয়ে চলাই ভাল। বাংলার বাজার এমনিই ছোট। বিতর্কিত মন্তব্যে ফ্যান ফলোয়ার কমে যেতে পারে। দীপিকা পাডুকনদের ফ্যান একটু কমে গেলে কিছু যায় আসে না। সমুদ্র থেকে এক মগ জল তুললে জল কি কমে যায়?”
টলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কী ভাবছেন? প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য টলিউডে সোশাল মিডিয়ায় ফ্যান ফলোয়ার্সের নিরিখে অভিনেতাদের চেয়ে অভিনেত্রীরা অনেকটা এগিয়ে। সোশ্য়াল মিডিয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে অভিনেত্রী পাওলি দাম (ইনস্টাতে ফলোয়ার্স 700k) বলেন, “নিশ্চয়ই নিজের মতামত প্রকাশের জায়গা সোশ্য়াল মিডিয়া। সমস্ত পৃথিবীর সঙ্গে কানেক্ট করার একটা প্ল্যাটর্ফম সোশ্য়াল মিডিয়া। নিজের প্রোমোশন ছাড়াও নিজের বক্তব্যকেও অনেক সময় সোশ্য়াল মিডিয়ার মাধ্যমে তুলে ধরি।” অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (ইনস্টাতে ফলোয়ার্স 1.2M)-এর গলাতেও একই সুর। তাঁর কথায়, “আমি নিজের প্রোমোশন এবং ইমেজ বিল্ডিং, দু’টো কাজেই সোশ্য়াল মিডিয়াকে ব্যবহার করি। নিজের বক্তব্যকে সবার মধ্যে সহজেই ছড়িয়ে দিতে পারি সোশ্য়াল মিডিয়ার মাধ্যমে।” সোশ্য়াল মিডিয়ায় টলিউড ক্রমশ সাবালক হয়ে উঠলেও বলিউডকে ছুঁতে এখনও অনেক দেরি।