World Hypertension Day: প্রিয়তম মানুষটির কথা ভাবলে কমতে পারে ব্লাড প্রেশার
High Blood Pressure: রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখার বিকল্প উপায় সম্পর্কে কি আপনার জানা আছে? না, আজকের এই ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন ডে'তে আমরা ডায়েট, এক্সারসাইজ় এসব নিয়ে কোনও কথা বলব না।
পায়েল মজুমদার
নীরব ঘাতকের মতো শরীরে বেড়ে চলে হাইপারটেনশন। যাকে আমরা বলি ‘হাই ব্লাড প্রেশার’ (High Blood Pressure)। রক্তচাপ বেড়ে গেলে কিংবা কমে গেলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু যখন রক্তচাপ ‘উচ্চ’ হয়ে যায়, চিন্তা তখনই বাড়ে। আর এই অবস্থায় একদিন ওষুধ বাদ দিলেই কী ধরনের মারাত্মক অবস্থা ঘটে যেতে পারে এই বিষয়ে আমরা কম-বেশি অনেকেই জানি। তাই চিকিৎসাধীন থাকা এবং নিয়মিত ওষুধ খাওয়ায় উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়। কিন্তু রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখার বিকল্প উপায় সম্পর্কে কি আপনার জানা আছে? না, আজকের এই ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন ডে’তে (World Hypertension Day) আমরা ডায়েট, এক্সারসাইজ় এসব নিয়ে কোনও কথা বলব না। লাইফস্টাইল ডিজ়িজের খাতায় যখন হাই ব্লাড প্রেশার নাম লিখিয়েছে, তখন জীবনধারা নিয়ন্ত্রণ করা, নিয়মিত চিকিৎসাধীন থাকাই আমাদের প্রাথমিক কর্ম। কিন্তু এর বাইরে গিয়েও আমরা নিজেদের ভাল রাখতে পারি।
শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে গেলে মনকেও ভাল রাখা জরুরি। আপনি হয়তো অনেক ক্ষেত্রে শুনতে থাকবেন, অতিরিক্ত মানসিক চিন্তার কারণে বেড়ে গিয়েছে ব্লাড প্রেশার। এখানে কোনও ভুল নেই। আমাদের শারীরিক অসুস্থতার যোগসূত্র কোথাও গিয়ে মনের সঙ্গে মিলেছে। আর উচ্চ রক্তচাপকে যদি বাগে রাখতে হয়, তাহলে মনের যত্ন নিতে হবে। অন্তত এমনই কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে নতুন গবেষণা।
২০১৯ সালে সাইকোফিজিওলজিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয় একটি গবেষণা। যেখানে দাবি করা হয় যে, প্রিয় মানুষটির কথা ভাবলে আপেক্ষিক ভাবে স্বাভাবিক থাকে রক্তচাপ। সহজ করে বলতে গেলে, যেই মুহূর্তে রক্তচাপ স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে গিয়েছে, শরীরে অস্বস্তি অনুভব করছেন, তখন যদি ভালবাসার মানুষটির কথা মনে মনে চিন্তা করেন, তা হলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায় ব্লাড প্রেশারকে। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কাজে দেয় এই দুরন্ত কৌশল। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, অন্তত এমনটাই বলছে ওই গবেষণা।
২০১৯ সালে হওয়া ওই গবেষণায় ১০২ জন স্নাতক স্তরের পড়ুয়ার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। এখানে তাদের প্রত্যেকেরই কমপক্ষে এক মাসের একটি প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই গবেষণার শুরুতে প্রথমে প্রত্যেক পড়ুয়াকে একটি প্রাকৃতিক, নৈসর্গিক ভিডিয়ো দেখানো হয়, যেটা তাদের মনকে শান্ত করে এবং প্রেশার ও হার্ট রেটকে স্বাভাবিক স্তরে আনে।
এরপরেই এই ১০২ জন পড়ুয়াকে তিনটি ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। প্রত্যেক গ্রুপকেই বলা হয় কনকনে বরফ-গলা জলে ৪ মিনিট পর্যন্ত নিজেদের পা ডুবিয়ে রাখতে। এর মধ্যে প্রথম গ্রুপে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে তাদের ভালবাসার মানুষটি শারীরিকভাবে তাদের পাশে ছিল। দ্বিতীয় গ্রুপে অংশগ্রহণকারীদের বলা হয়, ওই বরফ-জলে পা ডুবিয়ে রাখার সময় তাদের প্রিয় মানুষটির কথা চিন্তা-ভাবনা করতে। শেষ যে গ্রুপের অংশগ্রহণকারীদের এরকম কিছু বলা হয় না। শুধু ৪ মিনিট বরফ-গলা জলে পা ডুবিয়ে রাখতে বলে তাদের। এরপরই দেখা যায় আসল ঘটনা।
এই পরীক্ষায় দেখা যায়, যাদের পাশে তাদের প্রিয়জন উপস্থিত ছিল, বরফ-গলা জলে ৪ মিনিট বসে থাকা সত্ত্বেও তাদের রক্তচাপ বাড়েনি। যারা মনে-মনে প্রিয় মানুষটির কথা ভেবেছেন, তাদেরও রক্তচাপ তুলনামূলকভাবে বাড়েনি। কিন্তু যাদের পাশে ভালবাসার মানুষটি উপস্থিত ছিল না কিংবা তারা মনে-মনেও সঙ্গীর কথা ভাবেনি তাদের রক্তচাপ বাকি দুটো গ্রুপের তুলনায় কিছুটা বেড়ে গিয়েছে।
তিনটি গ্রুপের প্রাথমিক কাজ ছিল বরফ-গলা জলে পা ডুবিয়ে ৪ মিনিট বসে থাকা। সাধারণ ক্ষেত্রে এতে মানসিক চাপ পড়ে। আর মানসিক চাপ বাড়লেই রক্তচাপ বাড়ে। এটাই দেখতে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন গবেষকরা এবং শেষ অবধি দেখা গেল, ভালবাসার মানুষটি পাশে থাকলে সহজে বাড়ে না প্রেশার। যদিও সব ক্ষেত্রে সেটা হয় না। কখনও প্রিয় মানুষটির কথা চিন্তা-ভাবনা করলেও নিয়ন্ত্রণে থাকে উচ্চ রক্তচাপ।
মানসিক চাপের সঙ্গে হাইপারটেনশনের জোরালো সম্পর্ক আছে। উদ্বেগ বাড়লে, মানসিক চাপ বাড়লে রক্তচাপও বেড়ে যায়। তাই প্রাথমিকভাবে আমাদের মানসিক চাপকে কমাতে হবে। আর এই মানসিক চাপ কমানোর সময় যদি ভালবাসার মানুষটি পাশে থাকেন কিংবা তাঁর কথা চিন্তা-ভাবনা করেন, তাহলে মনেও স্বস্তি মেলে আর নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় রক্তচাপকে। যদিও এটা একটি মাত্র গবেষণা। এমন গবেষণা আরও অনেক দরকার। তবে এখানে দ্বিমতের কোনও জায়গা নেই যে, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে একদিনও ওষুধ বাদ দেওয়া যাবে না এবং নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। কিন্তু এর পাশাপাশি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য মনেরও খেয়াল রাখতে হবে।