১৪ দিন পরও করোনার উপসর্গগুলি পিছু ছাড়ছে না! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা, জেনে নিন…

করোনা আক্রান্তের হওয়ার ১৪ দিন কেটে গেলেও উপসর্গগুলি পিছু ছাড়ছে না! দীর্ঘদিন ধরে কাশি, জ্বর, দুর্বলতা, রক্তাল্পতা, অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া, গাঁটে গাঁটে ব্যাথার মতো উপসর্গগুলি রয়েই যাচ্ছে! কেন এমন হচ্ছে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা, জেনে নিন এখানে...

১৪ দিন পরও করোনার উপসর্গগুলি পিছু ছাড়ছে না! কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা, জেনে নিন...
করোনার উপসর্গ
Follow Us:
| Updated on: Apr 29, 2021 | 6:34 PM

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। যাঁরা ইতোমধ্যেই কোভিড পজিটিভ, তাঁদের মধ্যে মারাত্মক ক্লান্তি, গলা ব্যাথা, জ্বর, কাশির উপসর্গ দেখা গিয়েছে। চিকিত্‍সকদের মতে, করোনা আক্রান্ত হওয়ার ১৪ দিন পর শরীর থেকে ভাইরাসের কোনও লক্ষণ থাকে না। সেক্ষেত্রে রিপোর্ট নেগেটিভ আসাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই নয়া স্ট্রেনে দেখা যাচ্ছে ১৪ দিন পরও কাশি. গাঁটে গাঁটে ব্যাথা, বুকে ব্যাথা, মাংসপেশীতে ব্যাথা, মাঝে মাঝেই জ্বর আসার মতো লক্ষণগুলি দেখা যাচ্ছে। এই উপসর্গগুলি করোনার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হলেও হতে পারে। আবার মারণ ভাইরাসের জেরে এই উপসর্গগুলিই স্থায়ী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে।

ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন দ্বারা একটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, করোনা জয় করার পর বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে নিজেদের যত্ন নেওয়ার প্রবণতা দেখা দিলেও কিছু কিছু উপসর্গ আগে না থাকলেও করোনা-পরবর্তী সময়ে তা দেখা যাচ্ছে। শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি, পেশিতে ব্যাথা, কাশির মতো উপসর্গগুলি যেমন দেখা দেয়, তেমনি হার্ট রেট, অবসাদ ও কিডনির সমস্যাও নতুন করে দেখা দিতে শুরু করেছে। এমন অবস্থাকে চিকিত্‍সকরা দীর্ঘকালীন করোনা (Long COVID) বলে ব্যাখ্যা করছেন। এমন ঘটনার সঙ্গে সোয়াইন ফ্লু, ইবোলা, SARS-র পোস্ট-ভাইরাল সিন্ড্রোমেরও মিল পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

বিশেষজ্ঞদের কথায়, এটি এতদিনে প্রমাণিত যে কোভিডের জের দীর্ঘকালীন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের উপর প্রভাব ফেলে। করোনা থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়ার পরও অধিকাংশের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা ( ARDC) . অস্বাভাবিকভাবে হার্ট রেট বেড়ে যাওয়া, স্ট্রোকের উপসর্গ দেখা দেওয়া, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া, উদ্বেগ বেড়ে যাওয়া. স্টেস বেড়ে যাওয়া, স্মৃতিশক্তির সমস্যা, গন্ধ-স্বাদ না পাওয়া, স্নায়ুজনিত সমস্যার কারণে মাথাব্যাথা, ডায়াবেটিস. স্থূলতা, কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা. কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়ারিয়া, অ্যাসিডিটি, পা ও ফুসফুসে রক্ত জমাট বাধা, ত্বক ও চুলের সমস্যা. দীর্ঘকালীন কিডনির সমস্যার জেরে ডায়ালিসিস নেওয়া. রক্তাল্পতা, অবসাদ গ্রাস করার মতো উপসর্গগুলি থেকে যাচ্ছে। একটি শরীর যখন মারাত্মক ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তখন দেহের বিভিন্ন অঙ্গগুলিতে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। এর জেরে শরীরের স্নায়ু ও অন্যান্য অঙ্গের উপর প্রভাব তৈরি করে। ফলে রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও কয়েক মাস পরেও এই উপসর্গগুলি দেখা যায়।

প্রসঙ্গত, করোনার জেরে অনেকেরই গন্ধ ও স্বাদ পান বহুদিন ধরে। এমনকি রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও তা ফিরে পান না। করোনাভাইরাস নাকের কোষগুলিকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করার জেরে এই ইন্দ্রিয়গুলি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, অনেকেরই চুল ও ত্বকের সমস্যা তৈরি হয়। চর্ম বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা আক্রান্তের ৫৫দিন পরও অতিরিক্তহারে চুল ঝরে পড়ার লক্ষণ দেখা যায়।

তবে এ প্রসঙ্গে চিকিত্‍সক-বিজ্ঞানীদের পরামর্শ, কোভিড ১৯ সংক্রামিত হওয়ার পর আপনার জীবনযাত্রায় সামঞ্জস্য না আনলে আরও বিপদের মুখে পড়তে পারেন। সুষম খাদ্য আহার করা, অ্যালকোহল যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা, ধূমপান ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি পরবর্তী কয়েকমাস সাবধানতা অবলম্বন করে পথ চলার পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা।