শুটিং জট: ‘ভীষণ অসহায় লাগছে’, টলিপাড়ায় শুরু ‘নামমাত্র’ শুটিং, সম্বল হাতেগোনা টেকনিশিয়ান
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী ১৬ জুন থেকে ৫০ জন কর্মী নিয়ে পুনরায় শুট চালু করার অনুমতি দিয়েছিলেন। সেই মতোই এ দিন কলটাইম অনুযায়ী শিল্পী-প্রযোজকরা হাজির হলেও আসেননি টেকনিশিয়ানদের একটা বড় অংশ। সকাল গড়িয়ে দুপুর এলেও শুরু করা যায়নি শুটিং।
অচলাবস্থায় কিছুটা সামাল। দিনভর টালবাহানার পর অবশেষে শুটিং শুরু হল টেলিপাড়ায়। কিন্তু আগামীকাল কী হতে চলেছে তা জানেন না প্রযোজক-শিলীরা। বুধবার ফেডারেশনে অন্তর্গত সমস্ত গিল্ডের অধিকাংশ টেকনিশিয়ানরাই কাজে যোগদান করেননি। বৃহস্পতিবারও কি হবে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি? জানা নেই প্রযোজকদের।
এ দিন সন্ধেবেলা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রযোজক এবং আর্টিস্ট ফোরাম। ওই সাংবাদিক বৈঠকে প্রোডিউসারস গিল্ডের তরফে হাজির ছিলেন শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়, লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, সানি ঘোষ রায়, অশোক ধানুকা সহ অনেকেই। অন্যদিকে আর্টিস্ট ফোরামের তরফে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছেন শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, শঙ্কর চক্রবর্তীরা।
টেকনিশিয়ানদের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “টেকনিশিয়ানরা আসছে না। যারা আসছেন তাঁরাও উধাও হয়ে যাচ্ছেন।” লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “হেল্পলেস মনে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন একসঙ্গে কাজ করি…দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। জানি না শুটিং করতে পারব কিনা?
আরও পড়ুন-ইউনিট প্রতি ৫০ জন কর্মী নিয়ে টলিপাড়ায় শুটিং শুরুর অনুমতি মুখ্যমন্ত্রীর, তবে মানতে হবে কড়া নিয়ম
সমস্যাত্র সূত্রপাত কার্যত লকডাউনের পরেই। প্রযোজক-চ্যানেল শুরু করেছিলেন শিল্পীদের দিয়ে বাড়ি থেকেই শুট করানোর ব্যবস্থা। তাতেই আপত্তি জানিয়েছিল ফেডারেশন। ফেডারেশন অভিযোগ করেছিল ‘শুট ফ্রম হোম’ হলে সমস্যায় পড়তে পারেন কলাকুশলীরা। যদিও প্রযোজকরা জানিয়েছিলেন যে সব টেকনিশিয়ান শুট ফ্রম হোমে সামিল হতে পারছেনও না, তাঁদের জন্যও পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করবেন তাঁরা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যেই জল গড়িয়েছিল অনেক দূর। এরই মধ্যে শুট ফ্রম হোমে নিয়মভঙ্গের অভিযোগে দিন দুয়েক আগে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে নয়টি প্রশ্ন করা হয় প্রোডিউসারস গিল্ডকে। ফেডারেশনের মূল অভিযোগ ছিল শুট ফ্রম হোমের নামে বাইরে গিয়ে শুট করা হচ্ছে। ওই নয়টি প্রশ্নের জবাব কুড়িটি ধারাবাহিকের প্রযোজকদের কাছ থেকে লিখিত ভাবে চেয়ে পাঠান তাঁরা। যদিও প্রযোজকদের তরফে ওই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়নি। ফেডারেশনও জানিয়েছিল উত্তর না পেলে ‘অসহযোগ’-এর পথে হাঁটবেন তাঁরা।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী ১৬ জুন থেকে ৫০ জন কর্মী নিয়ে পুনরায় শুট চালু করার অনুমতি দিয়েছিলেন। সেই মতোই এ দিন কলটাইম অনুযায়ী শিল্পী-প্রযোজকরা হাজির হলেও আসেননি টেকনিশিয়ানদের একটা বড় অংশ। সকাল গড়িয়ে দুপুর এলেও শুরু করা যায়নি শুটিং। গিল্ডের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন টেকনিশিয়ান নিয়ে নামমাত্র শুটিং হয় বিকেলে। এর পরেই সাংবাদিক বৈঠকের ডাক দেন প্রযোজকরা।
এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে প্রযোজক সানি ঘোষ রায় বলেন, “আমরা সবাই মিলে কাজ করে এই জায়গায় এসেছি। জোর করে ভয় দেখিয়ে টেকনিশিয়ানদের তুলে নেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে কাজে এলে গিল্ডের সদস্যপদ বাতিল করে দেওয়া হবে। আবারও বলছি কলাকুশলীদের পাশে আছি আমরা। আমাদের থেকে ভাল ওঁদের আর কেউ বুঝবে না।” অনদ্যিকে এই তর্জা নিয়ে শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসকে নাম না করেই কটাক্ষ করে বলেন, “সবার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে এমন এক শক্তির দ্বারা যার সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির কোনও যোগই নেই। এই ভয়টাই পেয়েছিলাম আগে। যিনি এটা করছেন তাঁর অন্য সংগঠন আছে, তিনি আমাদের ভাতের থালায় লাথি মারছেন কেন?”
এ ব্যাপারে ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমরা দেখছি সমস্ত, ওয়েট অ্যাণ্ড ওয়াচ। আপাতত নিজেদের মধ্যে আলোচনা চলছে। দেখা যাক কী হয়…”।
আরও পড়ুন-শুটিং জট: অনুমতি পেয়েও শুরু হল না শুটিং, এলেন না অধিকাংশ টেকনিশিয়ান
প্রশ্ন হল, আগামীকাল থেকে কি তবে আবারও আগের মতো শুটিং শুরু হবে ? নাকি নামমাত্র টেকনিশিয়ান নিয়েই চালাতে হবে শুটিং? সুরিন্দর ফিল্মসের কর্ণধার নিসপাল সিং রানের কথায়, “আমাদের একসঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত। কাল আবার কলটাইম দেব। কথা বলে একটা সেটলমেন্টে আসব বলে মনে হয়।”