Fertility Rate: সন্তানের জন্ম দিতে অনিচ্ছা? ‘বেবিসিটার’ রাখার পরামর্শ দিলেন শহরের মেয়র

South Korea: বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন জন্মহার অর্থাৎ Fertility Rate দক্ষিণ কোরিয়ায়। আর সম্প্রতি এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই সিওলের মেয়রের ঘোষণা: ‘ন্যানির সংখ্যা বাড়াও'

Fertility Rate: সন্তানের জন্ম দিতে অনিচ্ছা? ‘বেবিসিটার’ রাখার পরামর্শ দিলেন শহরের মেয়র
কেন সন্তান ধারণে অনিচ্ছুক এঁরা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 08, 2022 | 8:00 AM

আপনি কি সন্তানের জন্ম দিতে চাইছেন না? ভাবছেন যে হারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে, তাতে আগামিদিনে সন্তান প্রতিপালনের খরচ হু-হু করে বেড়ে যাবে? শুধু তাই-ই নয়, সন্তান প্রতিপালনের সঙ্গে সঙ্গে দাম্পত্য জীবনের ব্যয়ভার উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়ার ভয়ও কি ভাবাচ্ছে আপনাকে? সমাধান কী? উপায় বাতলে দিলেন খোদ মেয়র মশাই। সন্তান ধারণে উৎসাহ হারিয়েছেন যেসব দম্পতি, তাঁদের উদ্দেশে মেয়রের উপদেশ: ‘ন্যানি (Nannies) অর্থাৎ বেবিসিটারের (Babysitter) সংখ্যা বাড়ান।’ হ্যাঁ, আপাতদৃষ্টিতে অবাক করার মতো হলেও জন্মহার (Fertility Rate) প্রসঙ্গে এহেন উপদেশই দিয়েছেন মেয়র। কে এই মেয়র?

তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সিওল শহরের মেয়র ওহ সে-হুন (Oh Se-Hoon)।  সিওল দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী। সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্টে ওহ সে-হুন যা লিখেছেন, তার সারমর্ম মোটামুটি এরকম: ‘ন্যানি’ বা ‘বেবিসিটার’ নিয়োগ করার খরচ কমানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জোগান (Supply)-এর অপ্রতুলতার সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলে সন্তানধারণের ক্ষেত্রে ‘অনিচ্ছুক’ দম্পতিদের ‘ইচ্ছুক’ করে তোলা যাবে। বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন জন্মহার অর্থাৎ Fertility Rate দক্ষিণ কোরিয়ায়। আর সম্প্রতি এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই সিওলের মেয়রের ঘোষণা: ‘ন্যানির সংখ্যা বাড়াও।’ প্রয়োজনের নিরিখে ন্যানির সংখ্যা খুবই কম সেই দেশে। আর ন্যানি পাওয়া গেলেও তাঁদের দক্ষিণা মারাত্মক বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সিওলে বেবিসিটার নিয়োগ অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ একটি বিষয়। যে কারণে সন্তানধারণে উৎসাহ হারিয়েছেন এখানকার দম্পতিরা—অন্তত এমনটাই মনে করেন মেয়র ওহ সে-হুন। তা-ই একমাত্র ন্যানির সংখ্যা বাড়লেই এই সমস্যার অনেকখানি সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। যদিও ২০২০ সালে শিশুজন্মের তুলনায় মৃত্যুর হার বেশি হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রশাসন। কারণ এখানে জন্মের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে অর্থনীতির।

ভারতের মতো দেশে যখন জন্মনিয়ন্ত্রণের নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে হিমশিম খেতে হয় সরকারকে, তখন দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি বছর কমছে নবজাতকের সংখ্যা। বিশ্বের সবথেকে কম জন্মহার অর্থাৎ Fertility Rate এখানেই। বন্ধ্যাত্ব বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে মহিলারা এখানে সন্তানধারণে অক্ষম, এরকমটা একেবারেই নয়। সচেতনার কারণেই এই জন্মহ্রাসের প্রবণতা। সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় সবথেকে বেশি পারিশ্রমিক নেন বেবিসিটাররা। কারণ তাঁরা সংখ্যাতেও কম, সেই সঙ্গে কাজের প্রয়োজনও কমছে কারণ এক বড় অংশের দম্পতি সন্তানধারণে অনিচ্ছুক।

দক্ষিণ কোরিয়ায় অভিবাসনের নিয়ম অনুসারে, যাঁরা বাইরের দেশ থেকে দীর্ঘমেয়াদি ভিসা নিয়ে ‘বিদেশি’ হিসেব সেদেশে আসেন, তাঁরাই অনুমতি পান ‘ন্যানি’ বা ‘বেবিসিটার’ হিসেবে কাজ করার। স্থায়ী কাজের জন্য অবশ্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। তবে কোভিড-বিধি আরোপ হওয়ার পর থেকে কমেছে এই ‘বেবিসিটার’ সংখ্যাও। কোরিয়া ইনস্টিটিউট অফ ইয়ংস্টার কেয়ার অ্যান্ড স্কুলিং-এর একজন গবেষক লি জিওং-ওন যেমন ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’কে জানিয়েছেন, যমজ সন্তানের মা হিসাবে তিনি তাঁর ন্যানিদের যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছিলেন ১২ বছর আগে, এখন তা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন প্রতি মাসে ‘বেবিসিটার’দের খাতে যে পরিমাণ অর্থ প্রতি মাসে গুণতে হয় মা-বাবাকে, ভারতীয় মুদ্রায় তা হিসেব করলে সেই সংখ্যাটি হল: ১,৬৩,৭২৯। দেশের জনসংখ্যা বাড়াতে এবং দম্পতিদের সন্তানধারণে উৎসাহিত করতে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইওল নতুন একটি প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করেছেন। এই প্রকল্প অনুযায়ী প্রতি পরিবার এবং নবজাতকপিছু মাসে ৫৭,১৬৭ টাকা করে ভাতা দেবে সরকার।

কেন দক্ষিণ কোরিয়ায় এত কম জন্মহার?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার অধিকাংশ অল্পবয়সী দম্পতিই ইদানীং সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে অনিচ্ছুক। এর প্রধান কারণ হল আর্থিক বোঝা। দেশের মূল্যবৃদ্ধি, চাকরি এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে সেই দেশের নবীনরা খুবই চিন্তিত। এছাড়াও মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার হার বেশি হওয়ার ফলে তাঁরা কেরিয়ার নিয়েও যথেষ্ট সচেতন। পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষার খরচ এবং সেই সঙ্গে সন্তান-সন্ততির চাকরি পাওয়ার বিষয়টিও ভাবায় আধুনিক মা-বাবাকে। সেসব অনিশ্চয়তার কথা ভেবেই সন্তানধারণের ক্ষেত্রে পিছপা হচ্ছেন অনেক দম্পতি। সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ২০২১ সালে পৌঁছে দেখা যাবে একজন মহিলা তাঁর জীবদ্দশায় পূর্ণ একটি সন্তানও নয়, গড়ে মাত্র ০.৮১টি সন্তান ধারণ করবেন। অর্থাৎ ওই রিপোর্টে যা বলা হচ্ছে, সহজ কথায় তা হল: ‘অনিচ্ছুক’ দম্পতির সংখ্যা এতটাই বাড়ছে যে, ভবিষ্যতের একজন মা মাত্র একটি পূর্ণ শিশুকে নিয়েও নিজের জীবন কাটিয়ে উঠতে পারবেন না।