EXCLUSIVE Sudipta Chakraborty: মেরি কমের কোচের নাম লোকে বলতে পারবে? অভিনয় প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে সুদীপ্তা চক্রবর্তী
Acting Coach: TV9 বাংলার মুখোমুখি অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী ও তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরা।
স্নেহা সেনগুপ্ত
তিনি নিজে একজন সু-অভিনেত্রী। পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। মঞ্চ-পর্দা দু’জায়গাতেই সমান দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করেন। তিনি অভিনেতা গড়ার কারিগরও। বেশ কিছু সময় ধরে অভিনেতাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন নিজের বাড়িতেই। খুলেছেন নিজের অ্যাকাডেমি – সুদীপ্তা চক্রবর্তী অ্যাক্টিং অ্যাকাডেমি (SCAA)। হাসি-মজা-আড্ডার ফাঁকে অভিনেতাদের ঘষে-মেজে আরও সুদক্ষ করে তুলছেন অভিনেত্রী। যে অভিনয়ের ‘অ’ পর্যন্ত জানে না, তাঁকে তৈরি করেন শুরু থেকে। আজ সুদীপ্তার প্রশিক্ষণে অনেকে নায়িকা হয়েছেন, অনেকে সুযোগ পেয়েছেন বড় ব্যানারে। কিছু অভিনেতা এমনও আছেন, যাঁরা শুটিংয়ের আগে ওয়ার্কশপ করে যান সুদীপ্তার কাছে। TV9 বাংলার মুখোমুখি সুদীপ্তা চক্রবর্তী ও তাঁর ছাত্র-ছাত্রীরা।
TV9 বাংলার সঙ্গে সুদীপ্তার কথোপকথন:
নিজেকে এককথায় কীভাবে পরিচয় দেবেন?
– অ্যাক্টিং কোচ।
এই যে যখন দেখেন ছাত্র-ছাত্রীরা নামী পরিচালকের ছবিতে কাজ পাচ্ছেন, বড় ব্যানারে সুযোগ পাচ্ছেন, কেমন লাগে বিষয়টা?
– খুবই গর্ববোধ করি। ওঁরা কাজ করছে, এটাই তো সবচেয়ে বড় কথা। আর ভাল ব্যানারে, ভাল পরিচালকের কাছে কাজের সুযোগ পেলে তাঁদের কাজটা সকলের চোখে পড়বে। সেটা খুবই আনন্দের বিষয়।
অ্যাক্টিং কোচ হিসেবে কাজ করার আগে কী ভেবেছিলেন ছাত্রছাত্রীরা এই মাত্রায় সাফল্য পাবেন?
– না, একেবারেই ভাবিনি। আমি খুবই ইনফর্মালি শুরু করেছিলাম। আমার সহকর্মীরা কেউ-কেউ গুরুত্বপূর্ণ ছবিতে কাজ পেলে চিত্রনাট্য নিয়ে আমার কাছে আসতেন। খুবই ইনফর্মালভাবে আমি তাঁদের গাইড করতাম। লকডাউন আনলক হওয়ার পরে আমারই এক পরিচিত আমাকে প্রথাগতভাবে কাজটা শুরু করার উৎসাহ দিয়েছিলেন। তিনি এক ছাত্রীকেও আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন। তাঁকে আমি আমার বাড়িতেই গ্রুম করতে শুরু করি। তিনি তাঁর মেয়েকে আমার কাছে পাঠান। সেই মেয়েটির সে সময় অভিনয় নিয়ে কোনও ধারণা ছিল না। বা কোনও পরিকল্পনাও ছিল না। এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে এক সুপারস্টারের বিপরীতে কাস্ট করা হয়। আমার সেই ছাত্রী বাংলা ছবিতে ডেবিউ করেছেন।
তার মানে ওয়ার্ড অফ মাউথে সকলে জানতে শুরু করেন প্রথমে?
