Sleep Disorders: কম ঘুম থেকে ক্যানসার? ভাল ঘুমের জন্য যা কিছু মেনে চলতে হবে
What are Sleep Disorders: কম ঘুমের কারণে আমাদের দেশে প্রোস্টেট ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার, প্যাংক্রিয়াটিক ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসার, কোলন ক্যানসারের প্রকোপ বাড়ছে। সম্প্রতি সমীক্ষা থেকেই উঠে এসেছে এই তথ্য। শুধু তাই-ই নয়, মেটাবলিক ডিসঅর্ডার, টাইপ টু ডায়াবেটিস, ইনসুলিন রেজিসট্যান্স এসবেরও ঝুঁকি থাকে কম ঘুমের প্রভাবে।
রেশমী প্রামাণিক
‘ঘুম পাড়ানি মাসি-পিসি/মোদের বাড়ি এসো,/খাট নাই পালং নাই/খোকার চোখে বসো।/বাটা ভরে পান দিবো/গাল ভরে খেয়ো,/খোকার চোখে ঘুম নাই/ঘুম দিয়ে যেয়ো…’ ঘুমপাড়ানি গান গাওয়ার রেওয়াজ এখনকার নিউক্লিয়ার পরিবারে প্রায় নেই বললেই চলে। আধুনিক দিদা-ঠাকুমাদের হাতে সময় থাকলেও নাতি-নাতনিরা ছোট থেকেই মোবাইলে আসক্ত। মা-বাবা সকাল থেকে ছুটছেন রুটি-রুজির খোঁজে। সন্তান-সন্ততির দিন কাটছে পরিচারিকার কাছে। অফিস ফেরত ক্লান্ত বাবা-মা উপায়ান্তর না-দেখে মোবাইল তুলে দিচ্ছে শিশুর হাতে। আর এই সব কিছুর জেরে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। নাইট শিফটের চাকরি থেকে শুরু করে ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্সা ঘেঁটে ঘ হয়ে যাওয়া জীবনের ইঁদুর দৌঁড়ে নাম লেখাতে বাধ্য হয়েছে প্রায় সকলেই। আর এই কারণেও ঘুম ছুটেছে অনেকের। ঘুমের ঘাটতি এখন বিশ্বজুড়ে। দিনের পর দিন কম ঘুমের কারণে শরীরে জাঁকিয়ে বসছে একাধিক রোগ ব্যাধি।
ওজন বাড়ছে, ডায়াবেটিস-উচ্চরক্তচাপের মত সমস্যা জাঁকিয়ে বসছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ক্যানসারের সম্ভাবনাও। প্রোস্টেট ক্যানসারের সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ বেড়ে যায় এই কম ঘুমের কারণে। এমনকী ফুসফুসের ক্যানসার, প্যাংক্রিয়াটিক ক্যানসার, ওভারিয়ান ক্যানসারের কারণও দিনের পর দিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না-হওয়া। আজকাল অধিকাংশ সমস্যার সূত্রপাত এই কম ঘুম থেকে। আর তাই মানুষকে সচেতন করতে, সজাগ করতে এবং ঘুমের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে ১৫ মার্চ পালন করা হয় World Sleep Day। ঘুম নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে সম্প্রতি শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি বিশেষ আলোচনাচক্র। World Sleep Society-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনার আয়োজন করেছিল Calcutta Sleep Society। ঘুম নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে রয়েছে অগুণতি প্রশ্ন। তার থেকেই কিছু প্রশ্ন সাজিয়ে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় Senior Consultant Sleep Specialist ডাঃ সৌরভ দাসের সঙ্গে।
প্রশ্ন: আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগেও ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে বাচ্চাকে ঘুম পাড়াতেন মা-ঠাকুমারা। এখন ভরসা মোবাইল। কম ঘুমের কারণ কি প্রযুক্তির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ?
ডাঃ দাস: প্রযুক্তির যেমন আমাদের জীবনে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তেমনই অধিক ব্যবহারে এর ক্ষতিকর কিছু দিকও আছে। এখনকার মায়েরা সকলেই ব্যস্ত। সারাদিনের পরিশ্রম শেষে বাড়ি ফিরে তাঁরাও খুব ক্লান্ত থাকেন। আর সেই সময় গান গেয়ে বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানোর মতো এনার্জি থাকে না। তখন বাচ্চাদের হাতে বাধ্য হয়ে মোবাইল তুলে দেন অথবা মোবাইলে গান শুনিয়ে ঘুম পাড়ান। মোবাইলের প্রভাবে বাচ্চাদের Biological Clock-এর গঠন পরিপূর্ণ হয় না। একেবারে সদ্যোজাত বাচ্চাদের ১৮-২০ ঘন্টা করে ঘুমের প্রয়োজন হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে থাকে। পূর্ণ বয়স্কদের ক্ষেত্রে ৭-৮ ঘণ্টা। বাচ্চার হাতে ফোন দেবেন না। নীলচে আলোয় চোখের অনেক বেশি ক্ষতি হয়। একটু দূরে রেখে গল্প বা গান শুনলে ক্ষতি নেই। কম ঘুমের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে প্রযুক্তি দায়ী অবশ্যই।
প্রশ্ন: অনেক মা-বাবাকেই ওয়ার্ক ফ্রম হোমে রাত জেগে কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে তা-ও কি প্রভাব ফেলছে এই কম ঘুমের সমস্যায়?
