‘চুরির কাছে শিক্ষা হেরে গেল…ভিক্ষা-ভাতার কাছে কর্মসংস্থান…’

২০২১ বিধানসভা ভোটে রবিবারই ঐতিহাসিক জয় পেল তৃণমূল। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে আজ শুভেচ্ছার বন্যা, আবির খেলা, স্বভাবোচিত ভঙ্গিমাতে মদন মিত্রর লাইভ...  চলছেই। এরই মধ্যে রবিবার সকালেই সংযুক্ত মোর্চা পিছিয়ে পড়তেই একের পর এক পোস্ট করতে থাকেন শ্রীলেখা। তাঁর নিশানায় কখনও রাজ্য সরকারের 'স্বাস্থ্যসাথী কার্ড'। আবার কখনও...

'চুরির কাছে শিক্ষা হেরে গেল...ভিক্ষা-ভাতার কাছে কর্মসংস্থান...'
জিতু-শ্রীলেখা
Follow Us:
| Updated on: May 02, 2021 | 9:42 PM

সোশ্যাল মিডিয়ায় দু’টো লাইন। সেই দুই লাইনেই নিজের মনের ভাব ব্যক্ত করেছেন বাম সমর্থক শ্রীলেখা মিত্র। বলেছেন, ‘হেরে যাওয়ার কথা’। চুরির কাছে শিক্ষা এবং ভিক্ষার কাছে কর্মসংস্থানের হেরে যাওয়ার কথা।

২০২১ বিধানসভা ভোটে রবিবারই ঐতিহাসিক জয় পেল তৃণমূল। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে আজ শুভেচ্ছার বন্যা, আবির খেলা, স্বভাবোচিত ভঙ্গিমাতে মদন মিত্রর লাইভ…  চলছেই। এরই মধ্যে রবিবার সকালেই সংযুক্ত মোর্চা পিছিয়ে পড়তেই একের পর এক পোস্ট করতে থাকেন শ্রীলেখা। তাঁর নিশানায় কখনও রাজ্য সরকারের ‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড’। আবার কখনও বা কোভিড পরিস্থিতিতে রেড ভলেন্টিয়ারসদের একজোট হয়ে কাজ করার ঘটনাকে উল্লেখ করে শ্রীলেখা লেখেন, ” … পলিটিকাল ম্যাপে না থাকলেও কমিউনিটি হেল্প পাবেন।” স্মরণ করিয়ে দেন ফয়াফল যাই হোক না কেন, তাঁর রক্তের রঙ ‘লাল’। জানান, ‘পাল্টিবাজদের দলে থাকবনা মিলিয়ে নেবেন।”

আরও পড়ুন: শতরূপ-ঐশী-মীনাক্ষী, তরুণ ব্রিগেডও অক্সিজেন জোগাতে পারল না সিপিএমকে

এ দিন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা থেকে কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বামজোট। যে সব তরুণ তুর্কিদের হাতিয়ার করে নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁরা বাস্তবে দেখা যায় তাঁদের প্রত্যেকেই পিছিয়ে আছেন বড় ব্যবধানে। এর পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শ্রীলেখা লেখেন, “চুরির কাছে শিক্ষা হেরে গেল। ভিক্ষা-ভাতার কাছে কর্মসংস্থান হেরে গেল।” শ্রীলেখার নিশানায় কি তৃণমূল? কটাক্ষ রাজ্যসরকারের বিভিন্ন প্রকল্প এবং ভাতাকে? শ্রীলেখার ওই পোস্টের কমেন্টে কমেন্ট করতে দেখা যায় সিনেদুনিয়ার আর এক পরিচিত মুখকে তিনি অনিন্দিতা রায়চৌধুরী। সরাসরি কোনও রাজনৈতিক মঞ্চে তাঁকে দেখা না গেলেও অনিন্দিতা লেখেন, ” আগামী ৫ বছরের মধ্যে এমন দিন ও আসবে যেদিন মানুষ ক্ষমা চাইবে এই ছেলে মেয়ে গুলোর কাছে…”। উত্তরে শ্রীলেখা লিখেছেন, “…একসঙ্গে লড়তে হবে। লড়াইটা আরও শক্ত হল।” ফেসবুকের ডিপিও বদলে ফেলেছেন শ্রীলেখা। সেখানে আর জ্বলজ্বল করছে না কাস্তে হাতুড়ি তারা।