– একেবারেই। একজনের থেকে অন্যজন জানতে-জানতে ব্যাপারটা ছড়িয়ে গিয়েছে। টেলিভিশন সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজ়, ফিচার ফিল্ম… এইগুলোর আগে প্রযোজক-পরিচালকরা তাঁদের অভিনেতাদের আমার কাছে পাঠাচ্ছেন। এটা আমাকে খুবই আনন্দ দেয় ভিতর থেকে।
আপনারা যখন কাজ করতে শুরু করেছিলেন, এমন কোনও সুযোগ-সুবিধে কিছুই তো ছিল না…
– একেবারেই ছিল না। আমরা এই ধরনের কোনও সুযোগই কোনওদিনও পাইনি। ফলে এটা খুবই ভাল উদ্যোগ যে, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি গ্রুম করানোর বিষয়টা নিয়েও ভাবনাচিন্তা করছে। এবং বিষয়টিকে আমি সাদরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
আপনি তো অনেককে তৈরি করে ফেলেছেন, কখনও কি মনে হয় না ‘দ্রোণাচার্য’ হয়ে লাইমলাইটের বাইরে থেকে গেলেন?
– যতগুলো ক্রিকেটারের নাম আমরা জানি, তাঁদের প্রত্যেকের কোচের নাম কি আমরা জানি? মেরি কমের কোচের নাম লোকে বলতে পারবে? সুতরাং, আমার স্যাটিসফ্যাকশন সেখানেই, যখন আমি দেখি আমার স্টুডেন্ট ভাল পারফর্ম করছে… ওঁরা ভাল করলেই আমি খুশি।
বেশ কিছু ছবিতে কাজের আগে সুদীপ্তার কাছে ওয়ার্কশপ করতে আসেন অঙ্কুশ হাজরা, রুক্মিণী মৈত্র, কৌশানী মুখোপাধ্যায়, ঐন্দ্রিলা সেন, বিক্রম চট্টোপাধ্যায়রা। TV9 বাংলাকে অঙ্কুশ বলেছেন:
– ‘ম্যাজিক’, ‘এইআইআর’ ছবিগুলোর জন্য দর্শকের প্রশংসা পেয়েছিলাম। পুরো ক্রেডিটটাই আমি সুদীপ্তাদিকে দিতে চাই। ম্যাজিকে আমার ডুয়াল পার্সোন্যালিটি ছিল। সুদীপ্তাদি আমাকে খুব সুন্দর করে গ্রুম করেছিলেন। আমরা সবাই ফ্রেন্ডলি পরিবেশে ওয়ার্কশপ করি ওঁর কাছে। সত্যি বলতে, সুদীপ্তাদির ওয়ার্কশপ করা ছবিগুলোয় প্রত্যেকের প্রচুর বাহবা পেয়েছি।
জিতের বিপরীতে ‘রাবণ’, আবির চট্টোপাধ্যায় ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে’বিবাহ বিভ্রাট’-এ পরপর কাজের সুযোগ পেয়েছেন লহমা ভট্টাচার্য, যাঁকে গোড়া থেকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়েছিলেন সুদীপ্তা। TV9 বাংলাকে লহমা বলেছেন:
– একটা সময় আমি জানতাম না কী করব, কী করব না। সুদীপ্তাদি দারুণ একজন অভিনেত্রী। ওঁর কাছে নিজে থেকেই শিখতে গিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, এই মানুষটার থেকে কিছু শিখি। আমার সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ান সেশন করতেন সুদীপ্তাদি। হাতে ধরে আমাকে শিখিয়েছিলেন অনেককিছু। আমি যেহেতু কিছুই জানতাম না, শুরু থেকে বেসিক থেকে আমাকে শিখিয়েছিলেন। ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল, লাইট, বাংলা ভাষা, উচ্চারণ সব শিখিয়েছিলেন হাতে ধরে। সুদীপ্তাদির জন্যই আমি আজ এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি।