গর্ভবতী বা স্তন্যদাত্রী হলে কোভিড টিকা কি নিতে পারবেন? নিলে তা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ!

সংক্রমণের বীভত্‍স রূপে দেশে সর্বত্র হাহাকার, মৃত্যু মিছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়েও এই মারণ ভাইরাস যেন আরও জাঁকিয়ে বসছে। নয়া রূপে, নতুনভাবে এক অজানা বিপদসংকেত ইতোমধ্যেই এসে পড়েছে।

গর্ভবতী বা স্তন্যদাত্রী হলে কোভিড টিকা কি নিতে পারবেন? নিলে তা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ!
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Updated on: May 05, 2021 | 9:25 PM

দ্বিতীয় সুনামির রেশ সামলাতে না সামলাতে তৃতীয় ঢেউয়ের আগাম সতর্কবার্তা দিয়ে দিয়েছেন চিকিত্‍সকবিজ্ঞানীরা। এই চরম কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে সবচেয়ে অসহায় কারা জানেন? গর্ভবতী ও শিশুরা।

সারা বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড টিকাকরণ প্রক্রিয়া। কিন্তু সেই টিকাকরণ প্রক্রিয়ায় এখনও গর্ভবতী ও শিশুদের স্তন্যপান করানো মায়েদের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়নি। ১৮ বছরের কম বয়সিদের জন্যও এখনও কোনও ঘোষণা করেনি কেন্দ্র। এই জটিল অস্থির সময়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য যে জীবন বাঁচাতে করোনার টিকা কী পেতে পারেন গর্ভবতী ও স্তন্যপান করানো মায়েরা? এখনও পর্যন্ত সারা দেশে প্রথম দফায় এক কোটির বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় এখনও পর্যন্ত ২০ লক্ষ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। গর্ভবতী মহিলাদের কোভিড ডোজ দেওয়া উচিত কিনা সে নিয়ে এখনও দ্বিমত বিজ্ঞানীরা। প্রসঙ্গত, সরাসরি কোনও গর্ভবতী মহিলার উপর হিউম্যান ট্রায়াল দেওয়া হনি। গর্ভাবস্থায় ভ্যাকসিনের ডোজের কারণে ছোট্ট শিশুর শরীরে কেমন প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে এখনও সন্দেহ থাকায় প্রেগন্যান্ট মহিলাদের টিকাকরণ কর্মসূচী থেকে বাইরেই রাখা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কয়েকজন গর্ভবতী মহিলাদের উপর টিকার ডোজ দেওয়া হলে তার ফলাফল খুব মন্দ আসেনি। সদ্যোজাত শিশুর ক্ষেত্রে কতটা সুরক্ষিত সেই নিয়েও চলছে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

তবে দেশের বগু বিশিষ্ট গাইনিকোলজিস্টরা মনে করেন, কোভিড টিকার ডোজ প্রেগন্যান্ট মহিলা ও বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য একাবেরেই নিরাপদ। দেশে এখনও এই কর্মসূচির বাইরে রাখা হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে হয়তো নি.মের পরিবর্তন হতে পারে কয়েকটি ব্যাতিক্রমী ঘটনার মাধ্যমে।

যাঁরা গর্ভবতী নন, আগামী কয়েক বছরে সন্তান নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন না, তাঁরা যে কোনও সময়ে ভ্যাকসিন নিতে পারেন। শুধু তাই নয়, পিরিয়ড চলাকালীনও নিঃসন্দেহে নিতে পারেন এই টিকা। ৪-৬ সপ্তাহের ব্যবধানে টিকার দুটি ডোজ নিতে পারেন। সঙ্গে অবশ্যই মেনে চলতে হবে কোভিড নিয়ম-বিধি।

যাঁরা সদ্য কনসিভ করেছেন, প্রেগন্যান্ট মহিলা, শিশুকে বুকের দুধ পান করান, এমন মায়ের প্রতিও এবার যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়ার সময় এসে গিয়েছে। তাঁরা সমাজে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ তাই নয়, এঁদের মধ্যে সংক্রমণের তীব্রতাও বেশি হতে দেখা যেতে পারে। কারণ এই সময় এঁদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অন্যান্যদের তুলনায় অনেকটাই কম থাকে। বর্তমানে গর্ভবতী মহিলাদের টিকা দেওয়ার ব্যাপারে কোনও বৈজ্ঞানিক তথ্য নেই। তা হলেও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলির চূড়ান্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের উপর ভ্যাকসিন না নেওয়ারই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে মার্কিন দেশে একচি সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, বহু প্রেগন্যান্ট স্বাস্থ্যকর্মীরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন নিজের সাহসের জেরে। তাঁদের মধ্যে খুব কম মাত্রায় টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। ২০২১ সালের এপ্রিলে FOGSI-র বক্তব্যের ভিত্তিতে কেন্দ্র গর্ভবতী ও স্তন্যপানকারী মহিলাদের জন্য টিকা দেওয়া যেতে পারে বলে একটি পরামর্শ দিয়েছে।

কোভিড আবহের মধ্যেই সাধারণত গর্ভবতী মহিলাদের প্রসবের জন্য একটি আলাদা হাসপাতাল বা ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।সেখানে আল্ট্রাসাউন্ড ল্যাব, নবজাতকের পরিচর্চার জন্য বিশেষ ইউনিট, জরুরিকালীন সব ব্যবস্থা ও একটি দক্ষ চিকিত্‍সকের টিমের সবরকম সুবিধা রাখা দরকার। নয় মাস জুড়ে যে টেস্ট ও পরীক্ষাগুলি দরকার হয় তা একদম আলাদাভাবে করানো দরকার। চিকিত্‍সকদের মতে, এই সময় ডাক্তারের পারমর্শ অনুযায়ী ঘরে বসেই হালকা ব্যায়াম করতে পারেন, খাওয়া দাওয়ার দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে, প্রেগন্যান্ট অবস্থায় যে ভিটামিন দেওয়া হয়, তা পুরো কোর্স শেষ করা দরকার।