Exclusive Joy Sengupta: যার ছবি মাত্র ৭ দিনে বন্ধ করে দেওয়া হবে, সেই মানুষটা সামনে আসবে কীভাবে?: জয় সেনগুপ্ত
Tollywood Inside: একজন সাধারণ ছেলে, তার কাছে খুব ভাল গল্প রয়েছে। কিন্তু সে শত চেষ্টাতেও প্রযোজকের কাছে পৌঁছতে পারবে না।
জয়িতা চন্দ্র
টলিউডের বর্তমান ছবিটা ঠিক কেমন! স্বজনপোষণ-ই হোক বা আধিপত্য, নতুনদের জায়গা করে দেওয়ায় আজ কতটা সহজ এই ইন্ডাস্ট্রি? কোথায়ই বা থেকে যাচ্ছে গভীর ক্ষত? বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এ কোন যুগ—TV9 বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মুম্বইনিবাসী বাঙালি অভিনেতা জয় সেনগুপ্ত।
একেই কী বলে ইন্ডাস্ট্রি?
একটা জিনিস মানতে হবে, কলকাতায়—এই ‘সো কলড’ ইন্ডাস্ট্রিতে—যে ছবি সবার নজরের সামনে আসে, লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সেগুলো সীমিত প্রযোজক, সীমিত পরিচালক ও সীমিত অভিনেতারাই করে চলেছেন। তার বাইরে নজরে আর কেউই নেই। হয়তো চারজন প্রযোজক, তিনজন পরিচালক ও ছ’জন অভিননেতাই ওই ৩০টা চলতে থাকা ছবিতে ঘুরে ফিরে আসছেন। মাঝেমধ্যে কিছু ছকভাঙা মুখ দ্বিতীয় বা তৃতীয় লিডে জায়গা করে নিচ্ছে। একটা ইন্ড্রাস্ট্রি টিকে থাকার জন্য এটা কখনওই যথেষ্ট হতে পারে না—কাম্যও নয়। ইন্ড্রাস্ট্রি বলতে যেটা আমি যা বুঝি, অগুনতি ট্যালেন্ট, সে অভিনয়ের ক্ষেত্রেই হোক বা পরিচালকনার ক্ষেত্রেই হোক বা সঙ্গীত জগত বা টেকনিক্যাল ক্ষেত্রেই হোক—ছবিকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরা, ভাল কাজ সমাদৃত হওয়া। সব কাজ কি প্রশংসিত হয়! কিছু কাজ কমার্শিয়ালি সমাদৃত হবে, কিছু কাজ গুণী মহলে চর্চিত হবে। সব ছবিকে সুপারহিট হতে হবে, কে বলেছে! লোকে যখন বলে ‘‘ইশশশ… এটা দেখলি না, দেখা উচিত ছিল’’—এমন ছবি ক’টা হচ্ছে? বাংলা ছবির এই জায়গাটাই কিন্তু ছিল এক সময়ের বিশেষত্ব।
একটা উদাহরণ দিচ্ছি, ‘পাতালঘর’। এমন কেউ ছিলেন না সেই সময়, যাঁরা এই ছবিটার দ্বারা প্রভাবিত হননি। চর্চা করেননি। ছবিটা তো এক কথায় ফ্লপ। এমন অনেক ছবি ঘটকবাবু (পরিচালক ঋত্বিক ঘটক), রায়বাবু (পরিচালক সত্যজিৎ রায়), সেনবাবু (পরিচালক মৃণাল সেন), গৌতম ঘোষ বানিয়েছেন, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী বানিয়েছেন, যেগুলো সেই অর্থে সুপারহিট ছবি নয়। হু-হু করে হল কাঁপিয়ে চলেছে, তা নয়। এগুলো হল রেফারেন্স পয়েন্ট। লোকে এগুলো নিয়ে কথা বলবেই বলবে। বলতে বাধ্য। সেখানেই শিল্পী ও শিল্পের জয়। সেই জিনিসটা এখন কেন হচ্ছে না, বলতে পারেন?
বক্স অফিস সাফল্যই বা কোথায়!
