অল্পতে সন্তুষ্টি নয়, শিশুদের পুষ্টির জন্য দরকার প্রাণীজ-উদ্ভিজ্জ্য প্রোটিনের সমতা বিধান, দাবি বিশেষজ্ঞদের

Nutrition For Kids: নিউট্রিশন মনিচরিং বোর্ডের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বেশিরভাগ শিশুই এই পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত। শরীরের প্রয়োজনীয় ভাতটুকুও তারা পায়নি। ভারতের বিভিন্ন শস্যদানা থেকেই মোট প্রোটিন চাহিদার ৬০ শতাংশ পাওয়া যায়। শিশুরা সেই হিসেব থেকেও কিন্তু বঞ্চিত।

অল্পতে সন্তুষ্টি নয়, শিশুদের পুষ্টির জন্য দরকার প্রাণীজ-উদ্ভিজ্জ্য প্রোটিনের সমতা বিধান, দাবি বিশেষজ্ঞদের
প্রতীকী ছবি।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 30, 2022 | 4:44 PM

দেশে খাবারের অভাব নেই, অথচ দেশের ৩০ শতাংশেরও বেশি শিশু ভুগছে অপুষ্টিতে। ২০১৪-২০১৫ সালের মধ্যে বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ৩৭ শতাংশ ভারতীয় শিশু অপুষ্টির শিকার। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশের ওজন ছিল একেবারেই কম। মহামারীর পর সেই চিত্র কিন্তু আরও করুণ হয়েছে। ভারতের মত কৃষিপ্রধান দেশে বেশির ভাগ বাড়িতে ভরসা হল গম এবং চাল। নিউট্রিশন মনিচরিং বোর্ডের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বেশিরভাগ শিশুই এই পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত। শরীরের প্রয়োজনীয় ভাতটুকুও তারা পায়নি। ভারতের বিভিন্ন শস্যদানা থেকেই মোট প্রোটিন চাহিদার ৬০ শতাংশ পাওয়া যায়। শিশুরা সেই হিসেব থেকেও কিন্তু বঞ্চিত।

ICAR-ন্যাশনাল ব্যুরো অফ প্ল্যান্ট জেনেটিক রিসোর্সেসের তরফে প্রাক্তন অধ্যাপক কেসি বনসল যেমন বলেছেন জনসাধারণকে খাবারের মান বিষয়ে আরও বেশি সচেতন করতে হবে। কোন খাবারের মধ্যে বেশি পরিমাণে পুষ্টি রয়েছে তা জানতে হবে অভিভাবকদের। বাজরা এবং ডালের মত খাদ্যশস্য আরও বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে। বাচ্চাদেরকে বেশি পরিমাণে ডাল খাওয়াতে হবে।

স্কুলের শিশুদের মধ্যে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে, কেন্দ্রীয় সরকার ২০০১ সালে সমস্ত রাজ্যে মিড-ডে মিল স্কিম চালু করেছিল৷ অত্যন্ত কার্যকরী এই স্কিমটি সরকারি এবং সরকার পরিচালিত স্কুলগুলিতে শিশুদের প্রতিদিন দুপুরের খাবার রান্না করে। আর সেই খাবার কিন্তু একদম ফ্রেশ। কোনও রকম বাসি পচা নেই তাতে। থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনও। ইদানিং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকেও অনুরোধ করা হচ্ছে এই স্কীমের আওতায় আসার জন্য। শিশুদের জন্য উদ্ভিজ্জ্য প্রোটিন যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই কিন্তু গুরুত্ব রয়েছে প্রাণীজ প্রোটিনেরও। সয়াবিন তো আছেই। সেই সঙ্গে মিড-ডে মিলে অবশ্য সংযোজন হল ডিম।

“উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিনে আর রুচি নেই এখনকার শিশুদের। ছোট থেকেই তারা চিকেন, নাগেটস, মটন এসবে অভ্যস্ত। আর তাই মিড-ডে মিলে স্কুলের মাধ্যমেই শিশুদের সেই পুরনো খাদ্যাভ্যাস ফিরিয়ে আনতে হবে ,” বলেছেন ভারতের গুড ফুড ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরুণ দেশপান্ডে৷

শুধু স্কুলেই নয়, বাড়িতেও, শিশুদের সাধারণ খাদ্যে সঠিক পুষ্টি এবং প্রোটিন গ্রহণের অভাব রয়েছে যা তাদের সামগ্রিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়। দেশপান্ডের মতে, ‘আজ খাদ্য বিজ্ঞান উচ্চ স্তরের প্রোটিন সহ ভাত, রুটি ইত্যাদি প্রধান খাদ্যকে শক্তিশালী করার পদ্ধতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। মাংস, ডিম এবং দুগ্ধজাতের মতো সাধারণ উৎসগুলি ছাড়াও প্রচুর খাদ্যশস্য খাওয়ার চল বেড়েছে’।

অভিনেত্রী এবং সেলিব্রিটি ফিটনেস ফ্রিক মন্দিরা বেদিও প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে উদ্ভিজ্জ্য প্রোটিন ও সয়াবিনের গুরুত্বকে সমর্থন করেন। সেই সঙ্গে বলেন, “আমার প্রতিদিন কমপক্ষে 20-30 গ্রাম প্রোটিন দরকার। যদিও আগে, আমার একমাত্র সহায় ছিল ডিম ও পনির। তবে এখন পছন্দে বদল এসেছে। আমি মাংস আর সয়াবিন বেশি খাচ্ছি। ”

প্রোটিন-ফর্টিফাইড খাবার যা প্রাণীজ দ্রব্যের ভাল বিকল্প, সে সম্পর্কে নিরামিষাশী পরিবারগুলির মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলস্বরূপ শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে উঠবে, যাতে ওরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের পছন্দমতো খাবার বেছে নিতে পারে। দেশপান্ডে বলেছেন, “সমাজ, শিল্প এবং সরকারের দায়িত্ব হল একত্রিত হওয়া এবং খাদ্য বিজ্ঞানকে কাজে লাগানো যাতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য বেশি উৎপাদন করা যায়।” পরিবারের খাদ্যাভ্যাস যাতে সুষম থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য প্রোটিনের নতুন উৎস সম্পর্কেও কিন্তু জানতে হবে।

সুপরিচিত পুষ্টি ইভাঞ্জেলিস্ট এবং ওয়ান হেলথ প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা ড. শিখা শর্মা গোটাশস্য এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি খাবার পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শ, “পরিবারের প্রতিদিন বিভিন্ন শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত এবং সূর্যমুখী, ঘি ও সরষের তেলের মতো বিভিন্ন রান্নার তেল ব্যবহার করা উচিত। শসা, গাজর, পেঁয়াজের মতো স্যালাদ খাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।”

“খাদ্য শিক্ষাকে স্কুলের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত কারণ তা ছোটদের জীবনের প্রথম থেকেই ভাল খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে,” ডঃ শর্মা আরও যোগ করে বললেন।