‘রেড ভলেন্টিয়ার’দের সাহায্যের পোস্ট শেয়ার করেও কেন মুছলেন? ‘ঋদ্ধির অনুরোধে’, মুখ খুললেন রাজ

কারা এই রেড ভলেন্টিয়ার? এ প্রসঙ্গে TV9 বাংলার পক্ষ থেকে সিঙ্গুরের সিপিআইএম মনোনীত সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীর সৃজন ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেন তিনি বলেন, "গত বছর কোভিড পরিস্থিতির সময় থেকেই আমাদের দলের পক্ষ থেকে কোভিডে দরকারি পরিষেবা দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে এই রেড আর্মি। রক্ত, অক্সিজেন, খাবার ইত্যাদি পৌঁছে দেয় তাঁরা।"

'রেড ভলেন্টিয়ার'দের সাহায্যের পোস্ট শেয়ার করেও কেন মুছলেন? 'ঋদ্ধির অনুরোধে', মুখ খুললেন রাজ
মুখ খুললেন রাজ
Follow Us:
| Updated on: Apr 26, 2021 | 6:36 PM

তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া। ‘রেড ভলেন্টিয়ার’দের সাহায্যের পোস্ট শেয়ার করেও কেন ডিলিট করে দিলেন রাজ চক্রবর্তী? কেউ বলছেন পার্টির চাপ। আবার কেউ বা বলছেন ‘না বুঝেই’ প্রতিপক্ষ দলের পোস্ট ‘ভুল করে’ শেয়ার করে ফেলেছেন রাজ! যদিও রাজের দাবি, পার্টির চাপ নয়, বরং যার নম্বর শেয়ার করে সাহায্যের পোস্ট করা হয়েছিল, সেই ‘রেড ভলেন্টিয়ার’ ঋদ্ধির আবেদনেই পোস্টটি মুছে ফেলা হয় তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। গোটা ঘটনা সরেজমিনে ঘুরে দেখল TV9 বাংলা।

সোমবার নিজের ভেরিফায়েড পেজ থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন পরিচালক তথা ব্যারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী রাজ চক্রবর্তী। তাতে জনৈক ঋদ্ধি নামে এক ব্যক্তির নম্বর উল্লেখ করে লেখা হয়েছিল, “হাওড়ার মধ্যে কারও অক্সিজেন সিলিন্ডার, রক্ত, হসপিটালের বেড, পানীয় জল, ওষুধ, অ্যাম্বুলেন্স আরো যে কোনও দরকারে Red volunteers এর এমারজেন্সি হেল্পলাইন নাম্বার।” বর্তমান পরিস্থিতিতে সাহায্যের আশ্বাসের ওই পোস্ট ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরেই রাজের প্রোফাইলে গিয়ে দেখা যায় সেই পোস্ট আর নেই। ততক্ষণে যদিও সেই পোস্টের স্ক্রিনশট ভাইরাল।

কিন্তু কারা এই রেড ভলেন্টিয়ার? কোনও বামপন্থী সংগঠন নাকি স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা? এ প্রসঙ্গে TV9 বাংলার পক্ষ থেকে সিঙ্গুরের সিপিআইএম মনোনীত সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীর সৃজন ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেন তিনি বলেন, “গত বছর কোভিড পরিস্থিতির সময় থেকেই আমাদের দলের পক্ষ থেকে কোভিডে দরকারি পরিষেবা দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে এই রেড আর্মি। রক্ত, অক্সিজেন, খাবার ইত্যাদি পৌঁছে দেয় তাঁরা।”
আর ঋদ্ধি-তিনি কে? কী তাঁর পরিচয়? অভিনেতা জয়রাজ ভট্টাচার্য রাজের ওই মুছে দেওয়া পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে নেটিজ়েনদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ঋদ্ধির। রাজকে খানিক কটাক্ষ করেই ঋদ্ধি লিখেছেন, “মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়ে উতলা হয়ে পড়া সিনেমা নির্দেশক, তথা তৃণমূল জননেতা রাজ চক্রবর্তী, গত এক বছর ধরে, লকডাউনে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাগাতার কাজ করে চলা শ্রমজীবী ক্যান্টিনের অন্যতম প্রধান সংগঠক Riddhi Rit এর নাম্বার শেয়ার করে বলছেন যোগাযোগ করতে হাওড়া জেলায় কোভিড আক্রান্ত কারোর প্রয়োজন হলে। এবং পরিচয়টাও ঠিকই লিখেছেন- রেড ভলান্টিয়ার ঋদ্ধি ঋত।”

 

গোটা ঘটনায় সোশ্য়াল মিডিয়ায় চুপ থাকলেও TV9 বাংলার কাছে প্রথমবার মুখ খুললেন রাজ। তিনি বলেন, “বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে রেড ভলেন্টিয়ার বলে নয়, রেড, গ্রীন, গেরুয়া যে কোনও ভলেন্টিয়ারই যদি মানুষের পাশে থাকেন, সেই পোস্ট শেয়ার করতে আমার কোনও অসুবিধে নেই। সাহায্যের ওই পোস্টটি আমার সোশ্য়াল মিডিয়ায় পাই। পোস্টটি শেয়ার করার পর আমার নম্বরে একটি মেসেজ আসে। সেখানে ঋদ্ধি রীত নামক এক ব্যক্তি আমায় লেখেন, ‘হাওড়ার রেড ভলেন্টিয়ার’ হিসেবে তাঁর নম্বর দেওয়া হলেও এই মুহূর্তে তিনি ওই উদ্য়োগের সঙ্গে যুক্ত নন। উনি আমায় অনুরোধ করেন পোস্টটি মুছে দেওয়ার জন্য। সে কারণেই পোস্টটি মুছে দিই। কারণ, অকারণে ওই ব্যক্তির নম্বর ভাইরাল হওয়া মানে যিনি সত্যি দরকারে ফোন করছেন, তাঁরও হয়রানি আর ঋদ্ধিরও অসুবিধে।”