ডাঃ দাস: যদি বাচ্চাকে পাশে নিয়ে কাজ করতে হয়, তাহলে কিছুটা ক্ষতি তো হয়ই। বাচ্চার ঠিকমতো ঘুম হয় না কারণ সে ঘুমোতে চায় না। বাচ্চার সঙ্গে একই ঘরে ল্যাপটপে বা কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ না-করাই ভাল। আসলে বাচ্চারা সব সময় চায় যে, মা-বাবা তার সঙ্গে থাকুক। যে কারণে মা-বাবা যতক্ষণ জেগে থাকে, তারাও চেষ্টা করে জেগে থাকবে। একই সঙ্গো বাচ্চারা বড়দের দেখে শেখে। যদি দেখে যে, মা-বাবা রাতে ল্যাপটপ বা ফোন ঘাঁটছে, তখন তাদেরও মনে হয় ঘুমনোর সময় ফোন ঘাঁটতে হবে। তারা তো আর মা-বাবার রুটি-রুজির প্রয়োজন বোঝে না।
প্রশ্ন: ইঁদুর দৌড় কতখানি প্রভাব ফেলছে ঘুমে?
ডাঃ দাস: একরকম জোর করেই সকলে ইঁদুর দৌড়ে নাম লেখাচ্ছে। মা-বাবারা তাঁদের অপূর্ণ ইচ্ছে চাপিয়ে দেন সন্তানের উপরে। ফলে চাপ তো বাড়েই। সঙ্গে আমাদের প্রত্যাশাও চড়ছে। কম ঘুম হলে অনেক রকম সমস্যা তো হয়ই। আর প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে বাচ্চাদেরও কিন্তু ডিপ্রেশন হয়। এতে মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়, আর তা ঠিকমতো কাজও করে না।
প্রশ্ন: কম ঘুমের কারণে কোন কোন ক্যানসার বাড়ছে?
ডাঃ দাস: কম ঘুমের কারণে আমাদের দেশে প্রোস্টেট ক্যানসার, ফুসফুসের ক্যানসার, প্যাংক্রিয়াটিক ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসার, কোলন ক্যানসারের প্রকোপ বাড়ছে। সম্প্রতি সমীক্ষা থেকেই উঠে এসেছে এই তথ্য। শুধু তাই-ই নয়, মেটাবলিক ডিসঅর্ডার, টাইপ টু ডায়াবেটিস, ইনসুলিন রেজিসট্যান্স এসবেরও ঝুঁকি থাকে কম ঘুমের প্রভাবে। দিনের পর দিন কম ঘুমোলে বা ঘুম না হলে প্রোস্টেট ক্যানসারের সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ বেড়ে যায়। বর্তমানের যাবতীয় লাইফস্টাইল ডিজিজের কারণ হল এই কম ঘুম।
প্রশ্ন: আর্লি মেনোপজ, ইনফার্টিলিটির ক্ষেত্রে কম ঘুমের ভূমিকা কতখানি?
ডাঃ দাস: কম ঘুমের কারণে একাধিক সমস্যা হতে পারে। কোভিড-পরবর্তী সময় থেকে এই কম ঘুমের সমস্যা অনেক বেশি বেড়েছে। একই সঙ্গে মানুষের মধ্যে অ্যাংজ়াইটি, স্ট্রেস বেড়েছে। ঘুম কম হলে শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হয়। সাইটোকাইনিনের পরিমাণ কমে। সাইটোকাইনিন শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সাইটোকাইনিন হরমোনের পরিমাণ কমতে থাকলে অজান্তেই অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ক্ষতি হয়। আচমকা হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতাও বেড়েছে। কোভিড-পরবর্তী সময়ে আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ অনেকখানি বদলে গিয়েছে। সামগ্রিকভাবে জীবন নিয়ে চাপ বেড়েছে, কর্মক্ষেত্রে সমস্যা বাড়ছে। সব মিলিয়ে ইনফার্টিলিটি অর্থাৎ বন্ধ্যাত্বের সমস্যাও বাড়ছে।
প্রশ্ন: ঘুমের ওষুধ খাওয়া কি ভাল?
ডাঃ দাস: একেবারেই ভাল নয়। নিজে থেকে কিনে একেবারেই খাবেন না। যদি চিকিৎসক খেতে বলেন, তবেই খান। দীর্ঘমেয়াদি ঘুমের ওষুধ একেবারেই নয়। বহুক্ষেত্রেই এমনটা হয় যে, চিকিৎসক হয়ত দু’সপ্তাহ ওষুধ খাওয়ার পর আবার পরবর্তী ভিজিটের জন্য আসতে বলেছেন। অনেকেই তা উপেক্ষা করে একটানা ওই ওষুধ খেয়ে যান। এতে মারাত্মক ক্ষতি হয়। ঘুমের ওষুধ কখনও সারাজীবন খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ইষদুষ্ণ জলে স্নান করুন, ভাল ঘুম হবে।
প্রশ্ন: ভাল ঘুমের জন্য যা কিছু মেনে চলতে হবে-
ডাঃ দাস: ১. রোজ একই সময়ে ঘুমোতে যান এবং একই সময়ে ঘুম থেকে উঠুন
২. একবার ঘুম থেকে উঠে আবার বিছানায় যাবেন না
৩. সন্ধ্যে ৬ টার পর কোনও রকম চা, কফি, কোল্ডড্রিংক খাবেন না
৪. ঠিক সময়ে খাওয়া-দাওয়া সারুন
৫. একটা রুটিন মেনে চলতে পারলে সবথেকে ভাল
৬. ঘুমোতে যাওয়ার আগে সারা বছর ইষদুষ্ণ জলে স্নান করুন। এতে ক্লান্তি দূর হবে আর ঘুমও খুব ভাল হবে। এই অভ্যাস রপ্ত করতে পারলে আপনারই লাভ