Soumitra-Sabitri: সৌমিত্রদা নেই মনে করলেই মনে হয় আমিও হয়তো এক বছরের মধ্যেই চলে যাব: সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়

ছবি আসছে, যাচ্ছে, চলছে, চলছে না... এ সবের মধ্যেই সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ফিরে যাচ্ছেন বহু বছর আগে কোনও এক দিনে, যে দিন নিজের হাতে রান্না করে খাইয়ে ছিলেন প্রিয় বন্ধুকে। প্রিয় বন্ধুও পরিতৃপ্তির হাসি হেসে পাল্টা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ‘খাসা হয়েছে’।

Soumitra-Sabitri: সৌমিত্রদা নেই মনে করলেই মনে হয় আমিও হয়তো এক বছরের মধ্যেই চলে যাব: সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়
গ্রাফিক- অভিজিৎ বিশ্বাস।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 15, 2021 | 7:58 PM

বিহঙ্গী বিশ্বাস:  একসঙ্গে সুদীর্ঘ পথচলা… কত ছবির স্মৃতি। হাতের রান্না আর অবসরে বাড়িতে গিয়ে হই-হুল্লোড়। বয়সের ফারাক ছিল না খুব বেশি। দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল দারুণ। এই তো বছর কয়েক আগেও ওঁরা ‘প্রাক্তন’-এ কাজ করলেন একসঙ্গে। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের মুখে ‘আরশোলা ফড়ফড় করে উড়তা হ্যায়’ শুনে হেসে গড়িয়ে পড়লেন আপনি। আবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কন্ঠে ‘হঠাৎ দেখা’ শোনামাত্রই হোয়াটসঅ্যাপে সেই কবিতা ফরওয়ার্ড করলেন কাছের মানুষকে।

আজ যদিও সবটাই স্মৃতি। এক বছর টলিউড ‘সৌমিত্রহীন’। ছবি আসছে, যাচ্ছে, চলছে, চলছে না… এ সবের মধ্যেই সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ফিরে যাচ্ছেন বহু বছর আগে কোনও এক দিনে, যে দিন নিজের হাতে রান্না করে খাইয়ে ছিলেন প্রিয় বন্ধুকে। প্রিয় বন্ধুও পরিতৃপ্তির হাসি হেসে পাল্টা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ‘খাসা হয়েছে’।

TV9 বাংলা ফোন করতেই খানিক থামলেন কিংবদন্তী অভিনেত্রী। মনের কোনও এক গভীর ক্ষত হাতড়িয়ে বলতে শুরু করলেন, ‘‘এক বছর হয়ে গেল না… কী বলি বলুন তো? সৌমিত্রদাকে নিয়ে বলতে গেলেই জিভটা কেমন আড়ষ্ট হয়ে আসে। ভয় হয়। আজকের পরিচয় নয় তো… বহুদিন কেটে গিয়েছে। এত প্রিয়জন ছিল আমার কাছে, ওর স্ত্রীও মারা গেল, এক বছরের মধ্যেই…।’’ কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন সাবিত্রী। তারপর স্মৃতি হাতড়ে আবারও বলতে শুরু করলেন, ‘‘দীপা মানে সৌমিত্রদার স্ত্রী আমার ভীষণ ভাল বন্ধু ছিল জানেন। ও-ও মারা গেল। এক বছরও পার হল না। পৌলমী (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা) কত ছোট দেখেছি। এত স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে একটা পরিবারের সঙ্গে… ভীষণ ভালবাসতাম ওদের পরিবারকে।’’

রান্নায় সুনাম রয়েছে সাবিত্রীর। নিজে হাতে খাইয়েছেন কখনও? প্রশ্ন করতেই যেন গলায় আনন্দের রেশ। বললেন, ‘‘কী খেতে ভালবাসত। একদিন বলল, বাড়িতে রান্না করে পাঠিয়ে দিও, মাছের ঝোল-টোল যা আছে। এমন নয় যে পোলাও মাংস কোর্মা কালিয়া রান্না করে খাওয়াতাম রোজ। আমরা যেমন খাই সেরকমটাই করতাম। কিন্তু, কী রসিয়ে খেত। এত তৃপ্তি লেগে থাকতো সারা মুখ জুড়ে…।’’ এখনও রান্না হয় সাবিত্রীদেবীর বাড়ি। তবে এখন, ‘রান্না করে পাঠাও’-এর ‘নির্দেশ’ আসে না মুঠোফোনে। আসে না পছন্দের রান্নার আবদারও।

তবে তেলে মশলা ফোঁড়নের গন্ধে যখন সারা বাড়ি ভরে ওঠে তখন ‘সৌমিত্রদা’কে মনে পড়ে তাঁর, মনে পড়ে তাঁর মিশুকে চরিত্রের কথা। মনে পড়ে দরাজ গলায় আবৃত্তিপাঠ, রবি ঠাকুরের গান। বললেন, ‘‘যে মানুষ রবি ঠাকুরের এত সুন্দর সুন্দর কবিতা বলতে পারে, সে মানুষ খারাপ হতে পারে… জমিয়ে রাখত সব কিছু।’’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর আর তাঁর বাড়িতে যাওয়া হয়নি সাবিত্রীর। আক্ষেপ রয়েছে খানিক। বলেই ফেললেন, ‘‘দীপাকে মুখটা দেখাতে পারিনি। যাইনি আর ওঁদের বাড়ি।’’

সময় চলে যাচ্ছে। মৃত্যুদিনে সৌমিত্রকে মনে করতে চান না সাবিত্রী। কেন? সে যুক্তিও অভিনেত্রী বড় নিজের। ফোন রাখার আগের মুহূর্তে বললেন, ‘‘আমি মনে করতে চাইনা সৌমিত্রদা নেই। মনে করলেই মনে হয় আমারও দম আটকে আসছে। আমি মানতেই রাজি নই ওর মৃত্যু রয়েছে। মনে করলে হয়তো আমিও এক বছরের মধ্যেই চলে যাব, আর থাকব না।’’ গলাটা খানিক কেঁপে গেল তাঁর?

আরও পড়ুন- Soumitra-Poulami: ‘‘কাজ করে বাপিকে ট্রিবিউট দিচ্ছি, এটাই তিনি চাইতেন’’: পৌলমী