উত্তমকুমারকে নিয়ে ছবি তৈরির কথা ছিল পরিচালক গৌতম ঘোষের; শুটিংয়ের কিছুদিন আগেই মারা যান মহানায়ক

Uttam Kumar Birthday: ছবিটি আর তৈরি করেননি গৌতম। শিল্পী মনের অসমাপ্ত কাজের এক তীব্র যন্ত্রণা আজও তাড়া করে বেড়ায় তাঁকে।

উত্তমকুমারকে নিয়ে ছবি তৈরির কথা ছিল পরিচালক গৌতম ঘোষের; শুটিংয়ের কিছুদিন আগেই মারা যান মহানায়ক
৩ সেপ্টেম্বর উত্তমকুমারের জন্মদিন
Follow Us:
| Updated on: Sep 03, 2021 | 4:56 PM

সমরেশ বসুর গল্প ‘শ্রীমতি ক্যাফে’। ২০-র দশক ও পরবর্তী তিন দশকের প্রেক্ষাপটে তৈরি একটি গল্প। নৈহাটির একটি ক্যাফে সেই গল্পের কেন্দ্রবিন্দু। গল্পটি নিয়ে ছবির সমস্ত আয়োজন সেরে রেখেছিলেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করার কথা ছিল উত্তমকুমারের। ছবি শুরুর আগেই চলচ্চিত্র জগতকে শূন্য করে রেখে চলে গিয়েছিলেন তিনি। ছবিটি আর তৈরি করা হয়নি গৌতমের। শিল্পী মনের অসমাপ্ত কাজের এক তীব্র যন্ত্রণা আজও তাড়া করে বেড়ায় তাঁকে। আজ, ৩ সেপ্টেম্বর উত্তমকুমারের জন্মদিনে দুঃখের ঝুলি খুলে TV9 বাংলাকে সেই কথাই ব্যক্ত করলেন গৌতম ঘোষ।

৩০ বছরের এক প্রাণবন্ত যুবা। ফটোগ্রাফিতে সিদ্ধহস্ত। ঠিক করেছেন ফিচার ছবি তৈরি করবেন। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের ‘মহানায়ক’-এর জন্য ভেবে রেখেছেন একটি চরিত্র। সাহিত্যের পাতা থেকে উঠে আসা ‘ভজু লাট’। সমরেশ বসুর কল্পনায় তৈরি চরিত্রটিকে নিজের মতো করে সাজাতে চেয়েছিলেন পরিচালক গৌতম। চেয়েছিলেন কেবলমাত্র উত্তমকুমারকেই। আগুপিছু না-ভেবে সোজা চলে গিয়েছিলেন মহানায়কের কাছে। উত্তমকুমারও যারপরনাই আনন্দিত হয়েছিলেন চরিত্রটি পেয়ে। নতুন পরিচালকের নতুন কাজ। ফিরিয়ে তো দেনইনি। বরং—গৌতমের কথায়—সমাদর করে বলেছিলেন, ‘‘তোমার মতো তরুণদেরই এখন আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তোমাদের মতো পরিচালকরাই তো হাল ধরবে ইন্ডাস্ট্রির।’’

উত্তম তখন ৫০ পেরিয়েছেন। খ্যাতি কাকে বলে, রন্ধ্রে-রন্ধ্রে উপলব্ধি করে ফেলেছেন ততদিনে। বাঙালির চোখের মণি হয়ে উঠেছেন তার অনেক আগেই। তাঁর কাছ থেকে ‘আমি রাজি’ শুনে স্বপ্নসাগরে ডুব দিয়েছিলেন গৌতম। জীবনের প্রথম ছবি তেলেগু ভাষায় তৈরি করেছিলেন পরিচালক: ‘মা ভূমি’। তেলেঙ্গনা আন্দোলনের উপর তৈরি সেই ছবি। তালিকায় দ্বিতীয় ছবির নাম হওয়ার কথা ছিল ‘শ্রীমতি ক্যাফে’। ‘মা ভূমি’ তৈরির অনেক আগে ‘শ্রীমতি ক্যাফে’-র পরিকল্পনা সেরে রেখেছিলেন গৌতম। ঠিক ছিল ‘মা ভূমি’ মুক্তি পাওয়ার পরই ‘শ্রীমতি ক্যাফে’-র কাজে হাত দেবেন তিনি। TV9 বাংলাকে গৌতম বলেন, ‘‘মা ভূমি তৈরির অনেক আগেই কথা বলে নিয়েছিলাম সমরেশ বসুর সঙ্গে। অনুমতি নিয়ে রেখেছিলাম। অসাধারণ উপন্যাস ‘শ্রীমতি ক্যাফে’। চিত্রনাট্য তৈরি করেছিলাম। ভজনানন্দ হালদারের চরিত্রটা উত্তমবাবুকে দিতে চেয়েছিলাম। ছোট করে ‘ভজু লাট’ বলেই তাকে সকলে ডাকত। সে ছিল একটি ক্যাফের মালিক। চরিত্রটা পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন উত্তমবাবু। বলেছিলেন, তোমরা এগিয়ে এসো। বাংলা ছবির পরিবর্তনের জন্য তোমাদের মতো তরুণদেরই তো দরকার এখন। তারপর কাজ এগোতে থাকল।’’

ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, উৎপল দত্ত, রবি ঘোষ, মমতা শঙ্করেরও কাজ করার কথা ছিল। বলতে থাকেন গৌতম, ‘‘ওই ছবিতে সৌমিত্রদার একটি চরিত্র ছিল। উৎপল দত্ত ছিলেন, মমতা শঙ্কর ছিলেন… রবি ঘোষ… স-অ-অ-অ-ব পরিকল্পনা হয়ে গিয়েছিল। সমস্ত রেডি করে আমি হায়দরাবাদে শুটিং করতে চলে গিয়েছিলাম। ‘মা ভূমি’ রিলিজ করে। সুপার হিট হয় ছবি। আমি আবার হায়দরাবাদ যাই ২০০ দিনের সেলিব্রেশনে।’’ এরপর গৌতমের সংযোজন, ‘‘ওখান থেকেই বাড়িতে যোগাযোগ করি। সে দিন ঘটনাচক্রে আমার জন্মদিন। ও মা! কী কাণ্ড! ফোনের ও পাশ থেকে মা বললেন, উত্তমকুমার মারা গিয়েছেন সেই দিনই। আমার জন্মদিন ও উত্তমবাবুর মৃত্যুদিন কোথাও গিয়ে মিলে গেল একটা দিনে।’’ এবার আক্ষেপ গৌতমের, ‘‘আমার জীবনে ট্র্যাজিডি নেমে এল। এক তো উত্তমবাবুকে আমরা হারালাম। আর অন্যটি… আমার ছবিটা আটকে গেল। ছবিটা হলে ওটাই হত আমার কেরিয়ারের দ্বিতীয় ছবি।’’

তাঁর ‘ভজু লাট’কে পাওয়ার আগেই হারিয়েছিলেন গৌতম। সময়ের অমোঘ পরিণতিতে তাঁর জন্মদিন আর উত্তমকুমারের মৃত্যুদিন জায়গা করে নিল ক্য়ালেন্ডারের অভিন্ন তারিখে। দিনটা ফিরে-ফিরে আসে প্রতিবছর। ফিরে আসে দগদগে স্মৃতিটাও। গৌতম বলেন, ‘‘এটা আমার জীবনের একটা দুঃখজনক অধ্যায় বলতে পারেন। ঘটনাটা কিছুতেই ভুলতে পারি না আমি। আমার ‘ভজু লাট’ সময়ের আগেই চলে গেলেন। উপন্যাসটি যাঁরা পড়েছিলেন, তাঁরা জানেন ‘ভজু লাট’ একজন দারুণ আমুদে মানুষ। অসাধারণ একটি উপন্যাস।’’ নৈহাটির একটি ক্যাফের গল্প, যাকে কেন্দ্র করে ক্রমে অর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়ে চলেছে। চারপাশে তখন স্বদেশি আন্দোলন, সকলে লুকিয়ে থাকছেন। এই ‘ভজু লাট’ স্বদেশিদের লুকিয়ে-লুকিয়ে সাহায্য করতেন, ওঁদের খেতে দিতেন, পালাতে সাহায্য করতেন। কিন্তু তাঁকে পুলিশ কিছুতেই ধরতে পারত না। আজও বিস্ময় গৌতমের গলায়, ‘‘তাঁর অন্যরকম ভাবমূর্তি ছিল, মেজাজ ছিল খুব। ভাবুন ওই বয়সে উত্তমকুমার কী পারফর্মটাই না করতেন…’’

‘ভজু লাট’ অধরাই থেকে গেলেন। আর তৈরি হল না ‘শ্রীমতি ক্যাফে’। অনেক খেটে প্রি-প্রোডাকশনের কাজ করেছিলেন গৌতম। উত্তমকুমার চলে যাওয়ার পর ভেবেছিলেন চরিত্রটা অন্য কাউকে দেবেন। কিন্তু উত্তমকুমারের ‘আমি রাজি’ শোনার পর গৌতমের আর কাউকেই মনে ধরেনি। একবার ভেবেছিলেন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়কে দেবেন চরিত্রটা। কিন্তু সেটাও আর হয়নি। কথোপকথনের শেষে গৌতমের দীর্ঘশ্বাস, ‘‘আমার জীবনের একটা বড় আক্ষেপ ছবিটি করতে পারলাম না। খুব চমৎকার ছবি হতে পারত, জানেন।’’

আরও পড়ুনSidharth Shukla: ওষুধ খেয়ে শুতে গিয়েছিলেন, আর ওঠেননি সিদ্ধার্থ 

আরও পড়ুনসিদ্ধার্থের খবর শোনামাত্রই শুট বন্ধ করলেন শেহনাজ, কান্নায় ভেঙে পড়লেন সানা

গ্র্যাফিক্স: অভীক দেবনাথ