এতো গেল শিল্পের কথা, এবার বলি বাণিজ্যিক ছবির কথা। সেই ছবিও হচ্ছে। তবে দেখতে গেলে বছরশেষে মাত্র ৫ শতাংশ ছবি হিট করছে। তার বেশি কখনওই নয়। সারা বছরে মাত্র ৪-৫টা ছবিতে টাকা অর্জন করলেই আমরা বলে ফেলছি: আহা, কতই না ভাল কাজ হচ্ছে। বাকি যে সব ছবিকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্রড পাবলিসিটি চলে, সেই ছবিগুলো আদপে তো চলছেই না। তার মানে কি কলতাকা শহরে প্রতিভা নেই? প্রচুর আছে। কিন্তু তাঁরা কাজের সুযোগ পান না। আর পেলেও তাঁদের সামনে আসতে দেওয়া হয় না। এই বিষয়টাই আত্মঘাতী। একটা কালচারাল শহর, একটা ডেমোক্রেটিক শহর… এদেরকে সামনে আসতে দেয় না। সবাইকে নিজের জায়গাটা বুঝে নিতে দিচ্ছে না। এটাই দুঃখের।
একজন ১০টা কাজ করতেই পারে
একশো শতাংশ ঠিক। কারণ যাঁর দর্শকমহলে চাহিদা বেশি, তিনি বেশি ছবি করতেই পারেন। দেবের ছবি চললে দেব বেশি কাজ করবে না? নিশ্চই করবে। জিৎ করবে না? নিশ্চই করবে। এতে তো কোনও দ্বিমত নেই। আমার বক্তব্য হচ্ছে: আর একজন যে ভাল কাজ করে, যাঁর সুযোগ আছে দর্শকের সামনে আসার, তাঁকে আসতে দেওয়া হয় না। কিংবা তিনি করেও ফেললেন একটা ছবি, কিন্তু ছবিটাকে উঠতে দেওয়া হবে না। এই যে দর্শকের কাছে পৌঁছতে দেব না, এই জিনিসটা আমার ভাল লাগে না। তুমি সবাইকে সুযোগ দাও, দর্শক বিচার করুক। একটা ভাল ছবি—জোর করে তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে তুলে দেওয়া হল, তার জন্য দায়ী কে?
মিডিয়া সমানভাবে দায়ী
একটা সহজ বিষয় বলি: আমার ছোটবেলায় যে কালচারটা ছিল, বাণিজ্যিক ছবির কখনও সাহায্যের প্রয়োজন হত না। তাদের নিজের একটি প্রচারের মাধ্যম ছিল। তখন সংবাদমাধ্যম কাদের পাশে দাঁড়াত? ভাল ছবির পাশে, ছোট ছবির পাশে। ধরে-ধরে সাপোর্ট করত, তা নিয়ে দারুণ-দারুণ সব লেখালিখি হত। চর্চা হত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা হত। এভাবেই ছবিগুলো সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে যেত। সেটা এখন কোথায়? এখন সংবাদমাধ্যম কেমন যেন আত্মসমর্পন করে দিয়েছে এই পরিস্থিতির কাছে। তাহলে সবটাই যদি এভাবে একতরফা হয়ে ওঠে, তবে কি সত্যিই আমি এটাকে একটা ইন্ডাস্ট্রি বলতে পারি?
প্রতিভার গলা টিপে ধরা হচ্ছে
একজন সাধারণ ছেলে, তার কাছে খুব ভাল গল্প রয়েছে। কিন্তু সে শত চেষ্টাতেও প্রযোজকের কাছে পৌঁছতে পারবে না। কারণ তাকে পৌঁছতে দেওয়া হবে না। একজন বাড়ি বিক্রি করে, গাড়ি বিক্রি করে, একটি ছবি তৈরি করল। কিন্তু সেই ছবিকে মুক্তি পেতে দেওয়া হল না। রিলিজ় হতে গেলে তার পোস্টার ছিঁড়ে দেবে, রিভিউ করতে দেবে না। কেউ পাশে দাঁড়াবে না। তাকে নিয়ে চর্চা হবে না। হল পাবে না। হল পেলে স্ক্রিনিং টাইম পাবে না, স্ক্রিনিং টাইম পেলে বাজে টাইম পাবে। চলতে শুরু করলেও ৭ দিনে বন্ধ করে দেওয়া হবে, সেই মানুষটা কীভাবে সামনে আসবে? সেই ছবিতে যে ১০ জন অভিনেতা কাজ করেছেন, তাঁরা কীভাবে সামনে আসবেন?
সাক্ষাৎকারের পরবর্তী অংশ আগামিকাল, ২৩ অগস্ট, মঙ্গলবার।