নির্বাচনের আগেই খোলাখুলি জানিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রতি তাঁর ভালবাসার কথা। হাজির হয়েছিলেন সিপিএমের প্রচার সভাতেও। মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের জনজোয়ার দেখে আবেগে আপ্লুত হয়েছিলেন অভিনেতা জিতু কামাল। কিন্তু এ দিন সংযুক্ত মোর্চার ফলাফলে হতাশ জিতুও। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, “গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না”। যদিও এর পরেই অন্যান্য পোস্টে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে অক্সিজেন এবং বেড যোগানের সন্ধানে। ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকদিন ধরেই দাপটের সঙ্গে অভিনয় করছেন মানসী সিনহা। খোলাখুলি জানিয়েছেন বামফ্রন্টকে নিয়ে তাঁর আবেগের কথা। মানসী এ দিন লেখেন, “লড়াই জারি থাকবে কমরেড।” আর একটি পোস্টে তাঁর বক্তব্য, “ভোট দিন বা না দিন, অক্সিজেন আর বেডের দরকার হলে ফোন করবেন প্লিজ। সঙ্গে আছি। যেমন ছিলাম কালও।”

পরিচালক, ডাক্তার এবং একইসঙ্গে বাম সমর্থক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় আবার বলছেন, “বাংলার জনগণের ও গণতন্ত্রের জয় হয়েছে । বাংলার মানুষ সাম্প্রদায়িকতার ও সামাজিক বিদ্বেষের বিরোধিতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন – কিন্তু দুর্নীতির বিরোধিতাকে ততটা আমল দেন নি । অবশ্যই তা, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক সরকারকে বদল করার ক্ষেত্রে একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং বাংলার মানুষ রাজনীতিতে ধর্মের অনুপ্রবেশ একদমই মানছেন না । স্বাস্থ্যের ব্যাপারেও কেন্দ্রীয় সরকারের অপদার্থতা ও বেসরকারিকরণ, বিলগ্নিকরণ, পুঁজিপতিদের স্বার্থসিদ্ধি, নাগরিকত্বের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া, কৃষি -শ্রমিক আইন বদল ও মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে অবশ্যই মানুষ ভোট দিয়েছেন।” একই সঙ্গে বামেদের ক্ষেত্রে এই হারকে শিক্ষণীয় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ” নির্বাচনে পরাজিত হওয়া মানেই নিঃস্ব হয়ে যাওয়া বা অবিশ্বাসী হয়ে যাওয়া নয়। হতাশা মার্ক্সবাদীদের অভিধানে নেই। জনসংযোগ মুজবুত করার ক্ষেত্রে এটা এক পা পেছোনো এবং আরো দু পা এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা । আপনার বিশ্বাস ঠিক কি ভুল এ নিয়ে কারো কাছে জবাব দেবার দায় আপনার নেই – কারণ, জানবেন মতাদর্শগতভাবে আপনার বামপন্থী হওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার ও নিষ্ঠা আপনার আছে। আপনিই ব্যতিক্রমী । বাকিরা ক্ষমতার বলয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে।”

 

এইভাবে নিশ্চিহ্ন হওয়ার কারণ কী? টিভিনাইন বাংলার পক্ষ থেকে তরুণ ব্রিগেড দীপ্সিতা-সৃজন-ঐশীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা দুষছেন ‘মেরুকরণকে’। তাঁদের মতে, মানুষ তৃণমূলকে রোখার জন্য বিজেপিকে ও বিজেপিকে রোখার জন্য তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। তাই খাতা খুলতে পারেনি বামেরা।