প্রসঙ্গত, ঋদ্ধি নিজেও ফেসবুকে ওই মর্মে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। তিনি লিখেছেন, “গতকাল কেউ আমার সাথে যোগাযোগ না করেই, এই কোভিড সময়ে হাওড়ার “রেড ভলেন্টিয়ার” লিখে আমার নাম ও নম্বর post করেছেন। এটি অত্যন্ত ভালো কাজ। স্বাভাবিক ভাবেই আমার কাছে অসংখ্য মানুষের ফোন আসছে, অক্সিজেনের জন্য কিন্তু আমি কোনভাবেই তাদের সাহায্য করতে পারছি না কারণ আমি এই মুহূর্তে অন্য কাজে থাকায় এই কাজের সাথে কোন ভাবেই যুক্ত নই।”

 

 

রাজকে ব্যক্তিগত ভাবে মেসেজ করেছেন ঋদ্ধি। স্ক্রিনশট সৌজন্যে- রাজ চক্রবর্তী

 

তা হলে কি যাচাই না করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেওয়া হল ওই পোস্ট? কে করলেন? এ প্রসঙ্গে ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের মুখপাত্র ও ‘রেড ভলেন্টিয়ার’দের অন্যতম সদস্য কলতান দাশগুপ্তের বক্তব্য, “হতে পারে আলোচনা না করেই ওর নাম্বার দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ঋদ্ধি আমাদের কমরেড। নানা সময়ে নানা কাজে যোগ দেয় ও। কমিউনিটি কিচেন চালিয়েছিল, হাল্লা গাড়ি করেছিল। এখন হয়তো অন্য কোনও কাজে ব্যস্ত আছে। তাই সবাইকে রেসপন্ড করতে পারছে না বলে ওইটা লিখেছে।”

অন্য দিকে, গতকালই ফেসবুকে এক পেজের মাধ্যমে রাজ চক্রবর্তী-সহ তৃণমূল এবং বিজেপির বেশি কিছু তারকা প্রার্থীর ব্যক্তিগত ফোন নাম্বার প্রকাশ করে দেওয়া হয়। তাতে লেখা হয়, “ওঁরা মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছিল। তাই নাম্বার দেওয়া হল…”। আর এই ঘটনার পর থেকেই মিনিটে-মিনিটে অসংখ্য ফোন ঢুকছে রাজের কাছে। এই ঘটনায় বিরক্ত রাজ। তাঁর নিশানায় সিপিএম।

 

এসেছে সাহায্যের অনুরোধ। স্ক্রিনশট সৌজন্যে-  রাজ চক্রবর্তী।

 

রাজের কথায়, “সিপিএম-এর মদতপুষ্ট ওই পেজ থেকে যা করা হয়েছে, তা এক কথায় ঘৃণ্য।” তিনি বলেন, “এই কাজটা যারা করেছেন তা থেকেই তাদের বিকৃত মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। সিপিআইএম দলটিকে তো আমি সেনসিবল ভাবতাম। ওদের যে ইয়ং জেনারেশনটা রয়েছে তাঁদের প্রত্যেককে বিচক্ষণ ভেবেছিলাম। কিন্তু ওঁদের মদতে ওই পেজ থেকে যা করা হল তাতে করে ওঁরা আবারও প্রমাণ করে দিল যে ওঁরা কতটা নিচে নামতে পারে! গতকাল আমাকে ভূমি পেডনেকর ফোন করেছিলেন কলকাতায় তাঁর এক পরিচিতর সাহায্যের জন্য, বিদেশ থেকেও ফোন এসেছে। সব ব্যবস্থা করেছি আমি। ব্যারাকপুরে ইতিমধ্যেই সেফ হোমের ব্যবস্থা করেছি। টিটাগড়েও কাজ চলছে। এই অবস্থায় নম্বর ভাইরাল করে দেওয়ায় এত ফোন ঢুকছে যে যাঁদের সত্যি দরকার তাঁদের ফোনই ধরতে পারছি না। অনেকে তো এমনি এমনি ফোন করছেন। কারণ ছাড়াই, দরকার ছাড়াই। আমি জানি না ওঁরা কেন এটা করলেন!” রাজ যোগ করেন, “আমাদের দিকে আঙুল তোলা খুব সহজ। কিন্তু যারা এই কাজ করেছে তা কি সুস্থ মানসিকতার পরিচয়?”

এ প্রসঙ্গে সিপিএম নেতা সৃজন ভট্টাচার্য যদিও বলেন, “ফেসবুকের ওই পেজটি আমাদের পার্টির কোনও পেজ নয়। শুনেছি একটি ছেলে চালায়। ছেলেটি পার্টির সদস্য নয়। ওই পেজেই দেখলাম সে দাবি করেছে এফিডেভিট থেকে নম্বর পেয়েছে। কিন্তু কেন এমন করেছে, সে বিষয়ে ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি।”